সিনেড ও'কনরের মুসলিম পরিচয় অনুপস্থিত পশ্চিমা মিডিয়ায়
গত ২৬ জুলাই জনপ্রিয় পপ সঙ্গীতশিল্পী সিনেড ও'কনরের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে তার পরিবার। এ খবরে পপ সঙ্গীত জগতে নেমে আসে শোকের ছায়া। সঙ্গীত অনুরাগী ও ভক্তরা ও'কনরকে স্মরণ করছেন শ্রদ্ধার সঙ্গে। তবে কিছু মুসলিম ভক্তদের মতে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত শোকবার্তায় (অবিচুয়ারি) আইরিশ এই গায়িকার ধর্ম পরিচয়কে তুলে ধরা হয়নি।
নব্বইয়ের দশকে সাড়া জাগানো 'নাথিং কম্পেয়ার্স টু ইউ' খ্যাত পপ সংগীত তারকা সিনেড ও'কনর ২০১৮ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
কিন্তু তার মৃত্যুর ঘোষণার পর থেকে মুসলিম ভক্তরা বলছেন, পপ তারকার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়টি অনুপ্রেরণাদায়ক হলেও কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তার এই ধর্মীয় বিশ্বাসকে উপস্থাপন করা হচ্ছে না।
ইসলামগ্রহণ নিয়ে ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর ও'কনর এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, "আমি একজন মুসলিমে রূপান্তরিত হয়ে গর্বিত, সেটি ঘোষণার জন্যই এই বার্তা। ধর্মে বিশ্বাস করে এমন যেকোনো বুদ্ধিমান লোকের যাত্রার এটিই স্বাভাবিক উপসংহার। সমস্ত ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন ইসলামের দিকেই যায়। যা অন্যান্য সব ধর্মগ্রন্থকে অপ্রয়োজনীয় করে তোলে।"
একই সময়ে, ও'কনর মাথায় হিজাব পেঁচিয়ে নিজের একটি সেলফি পোস্ট করার পাশপাশি আজান দেওয়ার একটি ভিডিও আপলোড করেছিলেন।
ধর্ম পরিবর্তনের পর নিজের নাম পাল্টে রাখেছিলেন শুহাদা সাদাকাত। যদিও পরবর্তীতে সঙ্গীত অঙ্গনে তিনি ও'কনর নামেই পরিচিত ছিলেন।
একজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী লিখেছেন, ও'কনরের হিজাব ছাড়া ছবি প্রকাশের ঘটনাটিতে বোঝা যায়, নিউজরুমগুলোতে স্পষ্টতই মুসলিম সাংবাদিকের অভাব রয়েছে।
মার্কিন-ভিত্তিক এক লেখক শোক প্রকাশ করে বলেন, এভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে ও'কনরের পরিচয়ের সম্পূর্ণটাই 'মুছে ফেলা' হয়েছে।
অনেকের মতেই ও'কনর ছিলেন বিশ্বব্যাপী নিরঙ্কুশ মুসলিমদের জন্য অনুপ্রেরণা।
২০০০ সালে এক সাক্ষাৎকারে জানা যায়, ও'কনর ছিলেন সমকামী। যদিও তিনি তার জীবদ্দশায় কয়েকজন পুরুষকে বিয়ে করেছেন। পরে অবশ্য এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, যৌনতার ব্যাপারে তিনি কোনো 'লেবেল'-এ বিশ্বাস করেন না।
ও'কনরের ধর্মান্তরিত হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন অনেকেই; আবার অনেকেই তার মৃত্যুর পর তার মুসলিম পরিচয় সম্পর্কে জানতে পেরেও অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সোচ্চারকারী হিসেবে এবং সংগীত জগতে নারীদের আলাদা এক অবস্থান তৈরিতে ও'কনরের অবদান অনস্বীকার্য। শুধু সঙ্গীতের মাধ্যমেই নয় বরং ধর্ম, যৌনতা, নারীবাদ, নিপীড়ন-নির্যাতন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং যুদ্ধ সম্পর্কে স্পষ্টবাদী মতামতের জন্যও তিনি সুপরিচিত। এমনকি, ক্যাথলিক নানা নিয়মের সমালোচনা করেও নিজের দেশে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত হয়েছেন এই গায়িকা।
২০১৪ সালে, তিনি ইসরায়েলে গিয়ে গান গাইতে অস্বীকৃতি জানান।
আইরিশ মিউজিক ম্যাগাজিন হট প্রেসকে তিনি বলেছিলেন, "শুধু মানবিক দিক থেকে বললেও আমিসহ যেকোনো বিবেকবান ব্যক্তি ফিলিস্তিনের দুর্দশার প্রতি সহানুভূতি দেখাবেন। পৃথিবীতে এমন কোনো বিচক্ষণ লোক নেই যিনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যা করছে, তা কোনোভাবে সমর্থনের যোগ্য বলে মনে করেন।"
১৯৯২ সালে টেলিভিশনে 'স্যাটারডে নাইট লাইভ' শোতে ও'কনর দ্বিতীয় পোপ জন পলের একটি ছবি ছিঁড়ে ফেলেও বিতর্কিত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় তিনি বলেছিলেন, "প্রকৃত শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করুন।" ক্যাথলিক চার্চে শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে তিনি এ কথা বলেছিলেন।