‘গুজরাটের কসাই’, ‘সন্ত্রাসের কেন্দ্র’: জাতিসংঘে ভারত-পাকিস্তানের কথার লড়াই
জাতিসংঘে কথার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। প্রথমে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পাকিস্তানকে 'সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র' বলে অভিহিত করেন। এরপর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে 'গুজরাটের কসাই' বলে অভিহিত করেন। খবর আল জাজিরার।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সন্ত্রাসবাদের উত্থান সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দিয়ে একটি বিবৃতি গৃহীত হওয়ার পরই বিলাওয়াল ভুট্টো ও এস জয়শঙ্করের মধ্যে এই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
বিশেষ করে কাশ্মীরসহ অন্যান্য আরও ইস্যু নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন লেগেই থাকে।
নয়াদিল্লি নিয়মিতই ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আনে।
উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়
জাতিসঙ্ঘের সভা শেষ হওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জয়শঙ্কর পাকিস্তানকে 'সন্ত্রাসের কেন্দ্র' আখ্যা দেন।
তিনি বলেন, 'আমার পরামর্শ হচ্ছে নিজেকে শুধরে নিয়ে ভালো প্রতিবেশী হওয়ার চেষ্টা করুন।
'হিলারি ক্লিনটন পাকিস্তান সফরের সময় বলেছিলেন, আপনি নিজের উঠানে সাপ পুষবেন, অথচ ভাববে সেটা শুধু পড়শিকেই কামড়াবে, তা হয় না। সেই সাপ শেষ পর্যন্ত যারা পোষে তাদেরকেই কামড়ায়।'
এর আগে জয়শঙ্কর পাকিস্তানের নাম না করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, 'বিশ্ব গুরুত্বের সাথে নেওয়ার অনেক আগেই সীমান্তের ওপারের সন্ত্রাসের আতঙ্ক মোকাবিলা করেছে।'
এ প্রসঙ্গে বিলাওয়াল ভুট্টোকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জয়শঙ্করের মনে রাখা উচিত যে 'ওসামা বিন লাদেন মারা গেছেন, [কিন্তু] গুজরাটের কসাই এখনো বেঁচে আছেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।'
২০০২ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা যায়, যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম। ওই সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি।
ওই দাঙ্গা ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল মোদির বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগপর্যন্ত তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, সন্ত্রাসের কারণে তার দেশ অনেক বেশি প্রাণ হারিয়েছে। তার মা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোও ২০০৭ সালে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় মারা যান।
বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, 'মুসলিম হিসেবে, পাকিস্তানি হিসেবে, সন্ত্রাসবাদের ভুক্তভোগী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ হামলার পর তৈরি হওয়া কিছু ইসলামোফোবিক বয়ান থেকে সরে আসার সময় হয়েছে। কারণ এ পর্যন্ত আমরা দেখেছি, সন্ত্রাসবাদ কোনো ধর্ম মানে না, সীমান্ত মানে না।'
শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক বিবৃতিতে বিলাওয়াল ভুট্টোর মন্তব্যকে 'অত্যন্ত জঘনয' বলে অভিহিত করেছেন।
অরিন্দম বাগচি বিবৃতিতে বলেন, 'এটা চূড়ান্ত নিম্নরুচি। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও (সেটা নিম্নরুচির)। ১৯৭১ সালের আজকের দিনটা নিশ্চয়ই ভুলে গেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাঙালি ও হিন্দুদের উপর পাকিস্তানি শাসকরা যে গণহত্যা চালিয়েছিল, সেটার প্রত্যক্ষ ফলাফল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে, তা নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থানের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। গণতন্ত্রের পীঠস্থানের উদ্দেশ্যে এরকম অভিযোগ চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।'