অভিনেতা ড্যানি মাস্টারসনের ৩০ বছরের কারাদণ্ড
দুই নারীকে ধর্ষণের মামলায় মার্কিন অভিনেতা ড্যানি মাস্টারসনকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। খবর বিবিসির।
'দ্যাট সেভেন্টিজ শো' নামক একটি টিভি সিরিজে অভিনয় করে খ্যাতি পেয়েছিলেন ড্যানি। ২০০০'র দশকের শুরুর দিকে তার নিজের অপরাধ সংঘটনের সময়টাতেই এই সিরিজ সম্প্রচারিত হয়েছিল।
প্রসিকিউটররা বলেন, ৪৭ বছর বয়সী মাস্টারসন অপরাধের দায় এড়াতে তার সায়েন্টোলজিস্ট পরিচয়কে আশ্রয় করেছিলেন।
এ অভিনেতার রায়কে সামনে রেখে বিচারক শার্লেই ওলমেদো তার অপরাধের ভুক্তভোগীদেরকে আদালতে 'ইমপ্যাক্ট বিবৃতি' পড়ে শোনানোর অনুমতি দেন।
বিশিষ্ট সাবেক সায়েন্টোলজিস্ট এবং অভিনেত্রী লিহ রেমিনি বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এই শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন এবং ভুক্তভোগী ওই নারীদেরকে বিবৃতি পড়ার আগে ও পরের সময়টায় সান্ত্বনা দেন।
মার্কিন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ওই দুই নারীর একজন আফসোস করে বলেছেন, "আমি যদি আরও আগেই তার নামে পুলিশে অভিযোগ করতাম!"
আরেক নারী মাস্টারসনকে বলেছেন, "আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম। আপনার এই অসুস্থতা এখন আর আমার বয়ে বেড়াতে হবে না।"
তবে মাস্টারসন শুনানির পুরো সময়টা নীরব ছিলেন। তার স্ত্রী বিজু ফিলিপসকে আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।
২০২২ সালেও একবার আদালতে তোলা হয়েছিল মাস্টারসনের মামলা। কিন্তু তখন জুরি কোনো রায়ে পৌঁছাতে পারেননি। এরপরে গত মে মাসে রি-ট্রায়ালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালতের রায়ের পর মাস্টারসন দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন ভেবে তাকে জেল হেফাজতে নেওয়া হয়।
২০০১-২০০৩ সালের মধ্যে মাস্টারসন তিন নারীকে তার হলিউডের বাড়িতে যৌন নির্যাতন করেছেন বলে সাক্ষ্য দেন ওই নারীরা। এই সময়টাতেই টিভি পর্দায় খ্যাতির তুঙ্গে উঠেছিলেন অভিনেতা। ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্যের পরে মাস্টারসনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
সাক্ষ্যতে ভুক্তভোগীরা এও বলেন যে, যৌন নির্যাতনের আগে মাস্টারসন তাদেরকে মাদক গ্রহণে বাধ্য করেছিলেন।
এই তিন নারীর মধ্যে দুজনকে তিনি ধর্ষণ করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তৃতীয়জনের আনা অভিযোগকে 'বিচার প্রক্রিয়ায় ভুল' রয়েছে বলে বাতিল ঘোষণা করা হয় এবং প্রসিকিউটররা জানান, এ মামলা পুনরায় আদালতে তোলার পরিকল্পনা নেই তাদের।
শুনানির সময় প্রসিকিউটররা দাবি করেন, চার্চ অব সায়েন্টোলজি মাস্টারসনের এই অপরাধ ধামাচাপা দিতে সহায়তা করেছে- যদিও সংস্থাটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
নারীদের যৌন নির্যাতনের সময় মাস্টারসন এবং ভুক্তভোগী নারীদের তিনজনই সায়েন্টোলজিস্ট ছিলেন। একাধিক নারী জানিয়েছেন, তাদের সাথে হওয়া অন্যায়ের বিচার চাওয়ার জন্য সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে আসতে তাদের অনেক বছর সময় লেগে গিয়েছে, কারণ চার্চ অব সায়েন্টোলজি'র কর্মকর্তারা ধর্ষণের বিষয়ে পুলিশে অভিযোগ দিতে নিরুৎসাহিত করেছিলেন।
প্রসিকিউটররা জানান- সায়েন্টোলজি'র কর্মকর্তারা একজন ভুক্তভোগীকে এও বলেছেন যে, মাস্টারসনের অপরাধের কথা প্রকাশ্যে আনবেন না এই মর্মে যদি চুক্তি স্বাক্ষর না করেন এবং ৪০০,০০০ ডলার গ্রহণ না করেন, তাহলে তিনি এই কমিউনিটি থেকে সদস্যপদ হারাবেন।
২০১৭ সালে ''#মিটু আন্দোলন' এর সময় মাস্টারসনকে প্রথম ধর্ষণের অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়। সেসময় তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে দুই পক্ষের সম্মতিতেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়েছে।
এরপরে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্টের তিন বছরের তদন্তের পর আবারও তাকে অভিযুক্ত করে মামলা আদালতে তোলা হয়।