কেন ২ কিলোমিটার লম্বা রেলগাড়ি চালু করলো সুইজারল্যান্ড?
সুইজারল্যান্ডের প্রথম রেলওয়ের ১৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে অভূতপূর্ব এক কাজ করেছে দেশটি। প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি রেলগাড়ি তৈরি করে সেটি আল্পসের পাহাড়ি পথে চালিয়ে রেকর্ড তৈরি করেছে তারা। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন।
এ ট্রেনের আছে ১০০টি বগি। মোট আসন সংখ্যা ৪,৫৫০টি। আর এত বড় হওয়ায় এর ওজন দাঁড়িয়েছে ২,৯৯০ মেট্রিক টনে। এত লম্বা ট্রেন চালিয়ে রেকর্ড তৈরি করা প্রতিষ্ঠানটি হলো রেশিয়ান রেলওয়ে কোম্পানি।
২৫টি সুইস 'ক্যাপ্রিকর্ন' ইলেকট্রিক ট্রেন জুড়ে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ১,৯০৬ মিটার দৈর্ঘ্যের এ ট্রেনটি। সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত আলবুলা লাইনে প্রেডা থেকে বার্গুনে ২৫ কিলোমিটার ভ্রমণ করতে এ ট্রেনের সময় লেগেছে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট।
আল্পস পর্বতমালায় অবস্থিত ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ আলবুলা লাইনটিকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি মাস্টারপিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৫৫টি ব্রিজ ও ৩৯টি টানেল থাকা সত্ত্বেও এ রেললাইনটি মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত ১৪২ মিটার দীর্ঘ বর্তুলাকার ল্যান্ডওয়াসার ভায়াডাক্ট ব্রিজ পার হওয়ার সময় ট্রেনটিকে নিজের শরীরে গিঁট দেওয়ার মতো রূপে দেখা গিয়েছিল।
রেশিয়ান রেলওয়ে'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. রেনাটো ফ্যাসিয়াটি বলেন, 'যখন ২৫টি ট্রেনকে একসঙ্গে জোড়া লাগানো হয়, তখন এর সিগন্যালও ট্রেনের শেষ মাথা পর্যন্ত পৌঁছানোর মতো শক্তিশালী হতে হয়। কিন্তু ক্যাপ্রিকর্ন ট্রেনগুলো সেভাবে বানানো নয়। তাই আমাদেরকে নতুন একটি প্রায়োগিক সমাধান বের করতে হয়েছিল।'
লাল রঙের এ ট্রেনটি দেখতে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ৩,০০০ মানুষ। প্রায় ৭ জন চালক ও ২১ জন টেকনিশিয়ান মিলে চালিয়ে নিয়েছিলেন ট্রেনটি।
ট্রেনটির মূল চালক অ্যানড্রিস ক্রেমার বলেন, 'আমাদেরকে শতভাগ কাজের ছন্দ বজায় রাখতে হয়েছিল। পুরো যাত্রায় সব চালককে তাদের গতি বজায় ও অন্যান্য সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়েছিল।'
তবে এ ট্রেনের প্রথম পরীক্ষামূলক চালনা ব্যর্থ হয়েছিল। দেখা গেল, চালকেরা ট্রেনটির ইমার্জেন্সি ব্রেক ব্যবহার করতে পারছিলেন না, ও অনেকগুলো টানেলের ভেতর তারা একে অপরের সঙ্গে রেডিও বা ফোনে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন।
এ ট্রেনের সাত জন চালকের জন্য বিশেষভাবে পরিবর্তন করা সফটওয়্যার ও ইন্টারকম তৈরি করা হয়েছে। ট্রেনের গতি বা থামানোর সময় এদের কেউ অন্যদের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে বড় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও ছিল।
সরাসরি দেখার পাশাপাশি টেলিভিশনেও এ অনবদ্য মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করেছেন অনেক সুইস। এ ট্রেনের এমন অবিস্মরণীয় যাত্রাকে ধরে রাখার জন্য ট্রেনটিতে তিনটি স্যাটেলাইট আপলিংক, ড্রোন ও হেলিকপ্টারের ১৯টি ক্যামেরা, রেললাইনে ক্যামেরা যুক্ত করা হয়েছিল।
ইউরোনিউজ জানিয়েছে, রেকর্ড-ব্রেকিং যাত্রার পর ট্রেনটি খুলে ফেলা হবে। এ ট্রেনগুলো আবার নিয়মিত যাত্রী পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হবে।
সুইজারল্যান্ডকে বলা হয় রেলপথের জাতি। ছোট এ দেশটিতে পর্বতে ও উচ্চভূমিতে পরিপূর্ণ। কিন্তু এরকম দুর্গম ভূমিরূপেও বিস্তৃত রেল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পেরেছে সুইজারল্যান্ড।
ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত দেশ সুইজারল্যান্ড। নিজেদের প্রয়োজনেই তারা প্রকৌশলে এরকম দক্ষ হয়ে উঠেছে। সারাবিশ্বে এ দেশটি নিজেদের প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ সেবা রপ্তানি করে।
সুইসরা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেলগাড়ি ব্যবহার করে। প্রতি বছর সুইজারল্যান্ডের একজন ব্যক্তি রেলগাড়িতে চড়ে গড়ে ২,৪৫০ কিলোমিটার ভ্রমণ করেন।
২০২১ সালে সুইস ফেডারেল রেলওয়ে (এসবিবি) দৈনিক ১১,২৬০টি ট্রেনে আট লাখ ৮০ হাজার জন করে যাত্রী পরিবহন করেছে।