বড়দিনে স্ত্রীকে ফেলে চলে গিয়েছিলেন ‘নিষ্ঠুর’ হকিং, তথ্যচিত্রে জানালেন সন্তানেরা
নতুন এক তথ্যচিত্রে একটি 'নিষ্ঠুর' মুহূর্তের বর্ণনা দিয়েছেন অধ্যাপক স্টিফেন হকিংয়ের সন্তানেরা। তারা জানান, বড়দিনে পরিবার ছেড়ে নিজের নার্সের সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই বিজ্ঞানী।
'হকিং: ক্যান ইউ হিয়ার মি?' শিরোনামের তথ্যচিত্রে এই পদার্থবিদের তিন সন্তান এবং তাদের মা জেন হকিং খোলামেলাভাবে তাদের পারিবারিক জীবন নিয়ে কথা বলেছেন।
১৯৮৯ সালের বড়দিনে হকিং আকস্মিকভাবে ঘোষণা করেন, তিনি তার নার্স ইলেইন ম্যাসনের সঙ্গে সংসার শুরু করতে যাচ্ছেন। তথ্যচিত্রে হকিংয়ের মেয়ে লুসি সেই দিনটির কথা স্মরণ করেছেন।
লুসি বলেন, 'আমরা সবাই বুঝি, মানুষের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়; এরপর মানুষ জীবন চালিয়ে নিয়ে যায়। এসব তো হবেই। কিন্তু বড়দিনের দিন সকালে বাবা আমাদের সবাইকে গিফট দিলেন, এবং এরপরই ইলেইনের সঙ্গে চলে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বসলেন। তখনো মনে হয়েছিল এবং এখনো এই ঘটনাকে একটি অকারণ নিষ্ঠুরতা বলে মনে হয় আমার কাছে।'
'প্রাপ্তবয়স্কদের সম্পদ, মানসিকতা, বা দৃষ্টিভঙ্গি কোনোটাই ছিল না আমাদের। আমরা সবাই বাচ্চা ছিলাম,' যোগ করেন হকিংকন্যা।
বড়দিনে ভেগে যাওয়ার ওই সময়কে 'সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময়' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন জেন হকিং। যদিও সে সময়ে জেন নিজেও জোনাথান জোন্স নামে আরেক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন, যা অধ্যাপক হকিংকে অখুশি করেছিল।
২০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেতে যাওয়া ওই তথ্যচিত্রে জেন বলেন, 'বোঝাই যাচ্ছিল স্টিফেন ও ইলেইন প্রেম করছেন। তারা সেটা লুকানোরও চেষ্টা করেননি। এর সঙ্গে তুলনা করলে আমার ও জোনাথানের সম্পর্কটি ছিল খুবই হালকা, যা স্টিফেনের যত্ন ও পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিবেদিত ছিল।'
এডি রেডমন ও ফেলিসিটি জোন্স অভিনীত ২০১৪ সালের চলচ্চিত্র 'দ্য থিওরি অব এভরিথিং'য়ে ওই ঘটনার নাটকীয় দৃশ্যায়ন রয়েছে।
বলে রাখা ভালো, ১৯৯৫ সালে ইলেইন ম্যাসনকে বিয়ে করেন হকিং। ২০১১ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় ওই যুগলের। ম্যাসন তার স্বামীকে নির্যাতন করেছেন এমন অভিযোগ উঠলেও তা নাকচ করে দিয়েছিল এই দম্পতি। অভিযোগের ভিত্তিতে ক্যামব্রিজ পুলিশ ওই ঘটনার তদন্ত করে। তবে কোনো প্রমাণাদি না পাওয়ায় সেই তদন্তে ইতি টানা হয়।
এদিকে, নতুন এই তথ্যচিত্রে অংশ নেননি ইলেইন।
তথ্যচিত্রে অধ্যাপক হকিংয়ের সন্তান লুসি, রবার্ট ও টিম তাদের বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, যিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়েও অসাধারণ সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
লুসি বলেন, 'যে ব্যাপার আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করে, সেটা হচ্ছে আমার বাবা-মা দুজনের সাহস। তারা তো জানতেন না সামনে কী আসতে যাচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক হকিংকে কতটুকু যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে এটাও কেউ বুঝত না।
'বাবাকে আমি যখন থেকে চিনি, সব সময়ই মৃত্যু থেকে ১২ ঘণ্টার দূরত্বে ছিলেন তিনি। কখনো যে এটা হয়নি, সেটাই একটা মিরাকল,' যোগ করেন লুসি।
তবে এই শারীরিক অবস্থার জন্যই নিজের কাজে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পেরেছিলেন এই বিজ্ঞানী। কেননা এর ফলে গৃহস্থালির বা বাহ্যিক কোনো কাজই করতে হতো না তাকে।
জেন বলেন, 'সে আমাকে বলেছিল, এই অসুস্থতার একটি সুবিধা হচ্ছে তার আর চা বানাতে হয় না, ন্যাপকিন পরিবর্তন করতে হয় না। তাই কাজের মধ্যেই নিজেকে শতভাগ নিয়োজিত করে রাখতে পারত সে।'
চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যান্থনি গিফিন বলেন, ২০১৮ সালে অধ্যাপক হকিংয়ের মৃত্যুর আগেই তার পরিবারের সঙ্গে এই তথ্যচিত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করেন তিনি। হকিং নিজে এই তথ্যচিত্র নির্মাণে সম্মতি এবং পূর্বে অদেখা আর্কাইভ থেকে তথ্য সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছিলেন।
গিফিন বলেন, 'তার (হকিং) এবং তার আশেপাশের লোকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমি বলেছিলাম, একটা বিষয় কখনোই তুলে ধরা হয়নি। সেটি হচ্ছে তার জীবনের ব্যক্তিগত দিকগুলো।'
-
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