পকেটে ছিল না ৪০০ রূপিও, ছেলের জন্মের পর হাসপাতালের বিল দিতে পারেননি 'শোলে'র আমজাদ খান!
হিন্দি চলচ্চিত্রে ভিলেনরূপে অন্যতম পরিচিত মুখ ছিলেন আমজাদ খান। সর্বকালের সেরা একটি হিন্দি চলচ্চিত্র 'শোলে'তে ভিলেন গব্বর সিং এর ভূমিকায় এতটাই চমৎকার অভিনয় করেছিলেন আমজাদ খান যে, অনেক নায়কেরও হয়তো স্বপ্ন থাকে এমন ভিলেন চরিত্রে অভিনয়ের! সিনেমার গব্বর সিং-এর দেওয়া একেকটা ডায়লগ যেন আজও দর্শকের মনে গেঁথে আছে। 'শোলে' মুক্তি পাওয়ার পরেই ক্যারিয়ারের নতুন এক ইনিংস শুরু করেন আমজাদ খান, এই সিনেমাই তাকে তারকা বানায়। কিন্তু 'শোলে'তে অভিনয়ের আগে এই অভিনেতা-প্রযোজকের জীবন কেটেছে যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, সেই গল্প অনেকেরই অজানা!
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমজাদ খানের ছেলে শাদাব খান তার প্রয়াত বাবাকে নিয়ে কথা বলেন। তার কাছ থেকেই জানা যায়, শাদাবের জন্মের পর হাসপাতালের বিল মেটানোর টাকাও ছিল না আমজাদ খানের। বিল দিতে পারবেন না বলে হাসপাতালে আসতে চাইছিলেন না এই অভিনেতা।
শাদাব খান বলেন, "বাবার কাছে টাকা ছিল না যে আমার মাকে (শেহলা খান) হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে আনবে। তাই আমার মা কাঁদতে শুরু করেছিলেন। বাবা হাসপাতালের বিল দিতে পারবেন না বলে লজ্জায় হাসপাতালে আসতে পারছিলেন না।"
'শোলে'র আগে আরও কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও, 'শোলে'র মাধ্যমেই প্রথম আলাদা করে দর্শকদের নজরে আসেন আমজাদ খান। এর আগে চেতন আনন্দের 'হিন্দুস্তান কি কসম' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তাই চেতন যখন আমজাদ খানের এই সংকটের কথা শোনেন, তাকে সাহায্য করতে ছুটে আসেন। হাসপাতালের বিল ছিল মাত্র ৪০০ রূপি, কিন্তু এই অল্প টাকাও আমজাদ খানের পকেটে ছিল না। শাদাবের ভাষ্যে, "চেতন সাহেব তখন বাবাকে ৪০০ রূপি দিলেন, যাতে আমি আর আমার মা বাড়ি ফিরতে পারি।"
একই সাক্ষাৎকারে শাদাব খান জানান যে, তার জন্মের ওই একই দিনে তার বাবা 'শোলে' সিনেমায় অভিনয়ের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন যা তার ক্যারিয়ারের মোড় পাল্টে দেয়। সিনেমার 'গব্বর সিং' চরিত্রের জন্য অনেককেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, এদের মধ্যে অভিনেতা ড্যানি ডেনজংপাও ছিলেন। কিন্তু শিডিউল ফাকা না থাকায় তিনি এ চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এমনকি সঞ্জীব কুমার ও অমিতাভ বচ্চনও 'গব্বর সিং' হওয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছিলেন! কিন্তু ড্যানির শিডিউল না পেয়ে সেলিম খান আমজাদ খানের নাম সুপারিশ করেন। আর এভাবেই এই বিখ্যাত ভিলেন চরিত্রটিতে অভিনয় করে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় আমজাদ খানের।
অনুপমা চোপড়ার 'শোলে: দ্য মেকিং অব আ ক্লাসিক' বইয়ের একটি উদ্ধৃতাংশে বলে হয়েছে, "সেলিম খান আগেই আমজাদ খানের সম্পর্কে শুনেছিলেন। অভিনেতা হিসেবে তার দক্ষতা এবং ভিলেন চরিত্রের জন্য তাকেই শারীরিকভাবে ফিট মনে হয়েছিল তার। তবে আমজাদকে তিনি বলেছিলেন-'আমি তোমাকে কথা দিতে পারছি না। কিন্তু এই সিনেমায় একটা চরিত্র আছে। আমি তোমাকে পরিচালকের কাছে নিয়ে যাবো। যদি তুমি নিজের ভাগ্য বা যোগ্যতাবলে এই চরিত্রটা পেয়েই যাও, আমি বলে রাখছি, এই সিনেমায় এটাই সবচেয়ে সেরা চরিত্র!"
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস