এরা সবাই মানুষের বিনোদন ও ব্যবসার জন্য, এর বেশি কিছু নয়
মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করছে সে। কক্সবাজার সৈকতে দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে দিগন্ত প্রসারিত নীল জলরাশির দিকে। সেইদিকে তাকিয়ে সে কী ভাবছে আমরা জানি না। কারণ যে মৃত্যুর প্রহর গুনছে, সে ভাষাহীন। যতদিন ক্ষমতা ছিল, মন দিয়ে কাজ করে গেছে। একদিনের জন্যও মালিকের অবাধ্য হয়নি। বরং মালিক যা দিয়েছে, যা খাইয়েছে, ততটুকুই গ্রহণ করেছে। আজ তার শরীরে শক্তি কমে এসেছে, চোখে ভালো দেখতে পারে না, মালিকের ব্যবসার সিজন শেষ হয়ে গেছে, তাই তাকে একাকী ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
বলছিলাম সেই ঘোড়াগুলোর কথা, যারা সারাজীবন ধরে মালিকের হয়ে পর্যটক পরিবহন করেছে কক্স্বাজার সমুদ্র সৈকতে। যখন পর্যটক কমে যায় বা ঘোড়াগুলোর বয়স বেড়ে যায়, তখন মালিকরা ঘোড়াগুলোকে ছেড়ে দেন। এই ঘোড়াগুলো রাস্তায় এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করে কিংবা সৈকতে হেঁটে বেড়ায় কিংবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। সৈকতের এই নিঃসঙ্গ ঘোড়াগুলোর সাথে মানুষের বার্ধক্যের কোথায় যেন একটা মিল আছে। অনেক পরিবারেই প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে এভাবেই বয়স্ক মানুষগুলোকে মুক্ত করে দেয়া হয়।
সমুদ্র সৈকতে, শহরের রাস্তা আবর্জনার মধ্যে বিভিন্ন সময় দেখা মেলে এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো এইসব ঘোড়ার। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলে পথের পাশেই অভুক্ত অবস্থায় শুয়ে থাকে। রোগে ভোগা, সহায়-সম্বলহীন মানুষের মতোই এই রোগা ও পাঁজরের হাড় বেরিয়ে আসা ঘোড়াগুলোও যেন মৃত্যুর দিন গুণছে। একদিন তাদের সব ছিল, প্রয়োজনীয়তা ছিল, কাজের ক্ষমতা ছিল, তাই মালিকের কাছে চাহিদা ছিল।
এখন এরা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৈকতে আসা পর্যটকদের অনেকেই এসব ঘোড়ার পিঠে চড়েন, ছবি তোলেন। এজন্য ঘোড়ার মালিককে টাকা দিতে হয়। আর এটাই ঘোড়ার মালিকের আয়-রোজগারের পথ। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঝিমুনো অথবা রাস্তার পাশে ঘাসের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকা এই ঘোড়াগুলোকে দেখে অনেকেরই মনখারাপ হয়। যদিও মালিকরা বলছেন, ব্যবসা মন্দা বলে তারা এদের ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এই ছেড়ে দেয়াটা কতটা অমানবিক হচ্ছে, সেটা কি তারা ভাবছেন? "অলস ও বয়স্ক ঘোড়া" মালিকরা বসিয়ে রাখতে চান না, তাই বের করে দেন। মালিকরা দাবি করেন একসময় নাকি ঘোড়াগুলো আবার ঠিকই ঘরে ফিরে আসে।
অথচ পর্যটন মৌসুমে গড়ে তিন হাজার টাকা হিসাবে চার মাসে একটি ঘোড়া দিয়ে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেন মালিকরা। বাকি অফ সিজনে আয় কমে যায়। এই অফ সিজনেই খরচ বাঁচানোর জন্য ঘোড়ার যত্ন না করে, খাবার না দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকেই। ঘোড়াগুলোকে কেবল আয়ের উৎসের জন্য ব্যবহার করলেও রোগ হলে চিকিৎসা আর পর্যাপ্ত খাবারের পেছনে খরচ করতে চায় না। আর ঘোড়া বয়স্ক হলে কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তখন সেসব ঘোড়াও ছেড়ে দেন তারা।
