ঘূর্ণিঝড় মোখায় অন্তত ৩২ জনের প্রাণহানি মিয়ানমারে
গত রোববার (১৪ মে) অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা মূল আঘাত হানে মিয়ানমারে। এতে অন্তত ৩২ জনের প্রাণহানির কথা স্থানীয়রা বিবিসিকে জানিয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। খবর বিবিসির
গত এক দশকে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানা অন্যতম শক্তিশালী সাইক্লোন ছিল মোখা। ঝড়ো বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ২০৯ কিলোমিটার।
এতে মিয়ানমারের নিম্ন-উপকূলীয় অঞ্চল রাখাইন রাজ্যে এবং কেন্দ্রীয় মিয়ানমারের মগওয়ে বিভাগে প্রাণহানির বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি।
ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙে পড়েছে শত শত বাড়িঘর।
বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রে বিবিসি মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি বলে জেনেছে। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তা প্রশাসন যাদের সংখ্যা গণনা করেনি।
সামরিক জান্তা মিয়ানমার জুড়ে ২১ জনের প্রাণহানির কথা জানায়। নিহতদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছে।
তবে যে প্রচণ্ড ধবংসের ছাপ রেখে গেছে মোখা, তাতেই স্পষ্ট জান্তা সরকারের তথ্যের কমতি।
ধারণা করা হচ্ছে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাখাইন রাজ্য। অসংখ্য গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপরে পড়ায় প্রাদেশিক রাজধানী সিতওয়ের সড়কগুলোয় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
মিয়ানমারে জান্তা সরকারের সাথে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চলছে গৃহযুদ্ধ। ঝড় আঘাত হানতে শুরু করার পরপরই মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় সামরিক বাহিনীর অভিযানের খবরও জেনেছে বিবিসি।
দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনী উত্তর-পশ্চিম সাগাইন বিভাগের গ্রামগুলোয় প্রবেশ করে, এসময় প্রাণভয়ে পালায় হাজার হাজার গ্রামবাসী।
রাজ্যের কানি টাউনশিপের এক বাসিন্দা বলেন, '১২ মে থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছিল, নালাগুলো পানির তোড়ে উপচে পড়ছিল, এরমধ্যে সেনারা আসে। এসময় ঝড়ের চেয়ে সেনাদেরই বেশি ভয় পায় মানুষজন। আর প্রাণভয়ে পালাতে থাকে'।
স্থানীয় বাসিন্দারা বিবিসিকে জানান, কানি ও খিন-ও টাউনশিপ এলাকা থেকে গত দুই দিনে ১৫ হাজার বাসিন্দা পালিয়ে গেছে। ইনপা গ্রামের চার বছরের এক শিশু-ও সেনাদের গুলিতে আহত হয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে সহায়তা দানকারী এনজিও – পার্টনার্স রিলিফ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট - তাদের টুইটার পোস্টে লিখেছে, 'সব দিক থেকেই এক ঝড়ের মুখে মিয়ানমার। আমরা জেনেছি, রাখাইন রাজ্য যখন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে – তার মধ্যেই অন্যান্য প্রদেশের গ্রামগুলোয় সেনাবাহিনী আক্রমণ চালিয়েছে। দুর্গত পরিবারগুলোর চাহিদা তাই আরো অনেক বেশি হতে চলেছে'।
সাগাইন জান্তা-বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের শক্ত ঘাঁটি। তারা অভিযানকালে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
মোখার তাণ্ডবে বাংলাদেশে প্রাণহানি তুলনামূলক কম হলেও, ক্ষয়ক্ষতি বেশ হয়েছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের অনেক ঘরই পঞ্চম ক্যাটাগরির এই সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মোখার ১৫ বছর আগে সাইক্লোন নার্গিস মিয়ানমারের ইরাবতী অববাহিকায় আঘাত হানে। এতে অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার জনের প্রাণহানি হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন আরো শক্তিশালী হচ্ছে সাইক্লোনগুলো।