‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ খ্যাত ভারতের সর্ববৃহৎ বস্তি আর থাকছে না, আবাসন প্রকল্প বানাবেন গৌতম আদানি
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/01/02/1669814348155-gettyimages-645966204.jpg)
বন্দর ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন, আমদানি রপ্তানি পণ্য পরিবহন, আবাসনসহ নানা খাতে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন ভারতীয় বিলিয়নিয়ার ও এই মুহূর্তে এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি। সমগ্র ভারতজুড়ে রয়েছে তার শিল্প সাম্রাজ্য। তবে এবার তার নজর পড়েছে ভারতের সর্ববৃহৎ বস্তি ধারাভির ওপর। বস্তি উচ্ছেদ করে আধুনিক আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চলেছেন তিনি, খবর দ্য টাইমস এর।
মুম্বাই শহরের কেন্দ্রে ৫৪০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত ধারাভি বস্তি। আর দশটা সাধারণ বস্তির মতো ধারাভি বস্তিতেও চোখে পড়বে টিন-তেরপল দিয়ে বানানো অন্ধকার খুপরি ঘর, নোংরা ড্রেন, সরু গলি, দুর্গন্ধযুক্ত টয়লেট। শতবর্ষী এই বস্তিতে মুম্বাই শহরের সবচেয়ে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের বসবাস। অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র 'স্লামডগ মিলিয়নিয়ার' এর কিছু অংশের শ্যুটিং এখানে হওয়ার পর এই বস্তি বিশ্বব্যাপী আরও পরিচিতি পায়।
ভারতীয় মাল্টিন্যাশনাল কনগ্লোমারেট আদানি গ্রুপের মালিক ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একজন সুহৃৎ হিসেবে পরিচিত গৌতম আদানি এই বস্তির জায়গায় সোশ্যাল হাউজিং ও বিলাসবহুল ভবন নির্মাণের জন্য সাত বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
আদানির ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন পাউন্ডের এই পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই অনুমোদন করেছে ভারত সরকার। মুম্বাইয়ের মেট্রোপলিটন কমিশনার ও ধারাভি উন্নয়ন প্রকল্পের সিইও এসভিআর শ্রীনিবাসের ভাষ্যে, "এটি বিশ্বের বৃহত্তম নগর উন্নয়ন প্রকল্প।"
সরকারি কার্যালয়ের নয়তলা থেকে ধারাভি বস্তির দিকে তাকিয়ে এসভিআর শ্রীনিবাস বলেন, "সিনেমায় দারিদ্রকে রোমান্টিক করে তোলা (যেমনটা 'স্লামডগ মিলিয়নিয়ার' এর মতো সিনেমায় করা হয়েছে) আর বাস্তবে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা আলাদা জিনিস। এ প্রকল্প বস্তি-মুক্ত মুম্বাই গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ। এই মুহূর্তে এই বস্তিতে মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের বিশুদ্ধ পানি নেই, টয়লেট নেই। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে এসেও মৌলিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।"
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/02/_methode_sundaytimes_prod_web_bin_510ca0ee-87c4-11ed-9ca7-1aa007659b7e.jpg)
নতুন প্রকল্পটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বস্তির অধিবাসীদের মধ্যে। কেউ কেউ নিজেদের জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন, আবার কেউ কেউ মনে করছেন, বস্তি উচ্ছেদ করলে তাদের আরও বেশি ক্ষতি হবে। একটি স্কুলে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত সাইবু পুজারি (৩২) বলেন, "এটা আমাদের জন্য ভালো হবে। ভালো কিছু করতে চাইলে তো পুরনো কিছু ভেঙে ফেলতেই হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ভবিষ্যতের কথা ভাবে না।"
কিন্তু বস্তির আরেক অধিবাসী, ৪৬ বছর বয়সী ধন মোহন শেঠী মনে করেন, ধারাভিতে বসবাসরতদের মধ্যে নিজস্ব একটি সহায়তা প্রক্রিয়া রয়েছে। এখানে একজন বিপদে পড়লে অন্যরা তাকে সাহায্য করে। কিন্তু আধুনিক বহুতল ভবনের ভেতরে সেই সহায়তা তারা নাও পেতে পারেন। তিনি বলেন, "এখানে যদি আমরা না খেয়ে থাকি, তাহলে প্রতিবেশিরা আমাদের খাবার দেয়। এখানে আমার সন্তানদের পড়াশোনার জন্য একটা স্কুলও রয়েছে। আমাদের কাছে সবকিছু আছে। আমরা যদি এখান থেকে চলে যাই, এরপর যদি সমস্যায় পড়ি, তখন কে আমাদের সাহায্য করবে?"
আবার অনেকের আশঙ্কা, সরকার যে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা কখনো বাস্তবায়িত হবে না এবং এর ফলে তাদের আরও শোচনীয় অবস্থা হবে। এমনকি ২৩ বছর বয়সী সাগর কুমার বৈশি ধারাবি বস্তি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতেই চান না। তার ভাষ্যে, "আমরা বিক্রি করতে চাই না। যা হওয়ার হোক।"
এদিকে ভবন নির্মাণ পরিকল্পনা এখনও চূড়ান্ত না হলেও, জানা গেছে, মোট জায়গার ৪০ শতাংশ বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন কাজে ব্যবহৃত হবে এবং বাকি ৬০ শতাংশ জায়গায় বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও, বস্তির সকলেই পুনর্বাসন প্রকল্পে স্থান পাবেন না। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতি দশটি পরিবারের মধ্যে মাত্র ছয়টি পরিবার থাকার ঘর পাবে। অর্থাৎ, বস্তি উচ্ছেদ হলে শত শত পরিবারকে বাস্তুহীন হতে হবে।
বস্তিতে আবাসন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধানে থাকবে যারা, তার ৮০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হবে আদানি গ্রুপ এবং প্রধান বিনিয়োগকারী হিসেবে লাভের সিংহভাগই তাদের পকেটে যাবে। প্রকল্পের আর্থিক ও সামাজিক জটিলতার কারণে গত দুই দশক ধরে ধারাভি বস্তি উন্নয়নের প্রচেষ্টা বারবার হোঁচট খেয়েছে। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে গৌতম আদানির উষ্ণ সম্পর্কের জোরেই তিনি এ প্রকল্প বাগিয়ে নিতে পেরেছেন বলে অনেকের ধারণা।
তবে মুম্বাইয়ের স্থপতিদের জন্য যে এ প্রকল্প বেশ লোভনীয় তা বলাই বাহুল্য! মুম্বাইভিত্তিক স্থপতি মুকেশ মেহতা বলেন, "হাই প্রোফাইল' বা গুরুত্ব বিবেচনায় এই মুহূর্তে এই প্রকল্পের চেয়ে হাইপ্রোফাইল কোনো প্রকল্প বিশ্বে নেই। এখানে শুধু টাকার বিষয়টাই মুখ্য না। এর সঙ্গে সম্মান জড়িত, এবং দরিদ্রদের সাহায্য করার বিষয়টিও জড়িত।"