পশ্চিমা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত, সফল হচ্ছে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আক্রমণ
ইউক্রেনের জনপদ ঝাঁকে ঝাঁকে রাশিয়ান মিসাইল হামলার শিকার। ধবংস হচ্ছে বেসামরিক অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কনকনে শীতের মওসুমে তাতে দুর্ভোগ চরমে ইউক্রেনবাসীর। ফলে আকাশ প্রতিরক্ষার গুরুত্বও বেড়েছে বহুগুণ। সদাসতর্ক থাকছে এয়ার ডিফেন্স কর্মীরা। খবর এবিসি নিউজের
তবুও গত দুই সপ্তাহে মিসাইল ও কামিকাজে ড্রোনের সবচেয়ে বড় ঝাঁক নিক্ষেপ করেছে মস্কো। নয় মাসে গড়ানো এই যুদ্ধকালে যা সবচেয়ে বড় পরিসরের আক্রমণ।
এ বাস্তবতায়- পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে (স্পষ্ট করে বললে প্রতিরোধকারী ক্ষেপণাস্ত্রকে) নিঃশেষ করতে চাইছে মস্কো। আর তা করতে পারলেই, ইউক্রেনের আকাশে বহুল কাঙ্ক্ষিত আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে রাশিয়ার।
যুদ্ধের শুরুর দিকে আকাশপথে আসা হামলাকে ভালোভাবেই ঠেকায় ইউক্রেন। কিন্তু, এখন তাদের সক্ষমতায় বড় ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
বিপর্যয় ঠেকাতে অস্ত্রাগারে রাখা স্নায়যুদ্ধকালের পুরোনো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনে পাঠাচ্ছে ইউরোপের মিত্র দেশগুলো।
শুধু পুরোনো অস্ত্রই নয়, নতুনতম প্রযুক্তিও পাচ্ছে কিয়েভ। যেমন চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহুল কাঙ্ক্ষিত ন্যাশনাল অ্যাডভান্সড সারফেস টু এয়ার সিস্টেম (সংক্ষেপে নাসামস) পেয়েছে।
এনিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে টুইট করেন ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ। তিনি লিখেছেন, 'দেখুন আমরা কী পেয়েছি! নাসামস এবং এস্পাইড আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনে পৌঁছেছে। এসব অস্ত্র উল্লেখযোগ্যভাবে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করবে এবং আমাদের আকাশসীমাকে নিরাপদ করবে'।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি জানান, এরমধ্যেই ৭০টি মিসাইল ও ১০টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে নাসামস।
যদিও যুদ্ধের বৃহৎ পরিসরের তুলনায় এ সাফল্য ফিকে হয়ে আসছে। কারণ, রাশিয়া মেতেছে সংখ্যার খেলায়। মস্কোর হাতে থাকা বিপুল ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে ইউক্রেনকে ব্যবহার করতে হচ্ছে এয়ার ডিফেন্স মিসাইল। সেগুলি দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে রুশ হামলা প্রতিরোধে। ফলে চলছে মিসাইল ও প্রতি-মিসাইলের এক সংখ্যার লড়াই। যুদ্ধ যতদিন ধরে চলবে– ততোই টান পড়বে ইউক্রেনের প্রতিরোধকারী ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারে।
আক্রমণ ও প্রতিরোধের এই দ্বৈরথে পশ্চিমা দেশগুলি কতদিন ব্যয়বহুল অ্যান্টি-মিসাইল ইউক্রেনকে দিয়ে যেতে পারবে– তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
তাছাড়া, নাসামস অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স হলেও- এর আছে সরবরাহ এবং সক্ষমতার বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা।
এই বাস্তবতায়, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান দশা এবং কীভাবে সেটিকে আরও শক্তিশালী করতে পারবে পশ্চিমারা- সে বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবিসি নিউজ।
নাসামস উন্নত হলেও, যথেষ্ট নয় কেন?
