স্কুইড গেম-এর শুটিংয়ে আমি ৯টি দাঁত হারিয়েছি: নির্মাতা
নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় কোরিয়ান ড্রামা 'স্কুইড গেম'-এর নির্মাতা হোয়াং ডং হিউক শুটিংয়ের সময় এতো চাপে ছিলেন যে তার ৯ টি দাঁত পড়ে গিয়েছিল। তার এই ডিস্টোপিয়ান থ্রিলার সিরিজটির দ্বিতীয় সিজনের শুটিং সেটে বসেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্মৃতিচারণ করছিলেন হোয়াং।
স্কুইড গেম সিরিজটির গল্প ছিল মূলত কয়েকশ ঋণে জর্জরিত ব্যক্তিদের নিয়ে। তারা বিশাল অঙ্কের নগদ অর্থ পুরস্কার পাওয়ার জন্য বিভিন্ন জীবন-মৃত্যুর খেলায় অংশ নিয়ে লড়াই করছিল।
স্কুইড গেমের প্রথম সিজন ভালো সাড়া ফেলায় এখন দ্বিতীয় সিজনের শুটিংয়ের কাজে ব্যস্ত হোয়াং ডং হিউক। কিন্তু মজায় বিষয় হলো দ্বিতীয় সিজন তৈরির কোনো পরিকল্পনাই তার মাথায় ছিল না। তিনি প্রথম সিজন তৈরির পর শপথ করছিলেন, তিনি আর সিরিজ বানাবেন না।
এতো চাপের পরও মত কেন বদলালেন, তা জানতে চাওয়া হলে, হোয়াং বললেন, "টাকা।"
তিনি বলেন, "প্রথম সিরিজটি বৈশ্বিকভাগে বেশ সফল হয়েছিল। কিন্তু সত্যি বলতে গেলে আমি তেমন কিছুই পাইনি। তাই দ্বিতীয় সিজনটি বের করার উদ্দেশ্য হলো কিছুটা ক্ষতিপূরণ জোটানো।"
তবে তিনি বলেন, "আগের সিজনে গল্পটি পুরো শেষও করা হয়নি।"
স্কুইড গেম-এর প্রথম সিজনটি নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে সফল শো। এ সিরিজটি দক্ষিণ কোরিয়াকে ও সেখানকার টিভি নাটকগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানুষের আরও কাছে নিয়ে এসেছে। সম্পদের বৈষম্য নিয়ে তৈরি সিরিজটি বিশ্বজুড়ে দর্শকদের মনে গভীর দাগ ফেলেছিল।
তবে আগের সিজনে সিরিজটির সব চরিত্রকে মেরে ফেলায় হোয়াংকে এবার নতুন মুখ ও নতুন সেট নিয়ে কাজ শুরু করতে হয়েছে। তাই এবার দর্শকদের প্রত্যাশাও অনেক বেশি।
হোয়াং বলেন, "এখনকার চাপ আরও অনেক বেশি।"
প্রথম সিরিজটি মুক্তির তিন বছর পর বিশ্বপরিস্থিতি নিয়ে হওয়াং এখন আরও হতাশ। তার মতে, দ্বন্দ্ব এখন শুধু ধনী ও গরিবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন প্রজন্ম, লিঙ্গ এবং রাজনীতি সবক্ষেত্রেই তীব্র বৈষম্য ও দ্বন্দ্ব চলছে।
তিনি বলেন, "এখন নতুন সীমারেখা তৈরি হচ্ছে। আমরা 'আমরা বনাম তারা' যুগে প্রবেশ করেছি। কে ঠিক, আর কে ভুল এটাই এখন সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্ব?"
হোয়াং তার এ হতাশাকে কীভাবে চিত্রায়ণ করবেন তা এবারের স্কুইড গেমের সেটে ঘুরে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন বিবিসির প্রতিবেদক। আগের সিজনের প্রতিযোগিতার জয়ী হি-হুন দ্বিতীয় সিজনেও থাকবেন। তবে এবার তার লক্ষ্য হবে, খেলা ধ্বংস করা ও নতুন প্রতিযোগীদের বাঁচানো।
প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা লি জং-জে জানিয়েছেন, গি-হুন আগের চেয়ে আরও বেশি মরিয়া এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
এছাড়া সেটে কিছু পরিবর্তনও এসেছে। প্রতিযোগীদের ডরমেটরির মেঝে এবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তার একদিকে বিশাল লাল নিয়ন রঙের ক্রস চিহ্ন এবং অন্যদিকে একটি নীল বৃত্তের প্রতীক আঁকা হয়েছে।
এবারের গল্পে, প্রতিটি খেলার শেষে খেলোয়াড়দের একটি পক্ষ বেছে নিতে হবে। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা প্রতিযোগিতা শেষ করে বাঁচতে চায়, নাকি খেলায় থেকে যেতে চায়। যদিও তারা জানে যে তাদের মধ্যে মাত্র একজন বেঁচে থাকবে। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে নির্ধারণ করা হবে। এ পরিস্থিতি প্রতিযোগীদের আরও দলবাজি ও সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাবে।
পরিচালক হোয়াং এই কৌশলের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান গোষ্ঠীভিত্তিক বিপদকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। তার মতে, মানুষকে পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য করার মাধ্যমে দ্বন্দ্বকে আরও উসকে দেওয়া হচ্ছে।
স্কুইড গেম-এর চমকপ্রদ কাহিনীতে অনেকেই মুগ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, এতে অতিরিক্ত সহিংসতা দেখানো হয়েছে, যা অস্বস্তিকর ছিল।
কিন্তু হোয়াং এ বিষয়ে জানান, এসব সহিংসতা ভালোভাবে চিন্তা করেই দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, "এই সিরিজ তৈরি করার সময় আমি বারবার নিজেকে প্রশ্ন করেছি, এ অধঃপতন থেকে পৃথিবীকে ফেরানোর সামর্থ্য কি আমাদের আছে? সত্যি বলতে, আমার সে উত্তর জানা নেই।"
দ্বিতীয় সিজনে দর্শকরা হয়ত এমন তাত্ত্বিক প্রশ্নের উত্তর পাবেন না। কিন্তু আগের সিরিজের প্লটের কিছু ফাঁক এবারের সিজনে পূরণ করা হবে। যেমন- এসব খেলা এখনও কেন চলছে এবং মুখোশধারী ফ্রন্ট ম্যান কেন এটি পরিচালনা করছেন।
ফ্রন্ট ম্যানের চরিত্রে অভিনয় করা লি বিয়ং-হুন বলেন, "দর্শকরা ফ্রন্ট ম্যানের অতীত, তার গল্প এবং আবেগ সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন।"
তিনি আরও বলেন, "আমি মনে করি না, দর্শক এ চরিত্রের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন। তবে এবার তারা এ চরিত্রের সিদ্ধান্তগুলোকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।"