এবারের অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য হুঁশিয়ারি!
এ বছর আর্থিক খাতের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য যে তিনজন অর্থনীতিবিদ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তাঁরা সবাই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেছেন। তিনজনের বয়সই সত্তরের কাছাকাছি এবং এ বিষয়ে তাঁদের গবেষণার শুরু আশির দশকের প্রথম থেকে। শুধু উন্নত দেশের জন্যই নয়, স্বল্পোন্নত দেশের ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনার নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও তাঁদের গবেষণা থেকে দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে।
এর আগেও আর্থিক খাতের বিশ্লেষণের জন্য ১৯৯৭ সনে দুজন এবং ২০১৩ সনে তিনজন অর্থনীতিবিদকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের সবারই গবেষণা ছিল শেয়ার বাজারের গতি-প্রকৃতি ও উত্থান-পতন নিয়ে।
ওই সব বিশ্লেষণ শেয়ার বাজারের বিপর্যয় ঠেকাতে বা এ নিয়ে সঠিক পূর্বাভাষ দিতে খুব কাজে দেয়নি বলে মনে করা হয়। কারণ শেয়ার বাজারের কেনা-বেচার ধরণ শুধু অর্থনীতির যৌক্তিক আচরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, যে কারণে স্নায়ু-অর্থনীতি বা নিউরো-ইকোনমিক্স নামে নতুন ধারার অর্থনীতি নিয়ে এখন গবেষণা হচ্ছে।
কিন্তু এবারের নোবেল বিজয়ীদের কাজ আর্থিক খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে এবং তাঁদের বিশ্লেষণ অনেক বেশি বাস্তবমুখী, যা ব্যাংক ব্যবস্থার সম্ভাব্য ধ্বস ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তাঁরা যে বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন তার মধ্যে আছে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি আমানতকারীদের আস্থার সংকট, ঋণ মঞ্জুর করার ব্যাপারে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার গুরুত্ব, ব্যাংকের তারল্য ও মূলধন ঘাটতির বিষয়ে সতর্কতা, সংকটাপন্ন ব্যাংকে বাঁচিয়ে রাখতে আমানতের উপর যথেষ্ট অঙ্কের বীমার ব্যবস্থা, এবং যথাসময়ে সতর্ক না হবার খেসারত হিসেবে পরবর্তীতে দেউলিয়া ব্যাংককে বাঁচাতে সরকারের বড় অঙ্কের ব্যয়ের বোঝা বহন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জন্য এই সবগুলো বিষয়েই সতর্কতা জরুরী। যতদূর মনে পড়ে আমাদের ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত আমানতপ্রতি মাত্র এক লক্ষ টাকা বীমাকৃত। ইতোমধ্যে ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়া থেকে উদ্ধার করার ঘটনা দেখা গেছে, অনেক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং নিয়ন্ত্রকারী সংস্থার দক্ষতার ঘাটতি নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে ও হচ্ছে, কিন্তু অবস্থার খুব উন্নতি হচ্ছে বলা যাবে ন।
ব্যাংকে টাকা আমানত রাখার তেমন কোন বিকল্প নাই বলে ব্যাংক খাতের সমস্যা সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না; কিন্তু যখন কোন বিপর্যয় ঘটে তখন তার জন্য পুরো অর্থনীতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়। এবারের নোবেল পুরস্কার অনেক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য হুঁশিয়ারি বার্তা বহন করে এনেছে।
- লেখক: অর্থনীতিবিদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
- [লেখাটি ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ফেসবুক থেকে নেওয়া]