একটি প্রতিবেদন বলছে, ঘোড়ার আয়ের ওপরে নির্ভর করে অনেকেই গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন, গড়েছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও, সেই ঘোড়াকেই বের করে দেন। অথচ আয় কম বা বন্ধ হলেই ঘোড়ার খাবার বন্ধ করে তাকে ছেড়ে দেয়া ভয়াবহরকম অমানবিক কাজ। এ বিষয়টি নিয়ে ২০২০ সালে আলোচনাও হয়েছে। ওই সময় মালিকদের ঘোড়াগুলো এভাবে ছেড়ে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসন, কিন্তু তা মানছেন না মালিকরা।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক লিখেছেন, "রাস্তায় মুখোমুখি অভুক্ত দু'টি ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে। লোকজন ঘোড়াগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু ঘোড়াগুলো নড়ছে না, অর্থাৎ নড়াচড়ার ক্ষমতাই নেই তাদের। একটু দূরে আরেকটি ঘোড়া। সেই ঘোড়ার এক চোখ দিয়ে পানি ঝরছে, চোখও লাল। সম্ভবত কেউ চোখে আঘাত করেছে। এই ঘোড়ার মালিকও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আগের দিন দেখা গেল আরেকটি ঘোড়া রাস্তায় পড়ে আছে। ঘোড়ার শরীরের আঘাতের চিহ্ন। শিশু-কিশোররা ঘোড়াটিকে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু অভুক্ত থেকে দুর্বল হয়ে পড়া ঘোড়াটি নড়াচড়া করছে না মোটেও।"
লকডাউনের সময় ৪০ টিরও বেশি ঘোড়া মারা গিয়েছিল অভাবের তাড়ণায়। সিজন না থাকলে মালিক যদি ঘোড়ার নূন্যতম খাবার ও যত্ন নিতে না পারেন, তাহলেতো তাদের এই ব্যবসা চালানোই উচিৎ নয়। সুদিনে টাকা আয় করা, আর দুর্দিনে ঘর থেকে বের করে দেয়ার এই মানসিকতা আমাদের অনেক পুরোনো। মানুষ এই আচরণ শুধু ঘোড়ার সাথে নয়, বাবা-মায়ের সাথেও করে। ঘোড়ার প্রতি মালিকদের আচরণ অমানবিক তাই তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
বাংলাদেশে পর্যটনের জন্য, সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানার জন্য আনা পশুপাখির রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রতিপালন বিষয়টি খুবই নাজুক। শুধু ঘোড়া নয়, দেশের চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কের পশুপাখিগুলোও যে সবসময় ভালো থাকে না, সে কথাও সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে বারবার। ২০২২ সালের শুরুতে ৮৪৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মৌলভীবাজারের জুড়ীতে এক সাফারী পার্কের মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে বন অধিদপ্তর। জুড়ীতে লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের এলাকায় ওই পার্কে মূলত বিদেশি প্রাণী আনার কথা ছিল।
মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, সাফারি পার্কটিতে বন্য প্রাণী বাবদ ২০৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর আওতায় কত প্রাণী এসেছে, কতজন বেঁচেছে, কতজন যত্নআত্তি পাচ্ছে এই বিষয়গুলো কখনো স্পষ্ট করা হয়নি।একটার পর একটা পশুর মৃত্যুতে দেশের চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কের মান, প্রাণীদের খাবার ও নানান অব্যবস্থা নিয়ে অনেক খবর বেরিয়েছে এরমধ্যে।
সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ ঘোড়াগুলোর মতোই জীবন খাঁচাবন্দি ভাল্লুক 'তারা'র। সে তার মাথা উল্টো দিক করে খাঁচার ভেতরে ক্রমাগত ঘুরছে। সেটা দেখতে সেখানে দর্শনার্থীরাও ক্রমাগত ভিড় করছেন। তারার মাথা উল্টো করে ঘোরার দৃশ্য দর্শনার্থীদের আনন্দ দিলেও, এই আচরণ প্রকৃতিতে থাকা ভাল্লুকদের চেয়ে 'আলাদা' ও 'আজব'। যে ভালুক মুক্ত থাকে, সে ঘাস, ফুল, ফল, ছোট্ট প্রাণী, মধু- এসব খায়। আর খাবার খুঁজতে প্রতিদিন বন-জঙ্গলে কয়েক কিলোমিটার পথ হাঁটে। মধুর খোঁজে চড়তে হয় গাছেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতিতে স্বাভাবিক চলাচলের যে সুযোগ, খাঁচায় তা না মেলায় 'আচরণগত বৈকল্যে' ভুগছে 'তারা' এবং অনেকে।
