ওয়ার্ক ফ্রম হোম: বিশ্বের প্রধান ৯ শহরে অফিস ভবনের বাজারমূল্য কমবে ৮০০ বিলিয়ন ডলার
করোনা মহামারি বিশ্বের অনেক রীতিই পাল্টে দিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে করোনার প্রকোপের সময়টায় যাদের পক্ষে সম্ভব তারা বাসা থেকেই কাজ করতে শুরু করে। এভাবে কাজ করার কেতাবি নাম 'হোম অফিস,' 'ওয়ার্কিং ফ্রম হোম' বা 'রিমোট জব'।
করোনার পরেও এই প্রবণতা চলছে। নিয়মিত অফিসে আসা কর্মীর সংখ্যা কমেছে। এতে বাণিজ্যিক যেসব ভবনে অফিস কার্যক্রম চলতো সেগুলোর ভাড়াও কমে এসেছে।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অফিস খালি থাকার কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর অফিস ভবনের মূল্য কমবে ৮০০ বিলিয়ন ডলার।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) প্রকাশিত ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করোনা পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় কর্মীদের অফিসে উপস্থিতি কমেছে ৩০ শতাংশ। মাত্র ৩৭ শতাংশ কর্মী বর্তমানে নিয়মিত অফিসে যাচ্ছেন।
মহামারির কারণে কাজের অভ্যাস পরিবর্তন যে আসলে ক্রমবর্ধমান সুদহারের চাপে থাকা নির্মাণ খাতকে আরো বেশি প্রভাবিত করছে- তা তুলে ধরেছে এই গবেষণা।
এইচএসবিসি ব্যাংক তার বিশ্বব্যাপী সদর দপ্তরগুলো অর্ধেক আয়তনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। লন্ডনে ক্যানারি ওয়ার্ফ বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের বিশাল ভবন ছেড়ে দিয়ে সিটি সেন্টারের কাছে ছোট একটি ভবনে অফিস স্থানান্তরিত করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ম্যাককিনসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের প্রধান প্রধান শহরগুলোর নির্মাণ খাত যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এসব শহরকে ইতোমধ্যে আবাসিক ও ট্রানজিট সংকটসহ নানা চাপ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
গবেষণায় ম্যাককিনসে বিশ্বের মোট ৯টি বৃহৎ শহরের বর্তমান চিত্র লক্ষ্য করেছে। শহরগুলো হলো- বেইজিং, হিউস্টন, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, প্যারিস, মিউনিখ, সান ফ্রান্সিসকো, সাংহাই ও টোকিও।
এই শহরগুলোর অফিস ভবনের বাজারমূল্য কমতে পারে ৮০০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ২০১৯ সালের বাজারমূল্যের থেকেও ২৬ শতাংশ হ্রাস পাবে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে, অফিসের স্থানের দাম ৪২ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ম্যাককিনসে জানায়, ক্রমবর্ধমান সুদের হার অব্যাহত থাকলে অফিস ভবনের দামে আরো শক্তিশালী প্রভাব পড়তে পারে। একইভাবে সমস্যাগ্রস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মালিকানাধীন সম্পত্তির দাম দ্রুত কমিয়ে আনলেও বড় প্রভাব পড়বে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসব বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেটের দাম কমতে থাকলে এমন ব্যাংকগুলো লোকসানে পড়বে যেগুলো নির্মাণ খাতে অর্থায়ন করে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাণ খাত বেশি ঋণ পায় ছোট ও মাঝারি পর্যায়ের ব্যাংক থেকে। আর দেশটিতে ঋণের শর্ত এমনিতেও কঠোর করা হয়েছে।
অফিসের জায়গার চাহিদা কমে যাওয়ায় বাড়িওয়ালারা ভাড়া কম চাইছেন। মার্কিন শহরগুলোতে এক্ষেত্রে বড় পতন দেখা গেছে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নেওয়ার পর, সান ফ্রান্সিসকো এবং নিউ ইয়র্কে ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর ভাড়া কমেছে যথাক্রমে ২৮ ও ২২ শতাংশ।
যেসব শহরে এখনো বড় পতন হয়নি সেখানেও অফিস স্পেসের চাহিদা ২০১৯ সালে তুলনায় ২০৩০ সাল নাগাদ ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
শহর ছেড়ে চলে যাওয়া লোকজনের শহরের ফেরার প্রবণতা এখন প্রাক-মহামারি পর্যায় থেকে কম। ম্যাককিনসে জানায়, যারা শহর ছেড়ে গেছে তাদের মধ্যে কম লোকই ফিরে আসবে।
শহরাঞ্চলে দোকানের কাছে পথচারীদের সংখ্যা মহামারির আগের তুলনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমেছে। তার পেছনে অনলাইন শপিংয়েরও অবদান আছে।
ম্যাককিনসে জানায়, শহরগুলো এখন নতুন কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। একই সাথে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায় বা অফিস স্পেস কমিয়ে বর্তমান অবস্থার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে।
গত মাসে ব্লুমবার্গের টেকনোলজি সামিটে একটি সাক্ষাৎকারে ওয়েস্টফিল্ড মলসহ পরিত্যক্ত স্থাপনাগুলো ভেঙে শহরের কেন্দ্রস্থলকে পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব করেছিলেন সান ফ্রান্সিসকোর মেয়র লন্ডন ব্রীড। এসবের স্থলে পরীক্ষাগার বা ফুটবল স্টেডিয়াম তৈরির প্রস্তাব দেন তিনি।