থাইল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী কে হচ্ছেন? থাকসিনের মেয়ে, ব্যাংকার নাকি খোদ প্রধানমন্ত্রী?
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ থাইল্যান্ডের পরবর্তী অর্থমন্ত্রী কে হচ্ছে তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। এই পদের জন্য দেশটির প্রভাশালী সিনাওয়াত্রা বংশের এক সদস্য, সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং দুই শীর্ষ ব্যাংকারের নাম উঠে আসছে।
বিশ্লেষক ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার কন্যা পাতোংটার্ন সিনাওয়াত্রা, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিত্তিরাত রা-রানং, এসসিবি এক্স পিসিএলের প্রধান নির্বাহী আর্থিদ নান্থাউইথায়া এবং রাষ্ট্র-চালিত ক্রুং থাই ব্যাংক পিসিএলের প্রধান পেয়ং শ্রীওয়ানিচ।
আবার তাদের মধ্যে কেউই দায়িত্ব পাবেন না এমন সম্ভাবনার কথাও শুনা যাচ্ছে। থাই-ভাষার সংবাদপত্র 'ক্রুংথেপ তুরাকিট' এর অনুমান, প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিন নিজেই হয়তো অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেবেন। কারণ তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু নীতিমালা দ্রুত অনুমোদন প্রয়োজন।
শ্রেথা চলতি সপ্তাহে এক বক্তব্যে বলেন, দেশ একটি জটিল সন্ধিক্ষণে রয়েছে এবং তার সরকার এমন নীতি অনুসরণ করবে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
অর্থমন্ত্রী কে হচ্ছেন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেদিকে দেশটির বড় বিনিয়োগকারীদেরও চোখ থাকবে, যারা মে মাসে নির্বাচনের আগে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর প্রধান চ্যালেঞ্জ হবেবে অক্টোবর থেকে শুরু হতে চলা অর্থবছরের বাজেট নির্ধারণ। কারণ অর্থনৈতিক মন্দা, তীব্র খরা এবং চীন থেকে নেওয়া ঋণের চাপে আছে থাইল্যান্ড।
সম্ভাব্য প্রার্থী যারা
শ্রেথা থাভিসিন: দেশটিতে কোন প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী হওয়ার নজির নেই। তবে বেসরখারি খাতে তিন দশকের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শ্রেথা হয়তো এই সুযোগ নিতে পারেন।
শ্রেথা ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্লারমন্ট গ্র্যাজুয়েট স্কুল থেকে এমবিএ করেছেন। তিনি নির্মাতা সংস্থা সানসিরি পিসিএল-এ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন। নির্বাচনের আগে এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
তিনি ফু থাই পার্টির ফ্ল্যাগশিপ 'ডিজিটাল ওয়ালেট' প্রোগ্রামসহ আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রচারের সমর্থক। ডিজিটাল ওয়ালেট প্রকল্পে থাইল্যান্ডের ১৬ বছর বয়সী এবং তারচেয়ে বড়দের ১০,০০০ বাথ (২৮৪ ডলার) বাৎসরিক প্রণোদনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তিনি সর্বনিম্ন মজুরি ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং খামার করার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কিত্তিরাত রা-রানং: ইংলাক সিনাওয়াত্রার সরকারের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী কিত্তিরাত রা-রানং আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে একজন। মন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি থাইল্যান্ডের স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে বারবার খবরে আসেন তিনি। ২০১৩ সালে, কিত্তিরাত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি সে সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর প্রসারনা ত্রিরাতভোরকুলকে বরখাস্ত করার কথা ভেবেছিলেন।
পাতোংটার্ন সিনাওয়াত্রা: প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য যোগ্য বিবেচিত হওয়ার পর ৩৭ বছর বয়সী পাতোংটার্ন সিনাওয়াত্রা হয়তো মন্ত্রী হিসেবে অভিজ্ঞতা নেওয়ার চেষ্টা করবেন। অর্থমন্ত্রীর মতো পদ থাকসিনের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে তার সঙ্গে মানানসইও।
কিন্তু থাই মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, সরকার পরিচালনায় তার অভিজ্ঞতার অভাব এবং পারিবারিক ব্যবসা পরিচালনায় সীমিত ভূমিকার বিষয়টি তার বিরুদ্ধে যেতে পারে।
শীর্ষ দুই ব্যাংকার: ৫৪ বছর বয়সী পেয়ং থাই ব্যাংকের চেয়ারম্যান। বৃহৎ রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও তিনি। একই সাথে থাই ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনেরও নেতৃত্ব দেন পেয়ং। তিনি পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন এবং প্রায়শই বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিষয়ে ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন সেমিনারে বক্তব্যও দেন।
অন্যদিকে আর্থিদ দেশের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা ব্যাংক এসসিবি এক্স এর প্রধান। যে প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার হলেন রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন। ব্যাংকিং প্রযুক্তিতে সবচেয়ে এগিয়ে প্রতিষ্ঠানটি। তার তত্ত্বাবধানে এসসিবি এক্স সক্রিয়ভাবে ফিনটেক ব্যবসার বিকাশ করছে এবং থাইল্যান্ডের বাইরে স্টার্টআপ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছে।