দক্ষিণ ভারতে এক চলচ্চিত্র ঘিরে উন্মাদনা! ছবি দেখার সুযোগ দিতে কিছু কোম্পানির ছুটি ঘোষণা!
সুপারস্টার রজনীকান্তের মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা 'জেইলার' ঘিরে ভারতে যেন রীতিমতো উন্মাদনা শুরু হয়েছে। সিনেমাপ্রেমী ও রজনীকান্তের ভক্তরা রাস্তায় নাচছেন, আবার কেউবা পটকা ফাটাচ্ছেন। এমনকি হলে যেয়ে সিনেমাটি উপভোগ করতে বেশ কয়েকটি কোম্পানি কর্মীদের ছুটিও প্রদান করেছে।
কেরালাভিত্তিক এডুকেশন কোম্পানি 'রেডবুকস এবরোড' তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান। সিনেমাটির মুক্তি উপলক্ষে কর্মীদের ছুটি প্রদানের পাশাপাশি কোম্পানিটি টিকেটও উপহার দিয়েছে।
রেডবুক এবরোডের পক্ষ থেকে কর্মীদেরকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, "আমরা আশা করি এই ছুটির দিন এবং সিনেমাটির অভিজ্ঞতা আপনাদের সকলের জন্য আনন্দ, প্রশান্তি এবং নতুন করে কর্মউদ্দীপনা নিয়ে আসবে। আসুন আমরা এই মুহূর্তটিকে উপভোগ করি এবং একসাথে স্মৃতি তৈরি করি।"
ভক্তদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় রজনীকান্ত মূলত দুই বছরের বিরতির পর 'জেইলার' সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় হাজির হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে দাবী অনুযায়ী, প্রথম দিনে বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে প্রায় 'একশ' কোটি রুপি আয় করেছে।
অন্যদিকে তামিলনাড়ুর 'লে হাইভ' নামের আরেক কোম্পানি জানায়, তারা সিনেমাটি দেখার সুযোগ করে দিতে কর্মীদের অর্ধদিবস ছুটি দিয়েছে। অন্যথায় হয়তো আচমকা অসুস্থতার কথা বলে ঠিকই বহু কর্মী অফিসে থেকে সিনেমাটি দেখতে চলে যেত।
কোম্পানিগুলির এসব উদ্যোগই প্রমাণ করে রজনীকান্তের 'জেলার' সিনেমা ঠিক কতটা আলোড়ন তৈরি করেছে। অন্যদিকে পিছিয়ে নেই স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোও।
স্থানীয় সংবাদ চ্যানেলগুলি প্রতিনিয়ত সিনেমাটি ঘিরে আপডেট কভার করছে, লাইভ কিংবা ব্লগ চালাচ্ছে, ভক্তদের সাক্ষাত্কার নিচ্ছে এবং প্রেক্ষাগৃহের বাইরের দৃশ্য ক্রমাগত সম্প্রচার করছে।
৭২ বছর বয়সী সুপারস্টার রজনীকান্ত ক্যারিয়ারে সবমিলিয়ে ১৬০ টি সিনেমা করেছেন। চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেকেই তাকে সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমার সমার্থক বলে অভিহিত করেন। ক্যারিয়ারে অসাধারণ সব একশন দৃশ্য ও ভিন্নধর্মীভাবে নেচে অগণিত ভক্তের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তামিলনাড়ুর 'থালাইভা'।
রজনীকান্তকে এশিয়ার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতাদের একজন বলে মনে করা হয়। এমনকি তার কিছু ভক্ত এই অভিনেতার ছবি সামনে রেখে দুধ ঢেলে তাকেও শ্রদ্ধাও জানায়।
'জেইলার' সিনেমা ঘিরেই যে এমন উত্তেজনা, বিষয়টি এমন নয়। বরং রজনীকান্তের প্রায় সকল সিনেমা ঘিরেই থাকে বাধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। এক্ষেত্রে ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'কাবালি' সিনেমার কথা উল্লেখ করা যায়।
সিনেমাটিতে গায়ে স্টাইলিশ স্যুট ও চোখে জন লেলনের সানগ্লাস পরিহিত অবস্থায় রজনীকান্তকে একটি গ্যংস্টার চরিত্রে ফুটিতে তোলা হয়েছিল।
সিনেমাটি মুক্তির দিনে এতই উচ্ছ্বাস দেখা যায় যে, অঘোষিতভাবে সেদিন ভারতের বহু রাজ্যে যেন পালিত হয়েছে সরকারি ছুটি। এমনকি বর্তমানের মতো অনুরূপভাবে বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ের বেশ কিছু কোম্পানিও কর্মীদের সিনেমাটি দেখতে ছুটি দিয়েছিলেন।
ভারতের জাতীয় পর্যায়েও রজনীকান্ত অসম্ভব সম্মানীয় একজন ব্যক্তিত্ব। ইতোমধ্যেই তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ ও পদ্মবিভূষণ পুরস্কার লাভ করেছেন।
ভারতে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে বলিউড (হিন্দি) সিনেমা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তবে পিছিয়ে নেই টলিউড (তেলেগু) ও কলিউড (তামিল) সিনেমাও। কেননা দেশটির মোট ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকেরই প্রধান ভাষা হিন্দি নয়।
বলিউডের বাইরে থাকা সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমা ও এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির আয় বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দ্য কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির রিপোর্ট অনুযায়ী, সাউথের ইন্ডাস্ট্রির আয় সামগ্রিকভাবে ভারতের সিনেমার আয়ের শতকরা ৫২ ভাগ।
সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমা শুধু ভারতেই নয়, বরং বিশ্বমঞ্চেও নিজেদের কাজের জানান দিচ্ছে। গতবছর মুক্তিপ্রাপ্ত 'আরআরআর' সিনেমাটি বক্স অফিসে তুমুল হিট হয়েছে। একইসাথে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও 'বেস্ট অরিজিনাল সং' হিসেবে অস্কার জিতে নিয়েছে সিনেমাটির তুমুল জনপ্রিয় গান 'নাটু নাটু'।