রাশিয়ায় শি জিনপিংয়ের ‘মতাদর্শ’ গবেষণাকেন্দ্র চালু, চীনের বাইরে প্রথম
আধুনিক চীনকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের মতাদর্শের ওপর গবেষণাকেন্দ্র খুলেছে রাশিয়া।
গত জুনে মস্কোর রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অভ সায়েন্সেস এর ইন্সটিটিউট অভ চায়না অ্যান্ড কনটেম্পরারি এশিয়ায় (আইসিসিএ) দ্য মডার্ন আইডিওলজি অভ চায়না রিসার্চ ল্যাবরেটরিটি চালু করে।
চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, শি জিনপিং থট নামে পরিচিত চীনা নেতার মতাদর্শের ওপর চীনের বাইরে এটিই প্রথম গবেষণাকেন্দ্র।
আইসিসিএ-এর পরিচালক কিরিল বাবায়েভ বলেন, গবেষণাকেন্দ্রটির উদ্দেশ্য হলো আধুনিক চীনা রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি করা বিভিন্ন ধারণার বস্তুনিষ্ঠ এবং গভীর বিশ্লেষণ করা।
'এই ধরনের বিশ্লেষণ রাশিয়ান সরকার, ব্যবসায়িক এবং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে আধুনিক চীনকে আরও ভালভাবে বুঝতে, রাশিয়া-চীন সম্পর্কের জন্য আরও সুনির্দিষ্ট কৌশল তৈরি করতে এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ গতিবিধি জানতে সুযোগ দেবে', জানান পরিচালক।
'আমরা নিশ্চিত যে, আমাদের অংশীদারদের সম্পর্কে আমরা যত বেশি জানব এবং এই জ্ঞান যত বেশি বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক হবে — রাশিয়া-চীন এবং রাশিয়া ও এশিয়ার অংশীদারদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী সম্পর্কের বিকাশের জন্য তা তত ভাল হবে,' বলেন তিনি।
বাবায়েভ বলেন, গবেষণায় আধুনিক চীনা মতাদর্শের পাঁচটি বিষয়ে আলোকপাত করা হবে: অর্থনৈতিক নীতি, অভ্যন্তরীণ নীতি ও আইন প্রণয়ন, পররাষ্ট্র নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, এবং বাস্তুসংস্থান ও সমাজ।
অন্যান্য গবেষণাকেন্দ্রের নেতৃস্থানীয় রাশিয়ান সিনোলজিস্টরাও (চীন বিদ্যাবিশারদ) এই অধ্যয়নে অংশ নেবেন।
বাবায়েভ আরও বলেন, ল্যাবরেটরিটি কোনো বাহ্যিক অর্থায়ন গ্রহণ করবে না এবং কেবল আমাদের ইনস্টিটিউট দ্বারা অর্থায়ন করা হবে, যাতে কোনো মতাদর্শিক চাপ থেকে মুক্ত হয়ে কাজ করা যায়।
অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই রাশিয়ার প্রধান মিত্র দেশগুলোর একটি চীন। গত বছর মস্কোর ইউক্রেন আক্রমণের কয়েক সপ্তাহ আগেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও শি 'সীমাহীন' অংশীদারিত্ব ঘোষণা করেন।
সংঘাতের বিষয়ে বেইজিং 'নিরপেক্ষতার' ওপর জোর দেওয়ার কারণে এই্ সম্পর্ক তখন থেকে আরও শক্তিশালী হয়েছে। চীন কখনোই ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নিন্দা করেনি এবং পশ্চিমাদের দ্বারা রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে দুই দেশ।
সাংহাই অ্যাকাডেমি অভ সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর রাশিয়া ও মধ্য এশিয়া বিশেষজ্ঞ লি লিফান বলেছেন, নতুন গবেষণা কেন্দ্রটি পশ্চিম ও চীনের বিষয়ে রাশিয়ান অ্যাকাডেমিগুলোর গত দুই বছরের পাল্টে যাওয়া দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। এসময় প্রাচ্যের দিকে নজর দেওয়ার তাৎপর্য বেড়েছে।
'আসলে চীনের কিছু সাফল্য, যেমন দারিদ্র্য হ্রাস এবং এর শিল্প উন্নয়ন নীতিগুলোকে আমাদের রাশিয়ান সহকর্মীরা রাশিয়ার কিছু ঘরোয়া সমস্যার জন্য দরকারি রেফারেন্স হিসাবে বিবেচনা করছেন।'
লি আরও উল্লেখ করেছেন যে, পুতিন এবং প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিনসহ রাশিয়ান নেতারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বক্তৃতার সময় চীনা বাণী ব্যবহার করেছিলেন। এতে বোঝা যায়, তাদের কর্মীদের মধ্যে চীন বিশেষজ্ঞ রয়েছে।
'চীনা মতাদর্শে বিশেষজ্ঞ গবেষক এবং ছাত্ররা ভবিষ্যতে (রাশিয়ার) ইনস্টিটিউট, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থাগুলোতে যাওয়ার মাধ্যমে সেখানে চীনের প্রভাবকেও বাড়িয়ে তুলবে,' বলেন তিনি।
চীন শি জিনপিংয়ের রাজনৈতিক তত্ত্বের ওপর অন্তত ১৮টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। তার তত্ত্বের পুরো নাম 'শি জিনপিং থট অন সোশ্যালিজম উইথ চাইনিজ ক্যারেক্টারিস্টিক ফর আ নিউ এরা'। ২০১৭ সালে এটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং একই বছর চীনের প্রেসিডেন্টে মেয়াদসীমা বিলুপ্ত করা হয়।