প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা হ্রাসের আইন পাস পাকিস্তানে
আজ বুধবার (২৯ মার্চ) পাকিস্তানের পার্লামেন্টের আইন ও বিচার বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি দেশটির প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা হ্রাসে একটি সংশোধনীর অনুমোদন দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অপর দুই বিচারপতির দেওয়া এক রায় অনুসারেই এ সংশোধনী আনা হয়। আইন সংশোধনের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির সুয়োমোটো নোটিশ বা স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারির সক্ষমতাকে সীমিত করার লক্ষ্য রয়েছে এতে।
এরপর বুধবার সুপ্রিম কোর্ট (প্রাকটিস অ্যান্ড প্রসিডিওর), বিল ২০২৩' পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ জাতীয় পরিষদে পাস হয়েছে। এতে 'রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ বন্ধের' উদ্যোগ রয়েছে। সাংবিধানিক বিষয়ে শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গঠনের কথাও রয়েছে এতে, (যাতে প্রধান বিচারপতির এককভাবে সুয়োমোটো রুল জারির ক্ষমতা খর্ব হয়)।
গতকাল মঙ্গলবার পার্লামেন্টে উত্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা প্রস্তাবিত আইনের সংশোধনীকে অনুমোদন দেয়। সরকারের এসব উদ্যোগের পাশাপাশি দেশটির বিচার বিভাগেও বিভাজন দেখা দিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে নির্বাচনকে ঘিরে। গত ২২ মার্চ আকস্মিকভাবে নির্বাচন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির নির্বাচন কমিশন- ইসিপি। ৩০ এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আদালতের নির্দেশ থাকলেও, তা পিছিয়ে ৮ অক্টোবরে করার সিদ্ধান্ত জানায়।
পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল, তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এ ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করে একে 'অসাংবিধানিক ও অবৈধ' বলে। সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। পিটিআই সুয়োমোটো নোটিশ জারির জন্য মামলা করলে, সেটি গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল।
পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ মামলার শুনানিতে অংশ নেয়। শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল তার পর্যবেক্ষণে জানান, (আদালতের পূর্ব নির্দেশ থাকায়) নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার আইনি অধিকার নেই ইসিপির। বেঞ্চের দুই বিচারক এর বিরোধিতা করলেও, রায় ৩-২ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জারি করা হয়।
পরে নির্বাচনের বিষয়টি নিষ্পত্তি জন্য ৯ সদস্যের একটি বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। বিচারকদের মধ্যে দুজন সুয়োমোটো নোটিশ জারির বিরোধিতা করেন; অপর দুজন বেঞ্চে থাকতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে নতুন বেঞ্চ গঠনে বাধ্য হন প্রধান বিচারপতি।
সুয়োমোটো মামলার রায়ের বিরোধিতা করে বিচারক শাহ ও বিচারক মন্দোখেল ২৮ পাতার এক নোট লিখেছেন। সেখানে তারা বলেন, ৩-২ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রায় দেওয়া হলেও, এর আগে ৪-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বেঞ্চ মামলাটির গ্রহণযোগ্যতার বিপক্ষে রায় দেন। তারা গুরুত্বপূর্ণ মামলায় প্রধান বিচারপতির একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার কড়া সমালোচনাও করেন।
এরপরেই প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা হ্রাসে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয় পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) এবং পাকিস্তান পিপপস পার্টির জোট সরকার। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সরকারের সমর্থন আছে।