স্যুটকেস টানাটানির ঝামেলা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবেন জাপান এয়ারলাইনসে!
কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবো- যেকোনো জায়গায় কয়েকদিনের জন্য ঘুরতে যাবার আগে স্যুটকেসে জামাকাপড় রাখা নিয়ে এই দ্বিধায় কমবেশি সবাই ভোগেন। কিন্তু আপনি যদি জাপান এয়ারলাইনসে ভ্রমণ করেন, তাহলে এই চিন্তার ভার থেকে আপনি মুক্ত!
সম্প্রতি এই এয়ারলাইনস একটি বছরব্যাপী ট্রায়াল শুরু করেছে যেখানে ভ্রমণকারীরা দেশটিতে প্রবেশের আগেই পছন্দসই ডিজাইন এবং ঋতু অনুযায়ী এক সেট কাপড় বুক করে রাখতে পারবে। হোটেলে পৌঁছাবার পর তাদের হাতে সে কাপড় তুলে দেওয়া হবে। ঘোরাঘুরি শেষে কর্তৃপক্ষ আবার সেই কাপড় ফিরিয়ে নিবেন।
'এনি ওয়্যার, এনি হোয়্যার' শীর্ষক এই পরীক্ষামূলক পরিষেবা চলবে আগামী বছরের আগস্ট পর্যন্ত। জাপান এয়ারলাইনসের দাবি, এ উদ্যোগের ফলে তাদের বিমানের বহনকৃত ওজন কমিয়ে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস সম্ভব।
"আমি ভ্রমণ করতে পছন্দ করি এবং প্রচুর দেশ ঘুরেছি। কিন্তু লাগেজ টানা আর বিদেশ-বিঁভুইয়ে লন্ড্রির কথা ভাবলে আমার সব সময়ই আতংক হয়", বলেন মিহো মোরিয়া। তিনি সুমিতোমো নামক একটি জাপানি কোম্পানির কর্মী যারা রিজার্ভেশন, ডেলিভারি এবং কাপড়ের লন্ডারিং তদারকি করে থাকে। মিহো মোরিয়াই 'এনি ওয়্যার, এনি হোয়্যার' ধারণাটির প্রবর্তক।
তিনি বলেন, "ভ্রমণের সময় আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জিনিস হলো থাকার জায়গা, খাবার এবং পোশাক-আশাক।"
"বিদেশ ভ্রমণের সময় হোটেল এবং রেস্তোরাঁগুলো আমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। তাহলে কেন আমাদের বাড়ি থেকে পোশাক টেনে আনতে হবে?"
সব ঋতুর উপযোগী পোশাক
মিহো মোরিয়া প্রথমে তার নিজের প্রতিষ্ঠানে ধারণাটি উত্থাপন করেন। অনুমোদন পেলেও বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনা মহামারি। তাছাড়া পরিষেবাটিকে সমর্থন করবে এমন একটি এয়ারলাইন খুঁজে পেতেও ভীষণ বেগ পেতে হয়েছে।
এই সেবা গ্রহণকারীরা প্রথমে ওয়েবসাইটে লগ ইন করবে। এরপর সেখানে থাকা অপশনের মধ্য থেকে বেছে নেবে নিজেদের পছন্দের পোশাকটি- নারী নাকি পুরুষের পোশাক, কোন ঋতুর জন্য, একটু চটপটে নাকি ক্যাজুয়াল স্টাইলের, টপ কয়টি, প্যান্টের মোট সংখ্যাই বা কত, পিকআপ আর পোশাকের রিটার্ন ডেট- এমনই সব অপশন থেকে বাছাই করতে হবে নিজের জন্য।
ব্যস, পছন্দের পোশাক তাদের জন্য যথাসময়ে হোটেলে পৌঁছে যাবে। এই পুরো সময় ভাড়া করা পোশাকের জন্য খসাতে হবে ৩৪ থেকে ৪৮ ডলার।
তবে ব্যবহারকারীরা তাদের পোশাকের উৎস সম্পর্কে থাকবেন অজ্ঞাত।
জুলাইয়ের শুরু থেকে পরিষেবাটির ট্রায়াল শুরু হয়ে গেছে। মিহো মোরিয়া দাবি করছেন, ইতিমধ্যে তুমুল সাড়া পেয়েছেন তারা।
