বাড়ছে দেশ ছাড়ার সংখ্যা, ২০২৩ সালে কোন দেশে সবচেয়ে বেশি মিলিয়নিয়ার অভিবাসী হচ্ছে?
করোনা মহামারিকালি বিশ্বজুড়ে মিলিয়নিয়ারদের অভিবাসী হওয়ার পরিমাণ কমেছিল। তবে সেই ধারা কাটিয়ে চলতি বছরে ফের বেড়েছে ধনকুবেরদের দেশ ছাড়ার হার।
২০২৩ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার মিলিয়নিয়ার ব্যক্তি নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে অভিবাসী হতে পারেন।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস-এর প্রাইভেট ওয়েলথ মাইগ্রেশন রিপোর্ট-এ উঠে এসেছে গত এক দশকে কোন কোন দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি ধনকুবের অভিবাসী হয়েছেন। ন্যূনতম ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদ আছে, এমন ব্যক্তিদের এ তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে।
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি নতুন মিলিয়নিয়ার যাচ্ছেন
২০২৩ সালে যে দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি মিলিয়নিয়ার ও বিলিয়নার অভিবাসন করেছেন, সেগুলোর মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়া (১ম), সংযুক্ত আরব আমিরাত (২য়), সিঙ্গাপুর (৩য়), যুক্তরাষ্ট্র (৪র্থ), সুইজারল্যান্ড (৫ম), কানাডা (৬ষ্ঠ), গ্রিস (৭ম), ফ্রান্স (৮ম), পর্তুগাল (৯ম) ও নিউজিল্যান্ড (১০ম)।
শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে এশিয়া থেকে দুটি দেশ স্থান পেয়েছে, বাকি দেশগুলো ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়ার।
শীর্ষে থাকা পাঁচ দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ৫ হাজার ২০০, সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাড়ে ৪ হাজার, সিঙ্গাপুরে ৩ হাজার ২০০, যুক্তরাষ্ট্রে ২ হাজার ১০০ এবং সুইজারল্যান্ডে ১ হাজার ৮০০ জন ধনকুবের অভিবাসী হতে পারেন।
ব্যাপক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জে থাকা সত্ত্বেও চলতি বছর গ্রিসে ১ হাজার ২০০ জন ধনকুবের অভিবাসন করতে পারেন বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হতে পারে দেশটির গোল্ডেন ভিসা কর্মসূচি। গ্রিসে স্বল্প বিনিয়োগ করেই বসবাসের অনুমতি এবং ইইউ-এর পাসপোর্ট পাওয়া যায়। দেশটিতে এখন রিয়েল এস্টেটে ন্যূনতম আড়াই লাখ ইউরো বিনিয়োগ করতে হয়।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য অনেক দেশ মিলিয়নিয়ারদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে মুক্ত দেশ হচ্ছে সিঙ্গাপুর। এ বছর দেশটিতে ৩ হাজার ২০০ জন ধনকুবের অভিবাসন করতে পারেন।
যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ধনকুবের হারাচ্ছে
২০২৩ সালে চীনের সাড়ে ১৩ হাজার ধনকুবের দেশ ছাড়তে পারেন বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। এ বছর সাড়ে ৬ হাজার ভারতীয় মিলিয়নিয়ার অন্য দেশে অভিবাসন করতে পারনে।
যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি ধনকুবের চলে যাচ্ছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন (১ম), ভারত (২য়), যুক্তরাজ্য (৩য়), রাশিয়া (৪র্থ), ব্রাজিল (৫ম), হংকং এসএআর (৬ষ্ঠ), দক্ষিণ কোরিয়া (৭ম), মেক্সিকো (৮ম), দক্ষিণ আফ্রিকা (৯ম) ও জাপান (১০ম)।
এ তালিকার শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে চীন সাড়ে ১৩ হাজার, ভারত সাড়ে ৬ হাজার, যুক্তরাজ্য ৩ হাজার ২০০, রাশিয়া ৩ হাজার এবং ব্রাজিল ১ হাজার ২০০ জন ধনকুবের হারাতে পারে।
বেশ কিছু দেশে কঠোর নিয়ম-কানুন ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের কারণে এসব দেশের ধনকুবেররা অভিবাসী হচ্ছেন। রাশিয়ায় যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা বিধিনিষেধের জেরে ব্যক্তিগতভাবেও ট্যারিফ ও বাণিজ্য বিধিনিষেধের আওতায় রয়েছেন ধনীরা। হংকংয়ের ওপর চীনের কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে সেখানে বিনিয়োগের আকর্ষণ করেছে। এছাড়া ইইউ ছাড়ার কারণে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারহচে না। এতে আর্থিক ও বিনিয়োগে সমস্যায় পড়ছে।
মোটের ওপর মিলিয়নিয়ারদের অভিবাসী হওয়ার হার বাড়ছে। ১০ বছরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে অভিবাসী হওয়া ধনকুবেরের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।
২০১৩ সালে নিজ দেশ ছেড়ে বাইরের দেশে অভিবাসী হয়েছিলেন ৫১ হাজার ধনী ব্যক্তি। ২০১৪ সালেই সেই সংখ্যা বেড়ে ৫৭ হাজার হয়। এরপর ক্রমাগত বেড়ে ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজারে দাঁড়ায়। তবে করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে অভিবাসী হওয়া মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা এক ধাক্কায় কমে ১২ হাজারে নেমে আসে। তবে ২০২১ সালে নিজের দেশ ছাড়া ধনকুবেরের সংখ্যা আবার বেড়ে ২৫ হাজারে উন্নীত হয়। ২০২২ সালে সে সংখ্যা বেড়ে ৮৪ হাজার হয়, ২০২৩ সালে তা বেড়ে ১ লাখ ২২ হাজার হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।