গাঁজার ব্যবহার বৈধ করার পক্ষে জার্মানির মন্ত্রিসভায় বিল পাস
গাঁজার বিনোদনমূলক ব্যবহার ও গাঁজা চাষ বৈধ করার জন্য বুধবার (১৬ আগস্ট) একটি বিতর্কিত বিল পাস করেছে জার্মানির মন্ত্রিসভা। বিলটি আইন হিসেবে পাস হলে এটিই হবে ইউরোপের মধ্যে গাঁজার বিষয়ে সবচেয়ে উদার আইন যা সারাবিশ্বে একই ধরনের ট্রেন্ড তৈরির ক্ষেত্রে গতিপ্রদান করতে পারে।
এ আইনটি সংসদে পাস হলে, আইন অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্করা ২৫ গ্রাম পর্যন্ত গাঁজা নিজেদের কাছে রাখতে পারবে এবং সর্বোচ্চ তিনটি গাছ লাগাতে পারবে; কিংবা অলাভজনক 'ক্যানাবিস ক্লাব' বা গাঁজা ক্লাবের অংশ হিসেবে গাঁজা সংগ্রহ করতে পারবে।
চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের মধ্যবামপন্থী সরকার আশা করছে যে, এই আইন পাশ হলে তা কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনবে এবং দূষিত গাঁজা সেবন থেকে ভোক্তাদের সুরক্ষা দেবে এবং এই মাদক সম্পর্কিত অপরাধ কমিয়ে আনবে।
এ পরিকল্পনার প্রধান একটি উদ্দেশ্য হলো গাঁজা ব্যবহার সম্পর্কে যে ট্যাবু রয়েছে সমাজে তা দূর করা। একইসঙ্গে এটি মাত্রাতিরিক্ত গাঁজা সেবনের ঝুঁকি সম্পর্কে জনসাধারণতে সচেতন করতে একটি ক্যাম্পেইন হিসেবেও ব্যবহৃত হবে- যা আসলে গাঁজা গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে আনবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লটারবাখ।
তার ভাষ্যে, যদি আইনে পরিবর্তন না এনে এ ধরনের ক্যাম্পেইন চালানো হতো তাহলে তা অত বেশি লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো না।
বার্লিনে এই আইন উত্থাপন করে তিনি বলেন, "বর্তমানে যেসব ব্যবস্থা বিদ্যমান, তার মাধ্যমে আমরা শিশুদের এবং তরুণদের সত্যিকার সুরক্ষা দিতে পারছি না, এ বিষয়টি এখন একটা ট্যাবু হিসেবে দেখা হয়।"
আমাদের দেশের মানুষের গাঁজা সেবনের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে, আমরা এটা চলতে দিতে পারি না। তাই আমাদের মাদক নীতিতে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট", যোগ করেন লাউতারবাখ।
জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা জীবনে একবার হলেও গাঁজা সেবন করেছে, তাদের সংখ্যা ২০২১ সালে দ্বিগুণ হয়েছে এর আগের দশকের তুলনায়।
প্রাপ্তবয়স্ক তরুণরা গাঁজা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করা হয়। নতুন এ আইন পাস হলে তা প্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের সীমিত পরিমাণে গাঁজা কেনার অনুমোদন দিবে। তারা মাসে ৩০ গ্রামের মতো গাঁজা কিনতে পারবে এবং বয়স্করা মাসে ৫০ গ্রাম গাঁজা কিনতে পারবেন।
উভয় দিক থেকে সমালোচনা
এদিকে জার্মানির রক্ষণশীল নীতিনির্ধারকরা নতুন এ আইনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তারা এই বলে সতর্ক করেছেন যে, নতুন আইন পাস হলে এটি তরুণদের গাঁজা সেবনে আরও উদ্বুদ্ধ করে তুলবে এবং কর্তৃপক্ষের কাজ আরও বাড়িয়ে দিবে।
জার্মানির স্যাক্সোনি রাজ্যের রক্ষণশীল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরমিন শুসটার আরএনডি মিডিয়া গ্রুপকে বলেন, "এই আইন পাস হলে আমরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারাবো।"
জাতিসংঘের একটি মাদকদ্রব্য ওয়াচডগ সংস্থা গত মার্চে জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশের সরকার বিনোদনমূলক গাঁজার ব্যবহার বৈধ করার ফলে গাঁজার ব্যবহার এবং গাঁজা-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে।
তবে লটারবাখ বলেন, জার্মানি অন্যান্য দেশের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে।
ব্রাসেলসের সাথে পরামর্শের পর লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানে ব্যাপক হারে গাঁজা বিক্রির অনুমতি দেওয়ার মূল পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই বাতিল করে দিয়েছে শলৎসের সরকার।
এর বদলে তারা একটি পাইলট প্রজেক্ট শুরু করবে। গাঁজার বিনোদনমূলক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক সাপ্লাই চেইন তৈরি করলে এর কী প্রভাব পড়ে, তা বুঝার জন্য জার্মানির কিছু অঞ্চলে অল্প কিছু লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানে গাঁজা বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হবে এই প্রকল্পের আওতায়। কিন্তু তার জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও একটি আলাদা আইন উত্থাপন করতে হবে।
বর্তমানে এ ধরনের কিছু প্রকল্প নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ডে আছে বা পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছে।
ইউরোপের অনেক দেশই ইতোমধ্যে ওষুধ হিসেবে সীমিত পরিমাণে গাঁজার ব্যবহার বৈধ করেছে, জার্মানিতেও তা ২০১৭ সাল থেকে বৈধ। অন্যরা আবার গাঁজার সাধারণ ব্যবহার অপরাধযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে।
২০২১ সালের শেষদিকে ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে মাল্টা সীমিত আকারে গাঁজার চাষ এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নিজের কাছে গাঁজা রাখা বৈধ করে। আইন পাস হলে জার্মানিই হবে ইউরোপের প্রধান দেশগুলোর মধ্যে প্রথম, যারা এ ধরনের পদক্ষেপ নেবে।
বুধবার উত্থাপিত আইনে অবশ্য গাঁজা চাষের জন্য কঠোর বিধিমালা উল্লেখ করা হয়েছে। পাঁচশোর বেশি সদস্য রয়েছে এমন 'ক্যানাবিস ক্লাব'গুলোতে অবশ্যই এমন দরজা-জানালা থাকতে হবে যেখান দিয়ে চোর-ডাকাত প্রবেশ করতে পারবে না। সদস্যরা ক্লাবের ভেতরে বা স্কুল, নার্সারি, প্লেগ্রাউন্ড বা খেলার মাঠে গাঁজা সেবন করতে পারবেন না।
জার্মানির হেম্প অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, নিয়মগুলো 'অবাস্তব' এবং শুধুমাত্র সাধারণ দোকানে গাঁজা বিক্রির মাধ্যমেই কালোবাজারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।