এফ-১৬ যুদ্ধবিমান যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের জন্য কতটা বদল আনতে পারবে?
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে।
পাইলটদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরই মার্কিন মিত্র ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ড থেকে এফ-১৬ বিমান ইউক্রেনে পাঠানো হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আকাশে এগিয়ে থাকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ইউক্রেন আরও আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দাবি করছিল।
পাইলটদের প্রশিক্ষণ শেষ হলে ইউক্রেনে এফ-১৬ স্থানান্তরের অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত অনুমোদন করবে বলে ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডকে নিশ্চিত করেছে ওয়াশিংটন।
এ মাসের শেষদিকে ডেনমার্কে ১১টি দেশ যৌথভাবে ইউক্রেনীয় পাইলটদের এফ-১৬ চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করবে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন ড্যানিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জ্যাকব এলম্যান জেনেসেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক এ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনের আকাশে কতটা সফল হবে তা বিশ্লেষণ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী?
এ যুদ্ধবিমানের পুরো নাম এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন। তুলনামূলক হালকা ভরের এ জেট ফাইটারটির প্রাথমিক নকশা করা হয় ১৯৭০-এর দশকে।
এরপর ১৯৭৯ সালে সার্ভিসে আসে এটি। মার্কিন বিমানবাহিনী ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধে ব্যাপকভাবে এফ-১৬ ব্যবহার করেছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড ও নরওয়ের সঙ্গে যৌথভাবে বিমানটি তৈরি করেছিল। শব্দের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে উড়তে সক্ষম এ বিমান দ্রুতই সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামরিক বিমানগুলোর একটিতে পরিণত হয়।
এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীতে বহাল তবিয়তে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে ফাইটিং ফ্যালকন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিমানটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২৫টি দেশে তিন হাজারের বেশি এফ-১৬ সক্রিয় রয়েছে।
বর্তমানে অবশ্য এর চেয়ে আরও অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এখনো রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রে নির্মাণ করা হচ্ছে। কারণ অন্য যুদ্ধবিমানের তুলনায় এটির দাম কিছুটা কম এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই এটির চেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলো রপ্তানি করার অনুমতি দেয় না।
ইউক্রেন কেন এফ-১৬ চায়?
যুদ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেনের কাছে সোভিয়েত যুগের বিমানসমৃদ্ধ ছোট একটি বিমানবাহিনী ছিল। তখন যুদ্ধ করার জন্য দেশটির কাছে সবমিলিয়ে ১২০টির মতো বিমান ছিল।
যুদ্ধের পর এ সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে। তবে ইউক্রেনের তুলনায় রাশিয়ার বিমানবাহিনী অনেক শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও ইউক্রেনের এখনো কিছুটা বিমানসক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে দেশটিকে এর বিমানবাহিনীর হারানো বিমান ও পাইলটের ঘাটতি মেটাতে হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সার্বিকভাবে বিমানশক্তির খুব বেশি ব্যবহার হয়নি। রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষার কাছে কাবু হয়েছে ইউক্রেন। তবে মস্কোও ফ্রন্টলাইনের বাইরে এর বিমান পাঠায়নি। কারণ রাশিয়াও এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অল্পতেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে।
তারপরও কিয়েভের আশা, দ্রুতগামী কিছু আধুনিক যুদ্ধবিমানের কয়েকটি স্কোয়াড্রন থাকলে এটি যুদ্ধে নতুন কিছু অর্জন করতে পারবে বা নিদেনপক্ষে রাশিয়ার বিমানহামলা ঠেকাতে পারবে।
যুদ্ধক্ষেত্রে কি প্রত্যাশিত পরিবর্তন আনতে পারবে এফ-১৬?
এ প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইউক্রেন মোট কতগুলো এফ-১৬ পাবে তার সংখ্যাও। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী একেবারে ২০০টি ফাইটিং ফ্যালকন চেয়ে বসেছে। কিন্তু সর্বোচ্চ উদারমনা হয়েও পশ্চিমাবিশ্ব প্রথমবারেই এতগুলো এফ-১৬ হয়তো ইউক্রেনকে দেবে না।
রুসি থিংকট্যাংক-এর বিমানশক্তি বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রংক মনে করেন, রাশিয়ার শক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে এফ-১৬-এর মতো যুদ্ধবিমানের পক্ষে শত্রুর অবস্থানে গোলাবর্ষণের মতো চিরায়ত এয়ার সাপোর্ট দেওয়া কঠিন হবে।
কারণ, রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রাডার এড়ানোর জন্য এফ-১৬কে ভূমির অনেক কাছ দিয়ে উড়তে হবে। ফলে এফ-১৬-এর আধুনিক রাডার ও অস্ত্র সর্বোচ্চ কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে না ইউক্রেন।
সম্প্রতি এক টুইটে ব্রংক লেখেন, 'পশ্চিমাদেশের স্ট্যান্ড-অফ মিসাইলসৃমদ্ধ যুদ্ধবিমানগুলো নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে স্থির রাশিয়ান লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করতে পারবে।' যেসব মিসাইল বা অস্ত্র লক্ষ্যবস্তুর কাছে না গিয়ে দূর থেকেই নিক্ষেপ করা যায়, সেগুলোকে স্ট্যান্ড-অফ অস্ত্র বলা হয়।
তবে ব্রংক সতর্ক করে দিয়ে আরও লেখেন, এ ধরনের হামলার জন্য ইউক্রেনের কাছে হিমার্স-এর মতো অস্ত্র ইতোমধ্যে রয়েছে। আর এসব বিমান ও অস্ত্রের সরবরাহ কিন্তু সীমিত।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, সরবরাহ করার পর ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব রাখতে পারবে না এফ-১৬। বরং এ গ্রীষ্মে ইউক্রেন যেসব কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল, সেগুলোয় কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারে বিমানগুলো।
তবে এফ-১৬ ব্যবহার করে ইউক্রেন আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য এবং জাহাজবিধ্বংসী পশ্চিমা বিভিন্ন ধরনের মিসাইল নিক্ষেপ করতে পারবে বলে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এছাড়া এসব যুদ্ধবিমান রাশিয়ার ক্রুজ মিসাইল ও ড্রোন প্রতিহত করতে ইউক্রেনের সক্ষমতা বাড়াতে পারে।