‘মা-ছেলের কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া কিইবা করার আছে!’
সৈয়দা রত্না নামের সঙ্গে রত্নর একটি সম্পর্ক আছে। সৈয়দা রত্না একজন মা। এমনি অসংখ্য মা আমাদের ইতিহাসের পাতাজুড়ে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, তারও আগে বঙ্গবন্ধু'র মুক্তির দাবি- সর্বত্র এমনি মায়ের সন্ধান পাওয়া যায় অনেক। প্রথম দিকে বেগম রোকেয়া। তারপরে বেগম সুফিয়া কামাল, সত্তরের দশকের রাজনৈতিক আন্দোলনের অগ্রভাগে সৈনিক ছিলেন। কিশোর বয়সে মিছিলে তাঁর সঙ্গে হেঁটে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে।
গতকাল দীর্ঘদিনের খেলার মাঠকে কেন্দ্র করে মা ও ছেলের দুঃসাহসিক পদক্ষেপকে অভিনন্দন জানানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই। প্রায় ১২ ঘণ্টা হাজতবাসের পর মধ্যরাতে সরকারের নীতি নির্ধারকদের শুভবুদ্ধির উদয় হলো এবং তাদেরকে হাজতবাস থেকে রেহাই দিলো। কিন্তু রেহাই দেয়ার পরেও তাদেরকে সম্মান দেওয়া হলো না। 'কোন আন্দোলনে নামবো না' মর্মে মুচলেকা আদায় করে নেওয়া হল। এই হচ্ছে, বর্তমানের শাসন ব্যবস্থা। দেশের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ধরন! প্রতিবাদ দুরের কথা ভিন্নমত সহ্য করার মানসিকতাও এখন আর দেখা যায় না।
ধন্যবাদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। আপনি ঘোষণা দিয়েছেন, থানার জন্য অন্যত্র জমি খোঁজা হবে। তারপরও মন্ত্রী মহোদয় ভেবে দেখবেন, দীর্ঘদিনের একটি খেলার মাঠ যেখানে শিশুরা প্রতিদির খেলে সেরকম একটি মাঠ রক্ষার জন্য একজন মা তার সন্তানকে নিয়ে হাতে লেখা প্লাকার্ড নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তিনি ব্যান্যার ঝুলিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রতিবাদের এর চেয়ে আর কোন 'সভ্য' ভাষা আমাদের জানা নেই। তিনি তো আইন শৃঙ্খলার অবনতিমূলক কোন কাজ করেননি, তাহলে কোন থানায় ধরে নিয়ে আটক রাখা হলো? কেন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরকে (প্রিয়াংশু) হাজতে রাখা হলো? এ ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তির কী হলো?
এদেশের মানুষ বিস্ময়ের সাথে ঢাকা কলেজের সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের নৃশংসতা খবরের কাগজে যখন পড়ছে তখন পুলিশের এই ভূমিকার প্রয়োজন ছিল? দেশ বিদেশে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি যখন প্রচন্ড সংকটের মুখে তখন কেনো এই ঘটনা? নাকি ঘটনাটি তেমন জমলো না। এই ঘটনা দিয়ে মানুষের দৃষ্টি ঢাকা কলেজ থেকে সরানোর চেষ্টা নয়তো?
চলুন সবাই মা ও ছেলেকে কুর্নিশ জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে আসি।