একা তারা নয়, ভালো নেই খাঁচায় থাকা কয়েকটি অন্তঃসত্ত্বা বানরও। "তারা গুটিসুটি মেরে বসে আছে। একজন উচ্ছৃঙ্খল তরুণ নোংরা ভাষায় বানরদের উত্ত্যক্ত করে মজা পাচ্ছিল। ওই তরুণের কথা না বুঝলেও তাকে ভেংচি কেটে ও চিৎকার দিয়ে বানরগুলোকে খাঁচার দূর প্রান্তে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসতে দেখা গেল। কিছুটা দূরে উল্লুকের চিৎকারের সঙ্গে গলা মেলাতে শোনা গেল একদল দর্শনার্থীকে। বানরের খাঁচার সামনে 'বাদরামিতে' মত্ত তরুণটিও তখন দৌঁড়ে গিয়ে ওই দর্শনার্থীদের সঙ্গে গলা মেলালো। তারা সবাই ছিলেন 'বিনোদনমুখর'। (সূত্র: বিডিনিউজ.কম)
জাতীয় চিড়িয়াখানার বিদ্যমান কাঠামো প্রাণীদের স্বাস্থ্য ও মস্তিকের ওপর প্রভাব ফেলছে বলে মনেকরেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা। বন্যপ্রাণী, চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্ক বিশেষজ্ঞ রেজা খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, "খাঁচায় বন্দি রাখায় চিড়িয়াখানার প্রাণীরা স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে না।"
আমাদের দেশে চিড়িয়াখানায় পশুপাখিকে খাঁচায় রাখার যে পদ্ধতি, তা এখন আর কোনো সভ্য দেশে নেই। চিড়িয়াখানায় আসা দর্শনার্থীদের চিৎকার, গাড়ির শব্দ, প্রাচীরের পাশের আবাসিক এলাকা থেকে আসা শব্দ খাঁচাবন্দি প্রাণীদের বিরক্ত করে। সেখানে আছে শিশুপার্ক, যা প্রাণীদের জীবন অতিষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। চিড়িয়াখানা সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই পার্কে শিশুদের চিত্ত বিনোদনের জন্য রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইড, সেগুলো চালানোর সময় উচ্চশব্দে গান বাজতে থাকে। অথচ পার্কটির চারপাশ ঘিরে রয়েছে পশুপাখির খাঁচা।
মানুষ চরম অমানবিক একটি প্রাণী, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। নিজেদের স্বার্থ, বিনোদন, ব্যবসা ও লাভের জন্য সবকিছু করতে পারে তারা। জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রতিবছর গড়ে ৪০ লাখ মানুষ বিনোদিত হওয়ার জন্য যায়। চিড়িয়াখানাকে 'বিনোদনকেন্দ্র' হিসেবে নেওয়ায় প্রাণীদের জীবনে 'উৎপাত' বাড়ছে বলে অনেকেই মনেকরেন। বিশেষ দিনগুলোতে চিড়িয়াখানায় প্রায় ২ লাখ দর্শনার্থী প্রবেশ করে, যা প্রাণীদের জন্য ধকলের কারণ হয়।
প্রাণীদের খাঁচায় আটকে রেখে কষ্ট তো দেয়াই হয়, সাথে যোগ হয়েছে তাদের প্রতি দর্শনার্থীদের কুৎসিত আচরণ। দর্শনার্থীরা খাঁচায় থাকা প্রাণীদের বিরক্ত করে, কেউ শুয়ে থাকা প্রাণীদের ডেকে তোলার চেষ্টা করে, বাঘের ডাক নকল করে বাঘকে বিরক্ত করে অথবা খাঁচা ধরে উদ্ভট শব্দ করে প্রাণীদের দৃষ্টি কাড়ছে। এরা খাঁচায় ঢিল ছোড়ে, খাঁচা ধরে ঝাঁকিয়ে ঘুমন্ত প্রাণীকে জাগিয়ে তোলে, যা-তা খাবার দেয় এবং না খেলে চেঁচামেচি করে। এমনকি জ্বলন্ত সিগারেটও ছুড়ে দিতে দেখা গেছে। উটপাখির খাঁচার ভেতরে পড়ে আছে চকোলেটের খোসা, তাতে ঠোকর দিচ্ছিল একটি উট পাখি। ইমু চুপচাপ বসে আছে, বাঘ শুয়ে আছে, খাবার ফেলে ঝিমাচ্ছে সিংহ। বেশিরভাগ প্রাণী ক্লান্ত, বিরক্ত ও অবসন্ন। এমনসব হৃদয়বিদারক বর্ণণা ফুটে উঠেছে প্রতিবেদনটিতে। মানুষের এমন আচরণে বিরক্ত প্রাণীগুলো খাঁচার একেবারে পেছনে এক কিনারে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকে, সেটা দেখারও কেউ নেই। প্রাণীর প্রতি মন্দ আচরণ করলে জরিমানার নিয়ম আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই।
