যুক্তরাষ্ট্রে বৈষম্য ও দুর্ব্যবহারের হাত থেকে বাঁচতে আশ্রয় চান ট্রাভিস কিং: উত্তর কোরিয়া
মার্কিন সেনাবাহিনীতে 'অমানবিক আচরণ ও জাতিগত বৈষম্যের' শিকার হয়ে মার্কিন সেনা ট্রাভিস কিং উত্তর কোরিয়ায় পালিয়ে এসেছেন বলে বুধবার জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
গত ১৮ জুলাই দক্ষিণ কোরিয়া থেকে একটি গাইড ট্যুরে থাকার সময় সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর কোরিয়ায় অনুপ্রবেশ করলে পিয়ংইয়ং কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে। ট্রাভিস কিংয়ের বিষয়ে এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিল উত্তর কোরিয়া।
এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের বিশ্বাস ট্রাভিস কিং স্বেচ্ছায় সীমান্ত পার হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত দেশটি তাকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে চিহ্নিত করেনি।
সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানায়, উত্তর কোরিয়ার তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে ট্রাভিস কিং স্বেচ্ছায় ও অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়েছেন। তিনি উত্তর কোরিয়া বা অন্য কোনো দেশে থাকতে চান।
কেসিএনএ জানায়, "তদন্তে ট্রাভিস কিং স্বীকার করেছেন যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তর কোরিয়ায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ মার্কিন সেনাবাহিনীতে তার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হতো এবং বর্ণবৈষম্যের শিকার হওয়ার ফলে তাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন তিনি।"
সংবাদ সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, "তিনি (ট্রাভিস) উত্তর কোরিয়া অথবা তৃতীয় কোনো দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এই বলে যে, অসম আমেরিকান সমাজের প্রতি তিনি হতাশ।"
ট্রাভিসকে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে বলে জানায় কেসিএনএ।
চলতি মাসে ট্রাভিসের আংকেল মায়রন গেটস এবিসি নিউজকে বলেছিলেন, তার ভাতিজা একজন কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় সামরিক বাহিনীতে মোতায়েনের ক্ষেত্রে বর্ণবাদী বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তিনি এও জানান যে, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কারাগারে কিছুদিন কাটানোর পর তার মধ্যে পরিবর্তন আসে।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, উত্তর কোরিয়া এখনও তাদেরকে ট্রাভিসের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য দেয়নি। পেন্টাগন জানিয়েছে, তারা কেসিএনএ'তে প্রকাশিত ট্রাভিসের মন্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি, তবে তারা এখনো ট্রাভিসের নিরাপদে ফিরে আসার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
এদিকে ছেলের নিরাপদে ফিরে আসা নিয়ে উদ্বিগ্ন ট্রাভিস কিংয়ের মা। ট্রাভিসের পরিবারের একজন মুখপাত্র জানান, এই মার্কিন সেনার মা উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ট্রাভিসের সঙ্গে যেন মানবিক আচরণ করা হয়।
মুখপাত্র জোনাথন ফ্রাংকস আরও জানান, ট্রাভিসের মা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তাকে ফিরিয়ে আনার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে বলে সেনাবাহিনীর বিবৃতি দেওয়ায় এর প্রশংসা করেছেন।
তবে হোয়াইট হাউজের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ট্রাভিস সীমান্তের যেই এলাকা পেরিয়ে এসেছিলেন, ওই গ্রামের তত্ত্বাবধানে থাকা জাতিসংঘ কমান্ড-এর একজন মুখপাত্র বলেন, আগের বিবৃতির চেয়ে ভিন্ন আর কিছু তার এখন বলার নেই।
"ট্রাভিস কিংয়ের উত্তর কোরিয়া বা তৃতীয় কোন দেশে আশ্রয় নেওয়ার ইচ্ছা থেকে মনে হচ্ছে, তিনি কোথায় যেতে চান তা এখনও স্পষ্ট নয়," বলেন সিউলের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজ- এর অধ্যাপক ইয়াং মু-জিন।
উত্তর কোরিয়ার একজন প্রাক্তন কূটনীতিক এবং বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার একজন আইনপ্রণেতা তাই ইয়ং-হো বলেন, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ট্রাভিসকে স্বেচ্ছায় দেশত্যাগকারীর পরিবর্তে 'অবৈধ অনুপ্রবেশকারী' বলে আখ্যা দেওয়া এবং তৃতীয় কোনো দেশের উল্লেখ থেকে বোঝা যায়, উত্তর কোরিয়াও তাকে বেশিদিন এখানে ধরে রাখবে না।"
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, "এ থেকে ধারণা করা যায় যে উত্তর কোরিয়া তাকে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠিয়ে দিবে যেন সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ট্রাভিসকে তুলে নিয়ে বাড়ি পাঠাতে পারে- যদি তিনি যেতে চান।"
ট্রাভিস কিং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি কোরিয়ান রোটেশনাল ফোর্সে (দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কার্যক্রমের অংশ) একজন ক্যাভালরি স্কাউট (শত্রুপক্ষের অবস্থান, গতিবিধি, গোলাবারুদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে যারা) ছিলেন। তিনি প্রাইভেট সেকেন্ড ক্লাস পদমর্যাদার একজন মার্কিন সেনা সদস্য। ট্রাভিস কিংয়ের পরিবার উইজকনসিনের রেসিনে বসবাস করে।
সীমান্ত অতিক্রম করার আগে হামলার অভিযোগে দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই মাস আটক ছিলেন ট্রাভিস কিং। গত ১০ জুলাই তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু কোনোভাবে তিনি কোনোভাবে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে জয়েন্ট সিকিউরিটি এরিয়ায় (জেএসএ) সীমান্ত সফরে যোগ দেন এবং ওই সফরের সময়ই সীমান্ত অতিক্রম করেন তিনি।