ভারত ও ভুটানে বেড়েছে বাঘের সংখ্যা
ভারত ও ভুটানে বাঘের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি দেশ দুটিতে পরিচালিত পৃথক জরিপের প্রকাশিত রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর বিবিসির।
ভারতের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশটিতে বর্তমানে মোট বাঘ রয়েছে ৩,৬৮২ টি। সারা বিশ্বব্যাপী বাঘের সংখ্যা হিসেবে যা শতকরা ৭৫ ভাগ।
অন্যদিকে বর্তমানে ভুটানে বাঘের সংখ্যা মোট ১৩১ টি। দেশটিতে ২০১৫ সালে করা পূর্ববর্তী বাঘের জরিপের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় ২৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মূলত গতকাল (২৯ জুলাই) বাঘ দিবস উপলক্ষে ভারত ও ভুটানের পক্ষ থেকে নতুন এ জরিপটি প্রকাশ করা হয়।
ভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশটিতে বছরে শতকরা ৬ ভাগ হারে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাস্তবিক অর্থেই প্রাণীটি সংরক্ষণে ভারত দীর্ঘ সময় ধরে চলমান যে প্রচেষ্টা, সেটি বেশ সফলতার পরিচয় দিচ্ছে।
কেননা ১৯৭০ এর দশকে ভারতে ব্যাপকভাবে শিকার বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বন্য প্রাণীর বাসস্থানের সংকটের কারণে বাঘের সংখ্যা কমতে থাকে। সরকারি হিসেবে দেশটিতে তখন বাঘের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছিল প্রায় দুই হাজার।
এ বিষয়ে ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব বলেন, "বাঘ সংরক্ষণে আমাদের প্রচেষ্টা ও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিকে শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে কিংবা অনুকরণীয় বলে বিচার করা যাবে না। বরং দেশ হিসেবে এটি আমাদের সংকল্প ও প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।"
অন্যদিকে হিমালয়ের ছোট দেশ ভুটানেও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ডের (ডব্লিওডব্লিওএফ) ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমি রিনজিন বলেন, "বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। একইসাথে এটি একটি অত্যন্ত অনুকূল বাস্তুতন্ত্রের নির্দেশক।"
এছাড়াও জরিপে ভুটানে ভূ-প্রাকৃতিকভাবে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে বাঘের বংশবৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এতে করে দেশটিতে শুধু সার্বিকভাবেই নয় বরং অঞ্চলভিত্তিক বাঘের সংখ্যা পুনরুদ্ধারেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যুগুলোর জন্য বৈশ্বিকভাবেই নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে কিংবা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এমতবস্থায় ভুটান ও ভারতে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিকে সকলেই স্বাগত জানিয়েছেন।
শিকারি প্রাণী হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে জটিল বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার্থে বাঘ বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তবে পরিবেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ প্রাণীটির সংখ্যা বৈশ্বিকভাবে ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
ডব্লিওডব্লিওএফ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত শতকের তুলনায় চলতি শতকে বৈশ্বিকভাবে বাঘের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৯৫ ভাগ। এক্ষেত্রে বাঘের বাসন্থান দখল করে মানব বসতি তৈরি ও বেআইনিভাবে বন্যপ্রাণীর ব্যবসা মুখ্য কারণ।
তবে বাঘ সংরক্ষণে ব্যতিক্রম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত ও ভুটান। গত দশকের তুলনায় দেশ দুটিতে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দিগুণ।
তবে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে একটা ঝুঁকিও রয়েছে। যে সকল অঞ্চলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে গড়ে ওঠা মানব বসতির ওপর বাঘের আক্রমণের শঙ্কা রয়েছে।
ভারতে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলজুড়েই যেহেতু বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে খাদ্য কিংবা বাসস্থানের জন্য প্রাণীগুলো সংরক্ষিত এলাকার বাইরে চলে আসার ঝুঁকি রয়েছে। এতে করে আশেপাশের গ্রামবাসীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
ভারতে সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশটিতে প্রায় ১০০ এরও বেশি মানুষ বাঘের আক্রমণে মৃত্যুবরণ করেছেন। ভুটানের ক্ষেত্রেও তৈরি হয়েছে একই সমস্যা।
এ বিষয়ে ভুটানের ন্যাশনাল টাইগার সার্ভে রিপোর্ট ও ডব্লিওডব্লিওএফ এর পক্ষ থেকে বলা হয়, "বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে মানুষের সাথে প্রাণীটির দ্বন্দ্ব আরও বেড়েই চলবে। এতে করে স্থানীয় মানুষ ও বাঘ উভয়েরই জন্য তা হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।"
ডব্লিওডব্লিওএফের টাইগার প্রিজারভেশন ইনিশিয়েটিভের প্রধান স্টুয়ার্ট চ্যাপম্যানও মনে করেন, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টিতে ইতিবাচকতার সাথে সাথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জেরও তৈরি করবে।
স্টুয়ার্ট চ্যাপম্যান বলেন, "বাঘ এবং মানুষের মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিতে ভুটানের সামনে 'বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন' হওয়ার পুরোপুরি সুযোগ রয়েছে।"