চিড়িয়া বলে যাদের আমরা চিড়িয়াখানার খাঁচায় আবদ্ধ করে রেখেছি, তারা মানুষের চেয়ে ঢের মানবিক। বরং অনেক মানুষ আছে, যাদের আচরণ প্রকৃত চিড়িয়ার মতো। এদেরই চিড়িয়াখানায় রাখা দরকার। চিড়িয়াখানা সপ্তাহে দুই বা তিনদিন খোলা রাখা উচিত। বাকি দিন পশুপাখিরা নিজেদের মতো শান্তিতে থাকবে। চিড়িয়াখানার খাঁচা কাঠামোতে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে।
উপকূলের ঘোড়া, চিড়িয়াখানার পশুপাখি সবই বিনোদনের বিষয় মানুষের কাছে। প্রয়োজন ফুরালে ছুড়ে ফেলে দিতেও কোনো কষ্ট হয় না। আবার এদেশেই মানুষ হত্যা করে যেমন মাটি চাপা দেয়া হয়, মানুষের চাইতে ১০০ গুণ বড় হাতিকেও হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হয়। খবরে পড়েছি, বন দখলকারী চক্ররা ভাড়াটে খুনিদের নিয়ে হাতি হত্যা করায়। শেরপুর, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামে একই কায়দায় হাতি হত্যা চলছে।
গত বছর রাজধানীর উত্তরায় ট্রেনের ধাক্কায় একটি হাতির বাচ্চা মারা গেছে। রেললাইনের পাশে দুটি হাতিকে বেঁধে রেখেছিলেন মাহুত। শিশুটি দুর্ঘটনার শিকার হলে মা হাতিটিকে নিয়ে পালিয়ে যায় ওই মাহুত। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা হলেও ওই হাতি বা মাহুতের সন্ধান পাওয়া যায়নি। প্রাণী নিয়ে যারা কাজ করছেন, তারা বলেন হাতি পোষার অনুমতি দেয় বন বিভাগ। এরপর এসব হাতি কী কাজে ব্যবহার করা হয় এটি খোঁজ রাখার দায়িত্বও বন বিভাগের। অথচ দেশে কতগুলো হাতি বন্দিদশায় আছে তা-ও জানে না বন কর্মকর্তারা।
প্রথম কথা হচ্ছে, হাতির মতো মহাবিপন্ন ও রাজকীয় প্রাণীকে মানুষের পুষতে হবে কেন? শুধু হাতির প্রতি নির্মম আচরণ করার জন্য ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজদের কেন পুষতে হবে? এই আইন কেন আছে দেশে? যাদের কাছে হাতি পুষতে দেওয়া হয় তারা কতটা যত্ন নিয়ে হাতি পোষে সেটা যেহেতু বনবিভাগের দেখভালের সক্ষমতা নেই, তাহলে এই আইন কেন করা হয়েছে? হাতি সংরক্ষণের বিষয়, চাঁদা তোলার জন্য হাতি নয়। অবিলম্বে হাতি পোষা আইন বাতিল করা উচিত।
২০২০ সালেই ২২টি ও ২০২১ সালে ১৬টি হাতি মারা পড়েছে মানুষের হাতে। হাতির আবাসস্থলের দুই-তৃতীয়াংশ হারিয়ে এই সংখ্যা নেমেছে অর্ধেকে। বন উজাড়ে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। গুলি ও বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদে হত্যা করা হচ্ছে হাতি। হাতি চলাচলের করিডোরগুলো বন্ধ করে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী এই হাতি, অথচ বিলুপ্তির মুখে পড়েছে নানা সংকটে।
প্রাণীদের আমরা ভালবাসতে শিখিনি, শুধু ব্যবহার করতে শিখেছি। আগে গরুর গাড়িতে চড়ে যখন গ্রামের বাড়ি যেতাম, তখন দেখেছি গরু-মহিষ ঠিকমতো চলতে না চাইলে গারোয়ান তাদের এমনভাবে পেটাত যে কান্না এসে যেত। কত কষ্ট করে আমাদের বয়ে নিয়ে চলেছে ওরা, অথচ আমরা কত নির্দয় ছিলাম ওদের প্রতি। চাবুকের ঘায়ে ওদের অস্থির করে তুলতাম। ঠিক এভাবেই সৈকতের ঘোড়া, চিড়িয়াখানায় থাকা পশুপাখি, চাঁদা তোলার কাজে ব্যবহৃত হাতি সবই মানুষের ব্যবসা ও বিনোদনের জন্য, এর বেশি কিছু নয়।
- শাহানা হুদা রঞ্জনা: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক