পেট্রোলের মজুদ ফুরিয়ে আসছে, শ্রীলঙ্কার জ্বালানিমন্ত্রীর সতর্কবার্তা
৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার জ্বালানি মজুদ নিয়ে কঠোর সতর্কতাবার্তা দিয়েছেন জ্বালানিমন্ত্রী।
গতকাল রোববার শ্রীলঙ্কার জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা বলেছিলেন, একদিনেরও কম সময়ের নিয়মিত চাহিদা মেটানোর মতো পেট্রোল অবশিষ্ট আছে।
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, অন্তত দুই সপ্তাহের আগে পেট্রোলের পরবর্তী চালান আসবে না।
গত সপ্তাহেই অত্যাবশ্যকীয় নয়, এমন সব ব্যক্তিগত যানবাহনের কাছে জ্বালানি বিক্রি দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে শ্রীলঙ্কা সরকার। জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের মতো আমদানি পণ্যের মূল্য চুকানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ দেশটির কাছে নেই।
উইজেসেকেরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কায় ১২ হাজার ৭৭৪ টন ডিজেল এবং ৪ হাজার ৬১ টন পেট্রোল মজুদ রয়েছে।
'পেট্রোলের পরবর্তী চালান [জুলাইয়ের] ২২ -২৩ তারিখের মধ্যে আসবে আশা করছি,' জানান তিনি।
উইজেসেকেরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, পূর্বনির্ধারিত জ্বালানি ও অপরিশোধিত তেল আমদানির জন্য দেশটির কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই।
তিনি জানান, শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক জ্বালানি কেনার জন্য মাত্র ১২৫ মিলিয়ন ডলার দিতে পারবে। অথচ নির্ধারিত চালানের জন্য লাগবে ৫৮৭ মিলিয়ন ডলার।
উইজেসেকেরা আরও জানান, চলতি বছরের শুরুতে সাত সরবরাহকারীর কাছে শ্রীলঙ্কার দেনা ছিল ৮০০ মিলিয়ন ডলার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রীলঙ্কাই প্রথম দেশ হিসেবে ১৯৭০-এর দশকের তেল সংকটের পর থেকে সাধারণ মানুষের কাছে পেট্রোল বিক্রি বন্ধ করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশা পার করছে শ্রীলঙ্কা। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট চলছে দেশটিতে।
অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে শ্রীলঙ্কার খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি, জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যসেবার ওপর। সর্বশেষ ফসল কাটার মৌসুমে খাদ্য উৎপাদন হয়েছে ৪০-৫০ শতাংশ।
এছাড়া শ্রীলঙ্কার মুদ্রাস্ফীতি জুন মাসে একটানা নবম রেকর্ডে পৌঁছেছে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, একদিনে মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছে ৫৪.৬ শতাংশে।
তবে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ স্টিভ হ্যাঙ্কের মতে, শ্রীলঙ্কার বর্তমান মূল্যস্ফীতি ১২৮ শতাংশ, যেখানে জিম্বাবুয়ের ৩৬৫ শতাংশ।
তীব্র বিদ্যুতের ঘাটতিতে পড়া শ্রীলঙ্কা দেশের জনগণের যাতায়াত কমাতে স্কুল বন্ধের পাশাপাশি দুই সপ্তাহের জন্য অ-প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রেখেছে।
দেশটির ২২ মিলিয়ন মানুষ কয়েক মাস ধরে খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র ঘাটতিতে রয়েছে।
৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ খেলাপির পর এ বছরের এপ্রিলে আইএমএফের কাছে সাহায্য চায় শ্রীলঙ্কা।
- সূত্র: বিবিসি