ইসরায়েলের গাজা দখল হবে বড় ভুল: বাইডেন
চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে অনেকটা প্রকাশ্যভাবেই তেল আবিবকে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সম্প্রতি নেতানিয়াহু সরকারের গাজায় স্থলভাগ আক্রমণের সিদ্ধান্তে যেন কিছুটা সতর্কতার পরিচয় দিচ্ছে ওয়াশিংটন।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েলের গাজা দখলের যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হবে 'বড় ভুল'। সম্প্রতি সিবিএস নিউজে সাংবাদিক স্কট পেলিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন তিনি।
এদিকে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকেই গাজার সীমান্তজুড়ে বিপুল সংখ্যক ট্যাংক ও অন্যান্য ভারী যুদ্ধাস্ত্র সমবেত করেছে ইসরায়েল। তারা গাজায় বেশ বড় আকারে স্থল অভিযান শুরু করবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমতাবস্থায় বাইডেন গাজায় একটি মানবিক করিডোরের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেছেন। এতে করে চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে করিডোরটি ব্যবহার করে গাজা থেকে বাসিন্দারা বেরিয়ে আসতে পারবে। পাশাপাশি অঞ্চলটিতে খাদ্য ও পানিসহ মানবিক সহায়তা সরবরাহ করা যাবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
বাইডেন বলেন, "আমি নিশ্চিত যে, ইসরায়েল যুদ্ধের সকল নিয়ম মেনেই চলবে।"
বাইডেন মনে করেন না যে, হামাস সকল ফিলিস্তিনি নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটির সম্পূর্ণ নির্মূল দেখতে চান তিনি।
অন্যদিকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বাড়লে তাতে ইরান সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সিবিএস নিউজে কথা বলার সময় হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান লেবাননের সাথে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে একটি নতুন ফ্রন্ট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে ইরানের কথা বলেন।
সুলিভান বলেন, "আমরা ইরানের সরাসরি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিতে পারি না। আমাদের সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।"
আবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন, 'ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকানো বা হামাসের হামলার পর এই যুদ্ধকে আরও প্রসারিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা রুখতে' যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ভূমধ্যসাগরে বিমানবাহী দ্বিতীয় রণতরি বহর পাঠাচ্ছে।
ইউএসএস আইজেনহাওয়ার এবং এর অধিভুক্ত যুদ্ধজাহাজের বহর এক সপ্তাহে আগেই যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো আরেক রণতরির সঙ্গে যোগ দেবে। এক বিবৃতিতে লয়েড অস্টিন বলেন, এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের নিরাপত্তার ব্যাপারে ওয়াশিংটনের দৃঢ় অঙ্গীকারের ইঙ্গিত বহন করে।
এদিকে গত শুক্রবার গাজা শহরের ১০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে সরে যেতে বলে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এতে করে বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এরপর গত শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০ টা থেকে বেলা ৪ টা পর্যন্ত মাত্র ছয় ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে দুটি রাস্তা ব্যবহার করে গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার ফের নির্দেশনা দিয়েছে আইডিএফ।
আইডিএফের নির্দেশকৃত রাস্তাগুলো ব্যবহার করে যাতায়াত করলে বেসামরিক নাগরিকদের কোন ধরনের ক্ষতি হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছেন মুখপাত্র আদরাই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার সময় বিমান হামলায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের হামলায় গত শনিবার পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ৭০০-এর বেশি শিশু নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত ফিলিস্তিনি শিশুর সংখ্যা প্রায় ২,৪৫০ জন।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়াও ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় স্থল আক্রমণ করলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।