হোম কোয়ারেন্টিনের জার্নাল
করোনাভাইরাসের দিনগুলোর অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো নয়। এই পরিস্থিতি যখন শুরু হলো, তখন আমি দুবাইয়ে। ৩১ জানুয়ারি যখন ঢাকা ফিরলাম, তখনো দুবাইয়ে সবকিছু স্বাভাবিক। কিন্তু আসার এক সপ্তাহের মধ্যেই জানতে পারলাম, ওখানে শতাধিক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।
ঢাকায় ১৫ দিন থাকার পর কলকাতায় যেতে হলো কাজ ও চিকিৎসার কারণে। তখনো ওখানে সবকিছুই স্বাভাবিক। সবাই হাঁটাচলা করেছি, মাস্ক পরেছি, যতটা সম্ভব সতর্কতা বজায় রেখেছি। হুট করেই কলকাতায় শুনলাম, অবস্থা খুব ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। সবকিছু বন্ধ করে দিচ্ছে ওখানকার সরকার।
এমন পরিস্থিতে কাজ ফেলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকায় ফিরলাম। ফেরার পর থেকেই হোম কোয়ারেন্টিনে আছি। যদিও দেখেছি, বিমানবন্দর দিয়ে যাওয়া-আসার সময় সবাইকে চেক করা হয়েছে। যাদের কোনো রকম উপসর্গ আছে, তাদের সরাসরি করোনাভাইরাসের চেক করা হয়েছে। যারা একেবারেই সুস্থ, তাদের পুরো ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তবু, টানা অনেক দিন অনেক জায়গায় ভ্রমণ করায় নিজেদের মানসিক স্বস্তির জন্য হলেও হোম কোয়ান্টিনে থাকা জরুরিই ছিল। তাই বাসায় আসার পর সবকিছু থেকে নিজেকে একদম বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলাম। আর এখন তো বলা যায়, দেশের সবাই এক ধরনের হোম কোয়ান্টিনেই আছি!
ঘরবন্দি জীবন আসলে আমাদের ভালো লাগার কথা নয়। আমরা যারা মিডিয়াতে কাজ করি, সবাই কোনো না কোনো কাজে সবসময় ব্যস্ত থাকি বা ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি। এক কথায় বলা যায়, কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে অভ্যস্ত আমরা। সেখানে এভাবে দিনের পর দিন গৃহবন্দি হয়ে থাকা অবশ্যই কষ্টদায়ক। কিন্তু তারচেয়েও বড় বিষয়, এটা আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয়তা হয়ে উঠেছে।
কেননা, আমরা যদি আজকে এই গৃহবন্দি জীবনের সঙ্গে মানিয়ে না নিই, তাহলে আমাদের সবার জন্যই ক্ষতি। নিজের ক্ষতি তো আছেই, সেইসঙ্গে পারিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী- পুরো দেশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তাই এখন ঘরবন্দি থাকা মানে নাগরিক হিসেবে নিজের সবচেয়ে বড় দায়িত্বটা পালন করা।
তাই সবাইকে বলব, এই সময়টা থাকবে না, যদি এখন আমরা ঘরবন্দি জীবনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিই। যদি তা সম্ভব না হয়, বাইরে যাওয়ার, একটু ঘুরে আসার চেষ্টা করি, তাহলে ক্ষতিটা আমাদেরই সবচেয়ে বেশি হবে।
অন্যদিকে, আমরা যদি যে যার অবস্থান থেকে সবাইকে কয়েকটা দিন বাসায় থাকতে উৎসাহিত করি, তাহলে সবারই মঙ্গল। আর যদি একান্ত প্রয়োজনে যদি বাইরে যেতেও হয়, যেন যথাযোগ্য সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নিয়ে বের হই এবং চলাচল করি।
ব্যক্তিগতভাবে আমার দুটি নতুন সিনেমার শুটিং শুরু চলার কথা ছিল এ সময়ে। কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল মার্চেই। সিডিউল বলছে, এপ্রিলজুড়েই শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকার কথা আমার। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যেহেতু সেটি হচ্ছে না, তাই ঘরে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় সিনেমাগুলোর প্রস্তুতি নিয়ে সময় কাটাচ্ছি।
তাছাড়া সময় পেলেই বই পড়ি। আমি মনে করি সারাদিন ঘরে সময় কাটানোর জন্য বইয়ের চেয়ে ভালো কোনো বন্ধু নেই। তাই অনেকদিন পর একটানা অনেকগুলো বই পড়া হলো এবং হচ্ছে।
তাছাড়া বন্ধু ও কাজিনরা মিলে নিয়মিত যোগব্যয়াম করছি। তবে তা অবশ্যই পাশাপাশি নয়; বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রুপ খুলে করছি।
- লেখক: চলচ্চিত্র অভিনেত্রী