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে দুটি নাসামস সিস্টেম দিয়েছে এবং আরও ছয়টি পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আকাশ প্রতিরক্ষার এই ব্যবস্থাটি যৌথভাবে প্রস্তুত করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও নরওয়ে। মধ্য পাল্লার এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে- ক্রুজ মিসাইল, প্রচলিত বিমান ও ড্রোন প্রতিরোধে যুক্ত আছে নানাবিধ সেন্সর ও রাডার।
পুরো ব্যবস্থাটিতে আছে একটি ভ্রাম্যমাণ রাডার সিস্টেম। শত্রুর ধেয়ে আসা মিসাইল বা বিমানের মতো হুমকি শনাক্তে রয়েছে একটি কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার। লঞ্চার বা মিসাইল উৎক্ষেপক নির্দিষ্ট দূরত্বে আলাদাভাবে থাকে।
পুরো ব্যবস্থাটি ভ্রাম্যমাণ হওয়ায়– প্রয়োজন অনুসারে, এটিকে যেখানে ইচ্ছা স্থাপন করা যায়।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন দাবি করেছেন, রাশিয়ান মিসাইল ধবংসে নাসামসের সফলতার হার শতভাগ।
নাসামসের একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো– এর অ্যান্টি-মিসাইলের সীমিত রেঞ্জ, যা মাত্র ৩০ কিলোমিটার। তবু ইউক্রেনের রণাঙ্গনে এটি এরমধ্যেই যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেছেন স্ট্র্যাটেজিক এনালাইসিস অস্ট্রেলিয়ার পরিচালক মাইকেল শুব্রিজ। তার মতে, 'যুদ্ধের ময়দানে এগুলো ব্যাপক কার্যকর। নিঃসন্দেহে এটি ইউক্রেনীয়দের প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় বড় উন্নয়ন'।
নাসামসের একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা– এতে অ্যাডভান্সড মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বা 'অ্যামর্যাম' ব্যবহার করা হয়। শত্রুবিমানকে আকাশপথে ধ্বংস করতে বিমান থেকে ছোঁড়ার জন্য ডিজাইন করা এই মিসাইলকে যুক্ত করা হয়েছে ভূমি-ভিত্তিক নাসামসে। আর সুবিধাটা সেখানেই।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের- স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স স্টাডিজ সেন্টারের অধ্যাপক স্টিফেন ফ্রাহলিং জানান, 'নাসামসে ব্যবহৃত এ মিসাইলের মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই। এ ধরনের হাজার হাজার মিসাইল পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে মজুত রয়েছে'।
কিন্তু, আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে- এর দ্বারা খুব বেশি বিস্তৃত এলাকাকে সুরক্ষিত রাখা যায় না। ফলে কোন স্থাপনা রক্ষা করতে হবে– আর কোনটি অনিরাপদ থাকবে–সেই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে ইউক্রেনকে।
শুব্রিজ বলেন, 'নাসামস অনেকটা বিভিন্ন এলাকায় এয়ার ডিফেন্স ফুটপ্রিন্ট তৈরির মতো'। সাধারণত শত্রুর হামলা ঠেকাতে- বিমানঘাঁটিসহ অন্যান্য স্পর্শকাতর স্থাপনায় ব্যবহারের জন্য এটির ডিজাইন করা হয়েছে। যেমন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয় হোয়াইট হাউসেও রয়েছে নাসামাস।
এজন্য ইউক্রেনের বড় শহরগুলির গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরকারি ভবন, সামরিক স্থাপনা এবং জ্বালানি অবকাঠামোকেই রক্ষা করতে পারবে নাসামস।
অধ্যাপক ফ্রাহলিং বলেন, ইউক্রেন বিশাল বড় দেশ– তাই (পুরো দেশকে সুরক্ষা দিতে চাইলে) এ ধরনের অগণিত সিস্টেম লাগবে। এক কথায়- সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে রক্ষা করা যাবে না এটাই বাস্তবতা'।
পশ্চিমা বিশ্বের কাছেই যথেষ্ট পরিমাণ নাসামস নেই, উৎপাদনেও লাগে যথেষ্ট সময়। সঙ্গে বিপুল অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি তো আছেই। সবমিলিয়ে খুব বেশি নাসামস দিতে পারবে না কিয়েভের মিত্ররা।
বর্তমানে ১২টি দেশ নাসামস পরিচালনা করছে।
একারণেই পেন্টাগন আরও নাসামস দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও, কবে নাগাদ তা ইউক্রেন পাবে– তার দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে জানায়নি।
আর যেসব এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করেছে ইউক্রেন
শুব্রিজ জানান, আকাশ প্রতিরক্ষায় এপর্যন্ত ভালো পারদর্শিতা দেখিয়েছে ইউক্রেন। একারণে দেশটির আকাশসীমার বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছে রাশিয়ার বিশাল বোমারু বিমানের বহর।
ইউক্রেনের বেশিরভাগ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই সাবেক সোভিয়েত আমলের, যার মধ্যে অন্যতম- দূরপাল্লার এস-৩০০।
