এখনও আমার স্বপ্নের চরিত্রটি করা হয়নি: মৌসুমী
১৯৯৩ সাল। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমা দিয়ে রাজসিক অভিষেক হয়েছিল চিত্রনায়িকা মৌসুমীর। প্রথম সিনেমা দিয়েই দর্শকের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। বাংলাদেশের সিনেমার আধুনিক যুগের সূচনায় যেসব তারকার আবির্ভাব এবং অবদান আছে, মৌসুমী তাদের মধ্যে অন্যতম।
অভিষেকের পর আরও কয়েকটি সিনেমা দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ার কারণে তার যেমন জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়, তেমনই চলচ্চিত্রাঙ্গণের প্রতিও তরুণ প্রজন্ম আকৃষ্ট হতে থাকে। আধুনিক, সুশ্রী এবং নজরকাড়া পারফরম্যান্সের কারণে অনেকের কাছেই 'আইডল' হয়ে উঠেন তিনি।
শুরু থেকেই জনপ্রিয়তা নিয়ে অভিনয় ক্যারিয়ার পরিচালিত করার এক দুর্লভ কৃতিত্বের অধিকারী তারকা তিনি। শুধু অভিনয়েই নয়, বিজ্ঞাপনের মডেলিং করেও আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মৌসুমী। এভাবেই সফলভাবে তিন দশক ধরে অভিনয় দিয়ে সিনেপ্রেমীদের বিনোদিত করে যাচ্ছেন তিনি। তার সমসাময়িক অনেকেই সিনেমা থেকে বিদায় নিলেও তিনি এখনও প্রধান চরিত্রেই নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে দেশে করোনাকাল শুরু হওয়ার পর যেখানে বেশীরভাগ অভিনয়শিল্পী কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন, সেখানে মৌসুমী ব্যতিক্রম।
মৌসুমী অভিনীত দুটি সিনেমা গত ১১ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। এগুলো হলো আশুতোষ সুজনের পরিচালনায় সরকারী অনুদানে নির্মিত সিনেমা 'দেশান্তর' এবং মির্জা সাখাওয়াত হোসেনের পরিচালনায় 'ভাঙন'। গল্প প্রধান এই সিনেমা দুুটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন মৌসুমী। প্রায় দুই বছর পর তার অভিনীত নতুন সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। একইদিনে দুটি সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কারণে মৌসুমীও উচ্ছ্বসিত।
তিনি বলেন, 'করোনার খরা কাটিয়ে এখন প্রেক্ষাগৃহগুলো সচল হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তাই এই সুন্দর সময়ে আমার অভিনীত দুটি সিনেমা মুক্তি পাওয়া আমার জন্য খুবই ইতিবাচক বিষয় ছিল। কারণ নিয়মিত অভিনয় করলেও তা যদি দর্শকের সামনে না আসে তাহলে কিছুটা খারাপ তো লাগেই। দুটি সিনেমার জন্যই দর্শকের কাছে ভালো সাড়া পাচ্ছি। সিনেমা দুটি সেভাবে বাণিজ্যিক ধারার নয়। গল্পকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। যেমন দেশান্তর সিনেমাটি জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণের গল্প অবলম্বনে তৈরী হয়েছে। এখানে দেশভাগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একটা সময়ের গল্পকে সুন্দরভাবে চিত্রিত করেছেন পরিচালক। আমি বেশ আগ্রহ নিয়েই অভিনয় করেছি।
'ভাঙ্গন' সিনেমার গল্পটা আমার কাছে ভালো লেগেছিলো। অন্যান্য অনেক সিনেমার চেয়ে এই সিনেমার গল্পটা বাস্তবধর্মী। আর আমার চরিত্রটিও বেশ চ্যালেঞ্জিং। এই সিনেমাতে অভিনয় করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, শ্রম দিতে হয়েছে। একজন শিল্পী হিসেবে আসলে অভিনয়ে তো অতৃপ্তি থাকবেই। তারপরও এই সিনেমার চরিত্রটিতে নিজেকে যথাযথভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। এফডিসিতে দীর্ঘদিন পর টানা কোনো সিনেমার শুটিং সম্পন্ন করেছি। পরিচালক সাখাওয়াত ভাই সিনেমাটি বেশ যত্ন নিয়ে নির্মাণ করেছেন। এটিও দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখছেন।'
শুধু সিনেমা নয়, নাটকেও মাঝেমধ্যে অভিনয় করেন এই চিত্রনায়িকা। বিশেষ করে ঈদ কিংবা বিশেষ উৎসবের সময় তাকে নাটকে অভিনয়ে দেখা যায়। অভিনয়ের জন্য অসংখ্য স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। একজন তারকা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও আছে। যেমন জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূতের মতো দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
এদিকে জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় 'সোনার চর' নামের আরেকটি নতুন সিনেমায় অভিনয় করছেন মৌসুমী। এটি গ্রামীণ গল্পের একটি সিনেমা। এটির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই সিনেমা নিয়েও বেশ আশাবাদী তিনি।
মৌসুমী বলেন, 'ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে গড়পড়তা কাজ করতে ভালো লাগেনা। তাই প্রচুর কাজের প্রস্তাব পাওয়ার পরও সিনেমার সংখ্যা কম। আমি আসলে চরিত্র দিয়েই নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। আমি মনে করি আমার স্বপ্নের চরিত্র এখনও করা হয়নি।'