জ্বালানি পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে
পৃথিবীতে এবারই প্রথম একসঙ্গে চারটি সংকট দেখছে মানুষ। তেল, গ্যাস, কয়লা ও ফুড ইনফ্লেশন। আমার জানামতে এমন সংকট পৃথিবী দেখেনি। বর্তমান সংকটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপসহ উন্নত সব দেশ, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ এমনকি আফ্রিকার গরীব দেশগুলোও কোনো না কোনোভাবে সংকটে পড়েছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বৈশ্বিক এলএনজির দাম কয়েক মাসের মধ্যে ৮-১০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। জ্বালানির দামও অনেক বেড়েছে। খাদ্যশস্যের দাম ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে মুদ্রার দাম কমে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এমতাবস্থায় আমদানি কমানো এবং সাশ্রয়ী হওয়ার বিকল্প নেই।
আমাদের সরকার যে কৌশল হাতে নিয়েছে, সাময়িকভাবে আমিও এর বিকল্প দেখছি না। তবে জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে এটি সাময়িক হিসাবে নিতে হবে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে গ্যাস সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে রাখা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে পারে না। এতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে থমকে যাবে।
শিল্পকারখানাগুলো গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ না পেলে উৎপাদন আটকে যাবে। রপ্তানি আদেশের পণ্য ঠিকমতো উৎপাদন করতে না পারলে ক্রেতারা অন্যত্র চলে যাবে। এতে আমদানি ও ডলার আয় কমে যাবে। উৎপাদন ও ব্যবসা ব্যাহত হয় এমন কিছু করা যাবে না।
খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি যে সংকটি আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো গ্যাস। আমাদের গ্যাস সংকটের পেছনে নিজেদেরও কিছুটা দায় রয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। আমাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধনাএ মনোযোগী হওয়া দরকার ছিল। নিজেদের যে কয়লা রয়েছে তা অনুসন্ধান করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস ও জ্বালানির ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে সব দেশই জেনে গেছে। আমেরিকা- জার্মানিসহ অনেক দেশই এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ভাবছে। সব দেশই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। আমাদেরও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। জ্বালানি পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।
অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, আমাদের মাটির নিচে যে গ্যাস ও কয়লা রয়েছে তা অনুসন্ধান করলে ১০০ বছর চলার মতো সম্পদ পাওয়া যাবে। এ সম্ভাবনাটা কাজে লাগাতে হবে। নতুন করে যে মেরিটাইম সম্পদ আবিষ্কার হয়েছে তা কাজে লাগে লাগিয়ে সেখানে প্রাকৃতিক সম্পদ বের করতে হবে। অন্তত ৮০ শতাংশ জ্বালানি যেন অভ্যন্তরে পাওয়া যায় সে রোড ম্যাপ করতে হবে।
টেলিফোনে টিবিএসের সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আব্বাস উদ্দিন নয়নের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন আবুল কাশেম খান