এস-৩০০ ব্যবস্থা রাশিয়ারও রয়েছে, এটি ১৫০ কিলোমিটার দূরপর্যন্ত শত্রু বিমান ও মিসাইলকে ধ্বংস করতে পারে।
এস-৩০০ ইউক্রেনের হাতে থাকা একমাত্র এয়ার ডিফেন্স যেটি অনেক উঁচু দিয়ে ধেয়ে আসা বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে পারে। তবে সীমিত সংখ্যক এই সিস্টেম রয়েছে ইউক্রেনের, আর এতে ব্যবহৃত মিসাইল পশ্চিমা দুনিয়ার কোনো দেশও উৎপাদন করে না। ফলে তারা এটি সরবরাহও করতে পারবে না।
অধ্যাপক ফ্রাহলিং বলেন, 'তাই ইউক্রেনের হাতে থাকা এ ধরনের প্রতিরোধকারী মিসাইল ফুরিয়ে যাওয়ার বাস্তবিক ঝুঁকি রয়েছে। গত গ্রীষ্ম থেকেই পশ্চিমারা অনুধাবন করে, ইউক্রেনের পুরোনো সোভিয়েত অ্যান্টি-মিসাইলকে পশ্চিমা মিউনিশন দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে, যাতে সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখা যায়'।
পশ্চিমাদের দেওয়া নানাবিধ এয়ার ডিফেন্স
নাসামস খুব উঁচুতে সুরক্ষা দিতে পারে না, তাই এর সুরক্ষা বলয়ের বাইরে দিয়ে উড়ে যাওয়া মিসাইল ঠেকাতে এস-৩০০ সচল থাকা খুবই জরুরি ইউক্রেনের জন্য। এই সুরক্ষা বলয় হচ্ছে সেই সীমা, যা একটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রক্ষা করতে পারে। একে একটি অদৃশ্য গম্বুজ হিসেবে কল্পনা করাও যেতে পারে।
এস-৩০০ মিসাইলের ভাণ্ডারের ওপর চাপ কমাতে বিকল্প অন্যান্য এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পশ্চিমারা দিচ্ছে দেশটিকে।
যেমন নরওয়ে ও স্পেন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পুরোনো 'হক' মিসাইল। জার্মানি দিয়েছে চারটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আইরিস-টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। এটি আরও দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে বার্লিন।
গত অক্টোবরে ফ্রান্স জানায়, ইউক্রেনকে দেওয়া তাদের ক্রোটাল এয়ার ডিফেন্স আগামী দুই মাসের মধ্যেই সচল করা যাবে, এজন্য ২ হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা জানায় প্যারিস।
চলতি মাসের শুরুতে ইতালি ঘোষণা দেয়, ফ্রান্স ও ইতালির যৌথ উদ্যোগে প্রস্তুতকৃত মধ্যপাল্লার স্যাম্প/টি-সহ ইউক্রেনকে বিভিন্ন রকম এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিতে প্রস্তুত রোম।
ড্রোন হামলা প্রতিরোধও ইউক্রেনের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। এজন্য নিজস্ব মজুদ থেকে অত্যাধুনিক 'স্কাই-ওয়াইপার' নামক অ্যান্টি-ড্রোন রাইফেল পাঠিয়েছে লিথুনিয়া। এই রাইফেলের ছোড়া তরঙ্গ আঘাত করলে ড্রোনের ভেতর থাকা ইলেকট্রনিক্স নষ্ট হয়ে যায় এবং সেটি বিকল হয়ে পড়ে।
প্রচলিত এয়ার ডিফেন্স মিসাইলের চাইতে এটিই ড্রোন ধবংসের সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়। লাখ লাখ ডলার দামের অ্যান্টি-মিসাইল দিয়ে ড্রোন ধ্বংস করাও টেকসই সমাধান নয়। অ্যান্টি-ড্রোন রাইফেল এসব কিছু মাথাই রেখেই তৈরি করেছে বিভিন্ন দেশের সামরিক শিল্প।
আপাতত এয়ার ডিফেন্সের এক জগাখিচুড়ি লক্ষ করা যাচ্ছে ইউক্রেনের রণাঙ্গনে। তবে এদের অধিকাংশের সুরক্ষা বলয় ১৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বলে জানান অধ্যাপক ফ্রাহলিং।
তিনি বলেন, 'বিগত ছয় বছরে পশ্চিমা শক্তিগুলোর দূরপাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেভাবে দরকার হয়নি। এজন্য আমাদের কাছে এ ধরনের সিস্টেম খুব বেশি নেই'।
এই পরিস্থিতিতে ৭০ কিলোমিটার পাল্লার প্যাট্রিয়টের মতো অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সরবরাহের দাবি করছে কিয়েভ। কিন্তু, আমেরিকার তৈরি প্যাট্রিয়ট সিস্টেম উচ্চ প্রযুক্তির হওয়ায় এটি উৎপাদনে যথেষ্ট সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়।
একারণেই আমেরিকাসহ তার মুষ্টিমেয় কিছু মিত্র দেশে প্যাট্রিয়ট অপারেশনাল রয়েছে।
ফ্রাহলিং ব্যাখ্যা করেন, 'কারো কাছেই অতিরিক্ত প্যাট্রিয়ট নেই (ইউক্রেনকে দান করার মতো)। তাছাড়া, এর অনেকগুলোকে সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব ইউরোপে মোতায়েন করা হয়েছে। রাশিয়া যদি যুদ্ধের বিস্তার ঘটায়– তাহলে যেন পূর্ব ইউরোপের মিত্রদের সুরক্ষা দেওয়া যায়– সে লক্ষ্যেই এ পদক্ষেপ নেয় ন্যাটো'।
তবুও উদ্বেগ দূর হচ্ছে না পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির। যেমন গত সপ্তাহে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিউস ব্লাসজাক তার দেশে আরও প্যাট্রিয়ট মিসাইল লঞ্চার মোতায়েন করতে জার্মানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।