কেলেঙ্কারির জেরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন বরিস জনসন
নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির অধিকাংশ আইনপ্রণেতা ও শীর্ষ মন্ত্রীরা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার থেকে পদত্যাগ করেছেন। এতে বাধ্য হয়েই, দলীয় প্রধানের পদ থেকে আজ বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) পদত্যাগ ঘোষণায় বাধ্য হয়েছেন বরিস। এর ফলে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্বও হারাতে চলেছেন।
জনসনের সরকার থেকে পদত্যাগ করেছেন ৫০ জনের বেশি মন্ত্রী। স্বপক্ষত্যাগকারী আইনপ্রণেতারাও জনসনকে পদত্যাগের আহ্বান জানান। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার তার কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিটে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বরিস।
তিনি বলেন, 'নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া এখন শুরু হবে। আজকে আমি একটি মন্ত্রিসভা নিয়োগ করেছি। নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকব।'
ক্ষমতার শুরু থেকেই বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে বরিস জনসন সরকার। এছাড়া পার্লামেন্টের রক্ষণশীল দলের এক সদস্যের যৌন অপরাধের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নেয়া পদক্ষেপ নিয়েও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যে কারণে বরিস জনসনের ওপর পদত্যাগের চাপ জোরালো হয়।
এ বাস্তবতায় টানা কয়েকদিন ধরে প্রধানমন্ত্রীত্ব ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বরিস। একে একে অধিকাংশ মিত্র তার পক্ষ ত্যাগ করেছে বা তার সরকারের অধীনে দায়িত্ব পালনে অস্বীকার করেছে।
এ বিষয়ে কনজারভেটিভ দলের ডেপুটি চেয়ারম্যান জাস্টিন টমলিনসন এক টুইটে লিখেছেন, 'তার (জনসনের) পদত্যাগের বিষয়টি ছিল অবধারিত। দল হিসেবে আমাদের এখন ঐক্যবধ্য হতে হবে এবং সামনে যা করা দরকার-সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। সামনে কঠিন সময়-ই অপেক্ষা করছে।'
বিবিসি জানিয়েছে, দলীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করলেও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবেন তিনি। আগামী সপ্তাহে তার প্রধানমন্ত্রী থাকার মেয়াদ ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন জনসন।
কনজারভেটিভ এমপি রবার্ট বাকল্যান্ড বলেন, 'সহকর্মীদের নেওয়া পদক্ষেপই' বরিস জনসনকে আজ পদত্যাগ করতে বাধ্য করলো।
"তিনি অনিবার্যতার কাছে মাথা নত করেছেন," বলেন বাকল্যান্ড।
কনজারভেটিভদের এখন নতুন নেতা নির্বাচন করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় প্রায় দুই মাস সময় লাগতে পারে।
বেশ কয়েকমাস ধরে বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা কমছে। এর প্রধান কারণ, প্রধানমন্ত্রীর 'পার্টিগেট' কেলেঙ্কারি।
কোভিড-১৯ এর বিধিনিষেধ ভেঙে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে একাধিক মদের আসর বসিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন কনজারভেটিভ দলের নেতা ও ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
এছাড়া, গত কয়েক মাসের মূল্যবৃদ্ধিও সাধারণ মানুষকে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আরও বিরূপ মনোভাবাপন্ন করে তোলে।
পার্টিগেট কেলেঙ্কারির ধাক্কা সামলে ওঠা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিসের নিজের দল কনজারভেটিভ পার্টির অন্তত ৫৪ জন এমপি গত মাসে তার বিরুদ্ধে অনাস্থাভোটের ডাক দেন। যদিও সেই ভোটে জিতে যান বরিস।
তবে তার দলের ভেতরেই একাংশ মনে করছিলেন, দেশের মানুষের কাছে আস্থা হারিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।