এপর্যন্ত ইউক্রেনকে কী পরিমাণ সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র?
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি এক বছরে পা রাখবে ইউক্রেন যুদ্ধ। গত এক বছরে দেশটিকে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় অনেক ধরনের সামরিক-বেসামরিক সহায়তা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে কিয়েভের সবচেয়ে বড় সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র । চলতি সপ্তাহে ঝটিকা কিয়েভ সফরকালে ইউক্রেনের জন্য আরো প্রায় ৫০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। খবর বিবিসির
এরমধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেছে, তার সাথে এটা নতুন সংযুক্তি। শুধু ২০২২ সালেই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ (কংগ্রেস) ইউক্রেনের জন্য ১১২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার অনুমোদন দেয়। ফলে টাকার অঙ্কে যুক্তরাষ্ট্রই ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় দাতা।
যুদ্ধে এত খরচের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে যুক্তরাষ্ট্রে। অনেক মার্কিনী বিদেশি রাষ্ট্রের পেছনে সরকারের এত ব্যয়ে চিন্তিত। তারা জানতে চাইছেন, এই টাকা কোথায় কোথায় ব্যয় হচ্ছে এবং সহায়তা দানের মূল্যই বা কত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র কী পরিমাণ সহায়তা দিয়েছে?
চলতি সপ্তাহে বাইডেন যে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন, তার আগেই ইউক্রেনকে আরো প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ তথ্য জানিয়েছে কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি। সংস্থাটি ইউক্রেনকে দেওয়া বৈশ্বিক সহায়তার দিকে নজর রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুত সহায়তার মধ্যে ৪৬.৬ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা, যা অন্য যেকোনো দেশের দেওয়া সাহায্যের চেয়ে বেশি। সামরিক সহায়তার অঙ্কে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য (৫.১ বিলিয়ন ডলার); এবং তারপর ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (১০.২ বিলিয়ন ডলার)।
এতো গেল শুধু সামরিক সাহায্য, অন্যান্য ধরনের সহায়তার জন্যও খরচ বেড়ে চলেছে।
অর্থ যেখানে ব্যয় হচ্ছে?
সামরিক সহায়তার অর্থে ইউক্রেনের জন্য ড্রোন, ট্যাংক, মিসাইলসহ অন্যান্য ধরনের গোলাবারুদ ক্রয়, প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে। এর বাইরে অতিরিক্ত সহায়তা হলো- মানবিক ও আর্থিক ত্রাণ।
মানবিক ত্রাণের মধ্যে রয়েছে- খাদ্য সহায়তা, সুপেয় পানি সরবরাহ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধসহ সংঘাতে বাস্তুহারা ইউক্রেনীয় নাগরিকদের অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর সহায়তা। আর্থিক ত্রাণ অর্থনৈতিক সহায়তার অংশ। এতে ইউক্রেনের সরকার তার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে এবং সরকারি চাকুরে, স্বাস্থ্যমকর্মী, শিক্ষকদের বেতনভাতা দিতে পারছে।
ইউক্রেনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে সামরিক সহায়তার পেছনে। সে তুলনায়, মানবিক ও আর্থিক ত্রাণ হিসেবে যথাক্রমে ৩.৬৯ এবং ২৬.৭৩ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
অন্যান্য দেশ ইউক্রেনের পেছনে কী পরিমাণ ব্যয় করছে?
মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তুলনায় যদি প্রতিশ্রুত সহায়তার হিসাব করা হয়, তাহলে দেখা যায়- যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ ব্যয়কারী দেশ নয়।
এক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে থাকে এস্তোনিয়া, পূর্ব ইউরোপের দেশটি তাদের জিডিপির ১.১ শতাংশের সমান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানাচ্ছে কিয়েল ইনস্টিটিউট। অন্যদিকে, বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র তার জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।
অবশ্য প্রতি ডলারের হিসাব করলে, ইউক্রেনকে ত্রাণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রই নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু, জিডিপি অনুপাতে দেশটি রয়েছে পঞ্চম স্থানে।
এটা কী পরিমাণ অর্থ?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইউক্রেনের সংঘাতে পুরো বিশ্ব থেকেই অর্থ সহায়তা আসছে। এরপরও এই সহায়তার মূল্য আগের কিছু যুদ্ধের তুলনায় বেশ নিম্ন বলে উল্লেখ করেছে জার্মানির গবেষণা সংস্থা- কিয়েল ইনস্টিটিউট।
'উদাহরণস্বরূপ; ২০০১ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে প্রতিবছরে এর চেয়ে তিনগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। এছাড়া, জার্মানিও দেওয়া সহায়তার চেয়ে তিনগুণ বেশি অর্থ ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় মিত্র বাহিনীকে দিয়েছিল'।