বৈশ্বিক চাহিদায় পতন, বিশ্বব্যাপী কনটেইনার আধিক্যে ভুগছে ডিপোগুলো
করোনাভাইরাস মহামারির সময় বিশ্বজুড়ে পণ্য পরিবহন কনটেইনারের ঘাটতি থাকলেও বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন বিপরীত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অনেক বেশি কনটেইনার এ সমস্যা সৃষ্টি করেছে। খবর সিএনবিসি'র।
পণ্য পরিবহনের ভাড়া কমে যাওয়ার পাশাপাশি কনটেইনার ডিপোগুলো বর্তমানে কনটেইনারে পূর্ণ হয়ে আছে।
এ পরিস্থিতি বৈশ্বিক চাহিদায় পতন ও আসন্ন অর্থনৈতিক মন্দার আরও লক্ষণকে নির্দেশ করছে।
ব্যবসায়ী ও সমুদ্রপথে মালামাল পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস পরবর্তীসময়ে ভোক্তাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পর এখন হঠাৎ তার পতন বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্রমশ স্বাভাবিকতা নয়, বরং ভোক্তাদের চাহিদার নিম্নমুখী মনোভাবকে নির্দেশ করছে।
'সব কনটেইনার রাখার জন্য ডিপোগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা নেই,' বলেন অনলাইন কন্টেইনার লজিস্টিকস প্ল্যাটফর্ম কনটেইনার এক্সচেঞ্জ-এর প্রধান নির্বাহী ক্রিশ্চিয়ান রেলফস।
আগামী মাসগুলোতে এ সংকট আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে নতুন ক্রেতাদের
ইতালিয়ান কনটেইনার হাউজ সোজেস-এর প্রধান নির্বাহী আঁদ্রে মন্টি জানান, তার ডিপোগুলোও কনটেইনারে ভর্তি হয়ে আছে।
'আমাদের মিলান ডিপোতে কনটেইনারের স্থানান্তর প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আর ডিপোতে কনটেইনারের সংখ্যা এমনভাবে বাড়ছে যে ডিপো'র সেবা গ্রহণের অনেক সম্ভাব্য নতুন চুক্তি আমরা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি,' মন্টি বলেন।
'পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, কিছু ডিপোতে আমরা আর নতুন কাস্টমারকে সেবা দিতে পারছি না।'
ক্রিসমাসের কাছাকাছি সময়টাতে পণ্য পরিবহন সবচেয়ে বেশি হয়। 'তবে এ বছর সেটা হয়নি,' কনটেইনার এক্সচেঞ্জকে বলেন মন্টি। হাতে থাকা কনটেইনার নিয়ে সতর্ক অবস্থায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এ খাতের খুচরা ব্যবসায়ীরা।
'আসলে হয়েছে যেটা, কার্গোগুলো এখন করোনাপূর্ববর্তী সময়ের মতো যথাসময়ে এসে জেটিতে ভিড়ছে। সমুদ্রের কার্গোগুলো কম সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহন করে দেওয়ায় কনটেইনার কোম্পানিগুলো সেই দ্রুতির সঙ্গে পণ্য খালাস ও নতুন পণ্য মজুত করানোতে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। এর ফলে নতুন অর্ডারে ধীরগতির সৃষ্টি হচ্ছে,' ব্যাখ্যা করেন মন্টি।
পরিপূর্ণ ও বাড়তি কনটেইনারের চাপে থাকা ডিপোগুলো সমস্যা সমাধানে কোনো কনটেইনার ডিপোতে সাতদিনের বেশি রাখতে হলে তার জন্য ফি নিতে শুরু করেছে বলে জানান গ্লোবাল ক্লেইমস ম্যানেজমেন্ট প্রোভাইডার সেজউইক-এর ন্যাশনাল মেরিন ম্যানেজার ড্যারিন মিলার।
মিলার বলেন, 'অনেকে যেটা বুঝতে পারছেন না তা হলো, বেশিরভাগ সময় ডিপোতে থাকা কনটেইনারগুলো খালি পড়ে থাকে।'
আর এটি বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তুলছে বলে জানান মিলার।
বাতিল হয় পণ্য পরিবহনও
ক্রিসমাসের কারণে বছরের এ সময়টাতে মানুষ খরচ করে বেশি। ফলে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন এ মাসগুলোতে অন্য সময়ে বাড়লেও এখন বরং ব্ল্যাংক সেইলিং বা পরিবহন বাতিল করার ঘটনা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
ব্ল্যাংক সেইলিং তখনই হয় যখন কোনো জাহাজ কোম্পানি চাহিদার পরিবর্তন ও সক্ষমতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কোনো বন্দরে না থামার বা তাদের সমুদ্রযাত্রার নির্ধারিত সময়ের নির্দিষ্ট অংশ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কার্গো পরিবহন বাতিল হওয়ার সর্বশেষ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিভিন্ন বড় বড় কনটেইনার পরিবহন রুটে নভেম্বরের শেষ দিকের ও ডিসেম্বরের শুরুর মাঝে হতে যাওয়া কনটেইনার পরিবহনের ১৪ শতাংশ বাতিল করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে বৃহৎ শিপিং গ্রুপ মার্সক জানিয়েছে, বছরের তৃতীয় কোয়ার্টারে সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক হতে শুরু হওয়া ও চাহিদার পতনের মাঝেই জাহাজে পণ্য পরিবহনের ভাড়া হুহু করে বেড়ে গিয়েছে। কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কম লাভের প্রত্যাশা করতেও পরামর্শ দিয়েছে।
'আমরা ইতোমধ্যে জানি মন্দার ভয় ও মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি থাকার কারণে ভোক্তাদের চাহিদা পড়ে গেছে। আর এর প্রভাব পড়েছে জাহাজ ও কার্গো খাতে। তার ফলেই বিশ্বব্যাপী কনটেইনারের চাহিদা কমে গেছে,' কনটেইনার এক্সচেঞ্জ'র একজন মুখপাত্র বলেন সিএনবিসিকে।