রাশিয়ার গ্যাসের দাম বেঁধে দিতে চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হুঁশিয়ারির পরেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে দাম বেঁধে দেওয়া বা মূল্যসীমা নির্ধারণের (প্রাইস ক্যাপ) প্রস্তাব করেছে। এর আগে, এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে গোটা ইউরোপে সম্পূর্ণভাবে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেবে বলে হুমকি দিয়েছিল রাশিয়া।
ইউক্রেইনে রুশ আগ্রাসনের জেরে রাশিয়াকে শাস্তি দিতেই সেদেশ থেকে গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে মূল্যসীমা নির্ধারণের এই প্রস্তাব দেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, "উদ্দেশ্যটি খুবই স্পষ্ট। আমাদের উচিত রাশিয়ার রাজস্ব কমানোর মতো পদক্ষেপ নেওয়া। কারণ এই রাজস্ব দিয়েই পুতিন ইউক্রেইনে তার নৃশংসতা চালাচ্ছেন।"
এদিকে, মস্কোর সতর্কতার পরেও ব্রাসেলসের এমন সিদ্ধান্ত ইউরোপজুড়ে জ্বালানি সংকট পরিস্থিতিকে আরও উস্কে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসন্ন শীতকালকে সামনে রেখে গ্যাসের দাম আরও বাড়তে পারে।
ইইউ বলছে, মস্কো নিজের জ্বালানি সম্পদকে ইউক্রেনে বিরুদ্ধে আগ্রাসনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার প্রতিশোধ নিতেই নিজের দেশের শক্তিসম্পদকে ব্যবহার করছেন পুতিন।
এদিকে রাশিয়া জানিয়েছে, পশ্চিমের দেওয়া অযাচিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে না নিলে গ্যাস সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি হবেই।
এর আগে, শুক্রবার রাশিয়ার সরকারি শক্তি সংস্থা গ্যাজপ্রম জানিয়েছিল, নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইনের একটি টারবাইনে ফুটো হওয়ার কারণে তিনদিনের জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে জার্মানিতে। তবে তিন পেরিয়ে গেলেও সরবরাহ চালু হয়নি। এরইমধ্যে সরবরাহ বন্ধের ব্যাপারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, "আমাদের দেশ এবং বেশ কয়েকটি রুশ কোম্পানির বিরুদ্ধে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণেই গ্যাস সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে।"
"এখানে অন্য কোনো বিষয় নেই, যা এই সরবরাহ সমস্যার কারণ হতে পারে। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর আরোপিত এই নিষেধাজ্ঞাই এমন পরিস্থিতি ডেকে এনেছে, যা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি," যোগ করেন তিনি।
ইউরোপীয় কমিশন প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েনের এমন ঘোষণার পর ইইউ দেশগুলো এখন রাশিয়ার গ্যাসের মূল্যসীমা বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি গ্যাসের দামকে বিদ্যুতের দাম থেকে কীভাবে আলাদা করা যায় সে পথ খুঁজছেন।
এর আগে, মূল্যসীমা নির্ধারণ করা হলে পূর্বের চুক্তি বাতিল করা হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পুতিন। এরপরেও সেই পথেই হাঁটতে চলেছে ইইউ।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভ্লাদিভোস্টকে অনুষ্ঠিত এক অর্থনৈতিক ফোরামে পুতিন বলেন, "আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু ঘটলে আমরা সবকিছু সরবরাহ বন্ধ করবো।"
"আমরা গ্যাস, তেল, কয়লা, হিটিং অয়েল- কিছুই সরবরাহ করব না," বলেন তিনি।
ইউরোপে ব্যবহৃত গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং জ্বালানি তেলের প্রায় ৩০ শতাংশই আমদানি হয় রাশিয়া থেকে। ফলে রাশিয়ার সরবরাহ বন্ধ হলে ইউরোপজুড়ে যে জ্বালানির হাহাকার তৈরি হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, দুইপক্ষের মধ্যে জ্বালানি নিয়ে উত্তেজনা হ্রাস না পেলে শীতকালকে সামনে রেখে বড় ধরনের দুর্যোগে পড়বে গোটা ইউরোপ।
- সূত্র: আল জাজিরা