মার্কিন নাগরিকদের ঠকিয়ে ১০ বিলিয়ন ডলার হাতিয়েছে ভারতের অনলাইন প্রতারক চক্র
ভারতের অভ্যন্তর থেকে কাজ করা অবৈধ কল সেন্টার ও ফিশিং গোষ্ঠীগুলো রোমান্স বিষয়ক প্রতারণা ও টেক-সাপোর্ট স্ক্যামের মাধ্যমে প্রবীণ বয়সী মার্কিন নাগরিকদের কাছ থেকে গত দুই বছরে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি হাতিয়ে নিয়েছে বলে দেশটির ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানিয়েছে। খবর দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া'র।
কেবল বিগত ১১ মাসেই মার্কিন নাগরিকেরা এ ধরনের ভুয়া কল সেন্টার সম্পর্কিত জালিয়াতির খপ্পরে পড়ে প্রায় ১০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খুইয়েছেন বলে ধারণা করছে সংস্থাটি। এ অর্থ গত বছরের ৬.৯ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৪৭ শতাংশ বেশি।
ভারতের ভেতর থেকে পরিচালিত এসব ফিশিং গোষ্ঠীদের কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) নয়াদিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসে একজন স্থায়ী প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছে।
সুহেল দাউদ নামক এ প্রতিনিধি ভারতে বসে কাজ করা এসব প্রতারণা চক্রগুলোকে আটক ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ করতে সিবিআই, ইন্টারপোল, ও দিল্লি পুলিশের সঙ্গে কাজ করবেন।
লিগ্যাল অ্যাটাশি দাউদ এফবিআই'র দক্ষিণ এশিয়া প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে দাউদ বলেন, এফবিআই'র ওয়েবসাইটে রোমান্স সম্পর্কিত জালিয়াতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, ২০১১ সালে ক্ষতিগ্রস্ত এ মার্কিন নাগরিকদের থেকে ভারতীয় রুপির হিসেবে আনুমানিক ৮,০০০ কোটি রুপি ঠকিয়ে নেওয়া হয়েছে।
২০২২ সালের ১১ মাসে এ অর্থের পরিমাণ ইতোমধ্যে ৮,০০০ কোটি রুপি ছুঁয়েছে। এর সঙ্গে টেক সাপোর্ট স্ক্যামগুলো যোগ করলে গত দুই বছরে মোট হারানো অর্থের পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি।
'এটা হয়তো এখনো কোনো জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সমস্যায় পরিণত হয়নি, কিন্তু এর সঙ্গে একটি দেশের সম্মান জড়িয়ে আছে। আমরা চাই না ভারত এজন্য ভুগুক,' বলেন দাউদ। এ তদন্তে এফবিআই'র 'শক্তিশালী সহযোগী' সিবিআই ও ইন্টারপোল বলে জানান তিনি।
দাউদ জানান, 'টেক সাপোর্ট' সম্পর্কিত কেসগুলোর পরিমাণ বার্ষিক ১৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। এ ধরনের স্ক্যাম পরিচালনা করার জন্য স্ক্যামারেরা ব্যক্তির কম্পিউটারে টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদান বিষয়ক পপ-আপ নোটিফিকেশন পাঠায়।
দাউদ জানান, ইন্টারনেটে অপরাধের বিষয় জানানোর জন্য এফবিআই'র ওয়েবসাইটে (ic3.gov) ২০২১ সালে সাড়ে আট লাখের মতো অভিযোগ জমা পড়ে যেগুলো থেকে ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ ৬.৯ বিলিয়ন ডলার।
২০২২ সালের ১১ মাসে এ ওয়েবসাইটে ৭.৮ লাখ অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এগুলোর ফলে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ধারণা করা হচ্ছে ১০.২ বিলিয়ন ডলারে কাছাকাছি।
বিনিয়োগ করার ফাঁদে পা দিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রতারণা শিকার হয়েছেন আমেরিকানরা, যার পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলার।
এর পরে রয়েছে ব্যবসায়িক ইমেইলের খবর প্রতারকদের জেনে যাওয়া (২.৪ বিলিয়ন ডলার), ব্যক্তিগত ডেটা চুরি (১.২ বিলিয়ন ডলার), রোমান্স (১ বিলিয়ন ডলার) ও টেক সাপোর্ট (৭৮১ মিলিয় ডলার)।