গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল জাজিরার সাংবাদিকের স্ত্রী-সন্তান নিহত
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলের পাল্টা বিমান হামলা যেন চলছেই। এতে ইতিমধ্যেই গাজায় হাজার-হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
তারই ধারাবাহিকতায় এবার বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছে আল জাজিরার এক সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যরা। গতকাল (বুধবার) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
মূলত গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলা করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানেই ছিল আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি ওয়ায়েল আল-দাহদুহের পরিবার। হামলায় তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিহত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটির বিবৃতিতে বলা হয়, "ইসরায়েলি বিমান হামলায় আমাদের সহকর্মী ওয়ায়েল আল-দাহদুহের পরিবারের সদস্যরা নিহত হওয়ার ঘটনায় আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আমরা আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করছি।"
আল–দাহদুহ মূলত আল–জাজিরা আরবির সাংবাদিক। তিনি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন করছেন। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, বুধবার রাতে ওই শরণার্থী শিবিরে হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে আল–দাহদুহ বলেন, "এখানে যা ঘটছে, তা একদম সুস্পষ্ট। গাজার নারী-শিশুরা ইসরায়েলের চলমান হামলার লক্ষ্যবস্তুর অংশ।"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর নির্বিচারে হামলার ফলে আল-দাহদুহের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ছিল।"
হামাসের হামলায় প্রায় ১৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল; আহত হয়েছিল প্রায় ৫ হাজার জন। একইসাথে ইসরায়েলের দাবি মোতাবেক, তাদের প্রায় ২২০ জন নাগরিককে বর্তমানে গাজায় জিম্মি করা হয়েছে।
এদিকে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬,৫০০ জন গাজাবাসী নিহত হয়েছে। এছাড়াও গত মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আল জাজিরা কর্তৃক প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজে দেখা যায়, দক্ষিণ গাজা উপত্যকার দেইর এল-বালাহ নামের একটি হাসপাতালে আল-দাহদুহ নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের মরদেহের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কিছুদিন আগেই বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা বলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আল জাজিরার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঐ নির্দেশনার পরেই পরিবারটি নিজ বাড়ি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র একটি অস্থায়ী বাড়িতে অবস্থান করছিল। কেননা ততদিনে উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা জোরদার করেছে।
আল-জাজিরাকে আল-দাহদুহ বলেন, "দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী এটিকে 'সেফ জোন' বলে অভিহিত করেছিল।"
আল জাজিরার পক্ষ থেকে বলা হয়, গাজার কেন্দ্রস্থলে নুসেইরাত ক্যাম্পে আল-দাহদুহের পরিবারের আশ্রয় নেওয়া বাড়িটি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। অথচ আশেপাশে বোমা হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়ে সেখানে পরিবারটি আশ্রয় নিয়েছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, "আল জাজিরা গাজায় নিজেদের সহকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আর এই অনিরাপদ পরিস্থিতির জন্য দায়ী ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।"
এদিকে ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজায় ২ হাজারের বেশি শিশু মারা গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া শিশুদের এই সংখ্যাকে 'বিস্ময়কর' বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।
আর গত মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, "গাজায় আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের যে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমি স্পষ্টভাবে বলছি, একটি সংঘাতে কোনো পক্ষই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের ঊর্ধ্বে নয়।"
"ইসরায়েলের ওপর হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলা শূন্য থেকে হয়নি। ফিলিস্তিনি জনগণ ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারিত্বের শিকার হয়েছে। তারা তাদের ভূখণ্ড অন্যের বসতিতে পরিণত হতে এবং সহিংসতায় জর্জরিত হতে দেখেছে। তাদের অর্থনীতি থমকে গেছে। এই মানুষগুলো বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের দুর্দশার রাজনৈতিক সমাধানের আশাও ধুলোয় মিশে গেছে," বলেন তিনি।