এসসিও সম্মেলন: ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন, একযোগে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার অঙ্গীকার পুতিন, মোদি, শি’র
আজ মঙ্গলবার (৪ জুলাই) ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) ভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন। এতে যুক্ত হয়ে চীন, রাশিয়া, ভারত ও পাকিস্তানের নেতারা জোট সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এর মাধ্যমে তারা জোটের সম্প্রসারণ এবং এই অঞ্চলে পশ্চিমা প্রভাব মোকাবিলারও আগ্রহ পোষণ করেছেন।
২০২৩ সালের এসসিও সম্মেলনের আয়োজন করেছে ভারত। ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনার বিদ্রোহের পর এই প্রথম রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আন্তর্জাতিক নেতাদের সাথে কোনো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিলেন। রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দুই মিত্র – ভারত ও চীনের নেতা – নরেন্দ্র মোদি ও শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকে সাক্ষাৎ হয়েছে পুতিনের।
এসসিও সম্মেলনকে প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে পশ্চিমাদের প্রতি অদম্যতার বার্তা দিয়ে পুতিন বলেছেন, "রাশিয়া সব ধরনের বাহ্যিক নিষেধাজ্ঞা, চাপ ও উস্কানি মোকাবিলা করবে, এবং একইসঙ্গে অভূতপূর্ব উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবে।"
এসময় পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কমাতে এসসিও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন চালুর তাগিদ দেন পুতিন।
মস্কোয় তার দপ্তর ক্রেমলিন থেকে সম্প্রচারিত ভাষণে পুতিন বলেন, "এএসসি দেশসমূহের নেতারা যারা রাশিয়ার সাংবিধানিক অখণ্ডতা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে নেওয়া রুশ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন – তাদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।"
তিনি বলেন, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে বর্তমানে ৮০ শতাংশের বেশি বাণিজ্য রুবল ও ইউয়ানে হচ্ছে। এসসিও দেশগুলোকে বাণিজ্যে এই পদ্ধতি গ্রহণে আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে জোটের পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলনে স্থায়ী সদস্য হিসেবে যোগদানের আবেদন করেছে বেলারুশ। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশটির এই পদক্ষেপকে অভিনন্দন জানান পুতিন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
তবে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে সমর্থন দেওয়া বা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের কর্তৃত্ববাদী অবস্থানের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা থেকে এসময় তিনি বিরত ছিলেন। মূলত পশ্চিমা বিশ্বের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা ভারত, কূটনৈতিক ভারসাম্যের এই কৌশল অনুসরণ করছে।
কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন নরেন্দ্র মোদি। যেখানে মার্কিন সরকার তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়।
এমতাবস্থায়, প্রতিবেশী চীনের সাথে বৈরী সম্পর্ক থাকার পরেও, সম্মেলনে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়ে আলাপকালে চীনের উল্লেখ করেননি মোদি। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে চীন ও ভারতের সেনাদের মধ্যে সীমান্তে এক রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়।
পশ্চিমা দুনিয়া চীনকে ঠেকাতে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মনে করছে। নয়াদিল্লি প্রকাশ্যে এ ভূমিকার কথা কখনো ঘোষণা না করলেও – এবারের এসসিও সম্মেলনেও ভারতীয় নেতা চীনের সমালোচনা থেকে বিরত থাকলেন।
তার পরিবর্তে সদস্য দেশগুলোকে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে মোদি বলেন, "কিছু দেশ আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদকে তাদের নীতি হিসেবে বেছে নিয়েছে, তারা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। এসব দেশের সমালোচনা করতে এসসিও'র সংকোচ করা উচিত নয়।"
প্রতিবেশী পাকিস্তানের প্রতি ইঙ্গিত করেই তিনি একথা বলে মনে করা হচ্ছে। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, "সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ – এই তিন অশুভ শক্তি মোকাবিলায় এসসিও দেশগুলোকে (যৌথ) পদক্ষেপ নিতে হবে।"
চীনের প্রসিডেন্ট শি জিনপিং আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে সদস্য দেশগুলোর প্রতি "সঠিক পথ অনুসরণ করে নিজেজের মধ্যেকার আস্থা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধির' আহ্বান জানান।
আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর সেখানে তালেবান ক্ষমতা দখল করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, দেশটিতে স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়ে এসসিও নেতাদের মধ্যে ঐক্যমত্য প্রকাশ পেয়েছে।
সম্মেলন শেষে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে আফগানিস্তানের বিষয়ে এসসিও দেশগুলো কীভাবে কাজ করবে তার একটি রূপরেখা থাকতে পারে।
২০০১ সালে চীন, রাশিয়াসহ মধ্য এশিয়ার চারটি দেশ এই অঞ্চলে পশ্চিমা প্রভাব হ্রাসে এসসিও গঠন করে। এতে ভারত ও পাকিস্তান যোগ দেয় ২০১৭ সালে।
সম্মেলনে তেহরান থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। এবারের সম্মেলনেই ইরানকে নবম সদস্য হিসেবে ঘোষণা করতে পারে জোটটি। এছাড়া, বেলারুশ সদস্যপদ লাভের সমঝোতা স্মারকে সই করবে আজ, যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে স্থায়ী সদস্যপদ পাবে।
পশ্চিমা বিশ্বের সাথে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি যখন হচ্ছে, তখন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ইউরোপ ও এশিয়া – উভয় মহাদেশেই সদস্য সংখ্যা বাড়াতে চায় মস্কো ও বেইজিং।
সৌদি আরবেরও এসসিও'তে যোগদানের আলোচনা চলছে।