পছন্দের পোশাক আমরা ঘন ঘন পরতে চাই কেন?
আমাদের সবারই নির্দিষ্ট কিছু পোশাক থাকে যেগুলো বারবার পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। নির্দিষ্ট কাজের জন্য ওয়ারড্রবে আরো ১০টি পোশাক থাকলেও কোনো একটি হয়তো আমরা পরি, ধুই এবং আবার পরি। যে জিন্স প্যান্ট সবচেয়ে ভালো ফিট হয় এবং যে টি-শার্ট একান্তই পছন্দের তা অনেক সময় কিছুটা ময়লা হলেও পরে যাই।
নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস এবং মিলান ফ্যাশন উইকে শরতের নতুন নতুন স্টাইলের পোশাক আসবে। তবে আমাদের অনেকেই হয়তো নিজের বেডরুমের চেয়ারে পড়ে থাকা জাম্পার পরেই সকালে হাঁটতে বেরিয়ে যাব। কিন্তু কেন এমনটা হয়? বিবিসির প্রতিবেদনে খোঁজা হয়েছে সেই উত্তর।
আবেগীয় স্থায়িত্ব
কিছু পোশাক কেন আমাদের কাছে অর্থপূর্ণ হয়? প্রথমত, এটি অবশ্যই বেশিদিন টেকে এমন হতে হবে, এবং যার সাথে দামের কোনো সম্পর্ক নেই। লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এক গবেষণাতেই এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, পোশাকের খুচরা দামের সাথে তা কতদিন টিকবে তার কোনো সম্পর্ক নেই। গবেষণা প্রসঙ্গে লিডস স্কুল অব ফ্যাশনের লেকচারার মার্ক সামনার বলেন, সস্তা পোশাক নিম্নমানের এবং বেশিদিন স্থায়ী হবে না; গবেষণায় এ বিষয়টিকে আমরা চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছি।
তবে পোশাকের স্থায়ীত্বই বারবার পরতে চাওয়ার কারণ নয়। একই সাথে আবেগীয় স্থায়িত্বও প্রয়োজন। সামনারের সাথে গবেষণায় কাজ করা পিএইচডি শিক্ষার্থী ক্যাট মরিস বলেন, আবেগীয় স্থায়ীত্বের বিষয়টি আমাদের পোশাকের সাথে ঘটে। পোশাক দেখতে কেমন, তার উপর নির্ভর করে যে প্রেমে পড়ি, বিষয়টি তেমন নয়। পোশাকটি আমাদের কেমন অনুভূতি জাগায় তার উপরও নির্ভর করে।
মার্ক সামনার বলেন, কেউ হয়তো পোশাকটি বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান বা উৎসবে পরেছে। অথবা পছন্দের মানুষের সাথে পোশাকটি পরে দেখা করেছে। এভাবে আবেগীয় সম্পর্ক তৈরি হয়।
আবার ঠিক তার উল্টোটাও ঘটে। সামনার তার নিজের গবেষণা দলের এক নারী সদস্যকে দিয়েই উদাহরণ দেন। সেই নারীর তার স্বামীর সাথে কিছুদিন আগেই খুব বাজেভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। ডিভোর্সের কাগজে চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষর করার পর সেই নারী বিয়ে সংশ্লিষ্ট বা স্বামীর সাথে থাকার স্মৃতি জড়িত এমন সব পোশাক জড়ো করেন এবং একটি ব্যাগে ঢুকিয়ে সেগুলো ফেলে দেন।
আবার পোশাক পরার পর মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন সেটিও বারবার পরার একটি কারণ। সামনার বলেন, আপনাকে দেখতে ভালো লাগছে কিনা এই সিদ্ধান্ত আপনি সম্পূর্ণ একা নেন না। কোনো পোশাকে আপনাকে ভালো লাগছে এটা যদি অন্য কেউ বলে তাহলে বিষয়টি আপনার আত্ম উপলব্ধিকে মজবুত করে। এমন অনেক সময় হয় যে, আপনি কোনো পোশাক কিনে পরেছেন এবং মানুষ নেতিবাচক কোনো মন্তব্য করেছে; তাহলে ওয়ারড্রবে পেছনের দিকে পোশাকটির জায়গা হয়।
পরিবেশবাদী গোষ্ঠী ডব্লিউআরএপি-এর এক জরিপে অনুমান করা হয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের ওয়ারড্রবে থাকা এক-চতুর্থাংশ পোশাক এক বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে না। আর এসব পোশাকের সমন্বিত মূল্য হতে পারে ১.৬ বিলিয়ন পাউন্ড।
গবেষক সামনার এবং মরিস বলেন, পোশাকগুলো কার্যত পরিত্যাগ করা হয়েছে। স্থায়িত্বের দৃষ্টিকোন থেকে এগুলো একধরনের চ্যালেঞ্জ। কারণ এসব পোশাক তৈরিতে ব্যয় হওয়া যাবতীয় প্রচেষ্টা, পানি, রাসায়নিক এমনকি শ্রমও অপচয় হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোন পোশাক আপনার পছন্দের হয়ে উঠবে তা অনুমান করা যদিও প্রায় অসম্ভব, তবে সে সম্ভাবনা বাড়ানো যেতে পারে পোশাক দীর্ঘদিন ব্যবহারে উপযোগী করে তৈরি করে। কারণ বেশিরভাগ সময় তখনই পোশাকের সাথে কোনো আবেগীয় সম্পর্ক তৈরি হবে যখন তা দীর্ঘদিন পরা যাবে।
সামনার বলেন, আবেগীয় সম্পর্ক তৈরি হয় সময়ের সাথে সাথে। তাই কাপড়কে টেকসই হতে হবে। ডেনিমের সাথে বিষয়টি আরো বেশি ঘটে। কারণ ডেনিমের জিন্স যত বেশি ধোয়া হয় ততবেশি মোলায়েম হয় এবং ফিটিং ও ভালো হয়। ফলে সময়ের সাথে সাথে জিন্সটির ব্যবহার আরো বাড়ে। একইভাবে, দ্রুত বদলে যাওয়া ফ্যাশনের প্রতি আকৃষ্ট হলে কোনো পোশাকের সাথে আবেগ যুক্ত না হওয়াই স্বাভাবিক।