"সারা বিশ্বের ১১৫টিরও বেশি দেশ থেকে আমাদের কাছে অনুরোধ এসেছে, অথচ আমরা সেভাবে কোনো প্রচার কার্যক্রম চালাই নি।"
সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার গ্রাহকদের কাছ থেকে তারা আবেদন পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মিহো।
শেষ পর্যন্ত জাপানের এয়ারলাইনস ওজনের ভার আর নিঃসরণ কতোটা কমাতে পারলো সেটির গণনা শেষে এই ট্রায়ালের প্রকৃত প্রভাব বোঝা যাবে।
"এই সেবাটি কতখানি টেকসই তা সর্বশেষ ফলাফল জানার পরই আমরা বলতে পারবো", যোগ করেন মোরিয়া।
ভার কমানো জ্বালানি সাশ্রয় এবং কার্বন নির্গমন হ্রাসের একটি পরীক্ষিত উপায়; বিমান নির্মাতা এবং এয়ারলাইনসগুলো এ নিয়ে বিভিন্ন সময় নিরীক্ষাও চালিয়েছে যেমন, যাত্রীদের হালকা আসন ডিজাইন বা ট্যাবলেট কম্পিউটার দিয়ে কাগজের ভারি ভারি ম্যানুয়াল প্রতিস্থাপন।
খুব ছোট পরিবর্তনগুলোও এক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোয়ান্টাস এয়ারলাইনস তাদের ফার্স্ট এবং বিজনেস ক্লাস টেবিলওয়্যারের মাত্র ১১% ওজন হ্রাস করে বছরে ১.১ মিলিয়ন পাউন্ড (৫৩৫ মেট্রিক টন) জ্বালানি সাশ্রয় করতে শুরু করেছে।
টেকসই ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদ নীনা মনে করেন, এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ।
"মানুষ প্রায়ই শুধুমাত্র ছুটি কাটানো বা বিজনেস ট্রিপগুলোর উদ্দ্যেশ্যে নতুন কাপড় কিনে থাকে। এই সেবা অপ্রয়োজনীয় কাপড়ের বর্জ্য হ্রাস করবে। আবার একইসাথে এটি মজুতে থাকা অতিরিক্ত কাপড়ের পুনঃব্যবহার ঘটাবে যেগুলো সাধারণত পরা শেষে পুড়িয়ে বা ফেলে দেয়া হয়।"
"মাত্র অতিরিক্ত নয় মাস কোনো কাপড় ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন, পানীয় এবং বর্জ্য বা ওয়েস্ট ফুটপ্রিন্টের প্রতিটি ২০-৩০% কমানো সম্ভব।"
এই উদ্যোগ গ্রহণে অন্যান্য এয়ারলাইনসেরও এগিয়ে আসা উচিত বলে মত নীনার।
"২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে বিমানে ৩২.৪ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহনের অনুমান করা হচ্ছে। সার্কুলার অর্থনীতিকে সমর্থন এবং টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বের অন্যান্য এয়ারলাইনগুলোরও উচিত কাপড় ভাড়া দেওয়ার এই মডেল গ্রহণ করা", যোগ করেন তিনি।
ধারণাটির জনক মোহি মোরিয়া বৈশ্বিক এয়ারলাইনগুলোর জোট- ওয়ানওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্সের সদস্য যেমন আমেরিকান এয়ারলাইনস, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং কোয়ান্টাসের সাথে অংশীদারিত্ব প্রসারণের আশা ব্যক্ত করেছেন।
"আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো সারা বিশ্বে এই সেবা ছড়িয়ে দেওয়া", বলে ওঠেন মোহি।