ম্যাপ প্রকাশ করে গাজার আবাসিক এলাকা খালি করার নির্দেশ ইসরায়েলের
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) একজন মুখপাত্র, উত্তর ও দক্ষিণ গাজার আবাসিক এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যম 'এক্স' (সাবেক টুইটারে) একটি মানচিত্র পোস্ট করে যেসব এলাকা খালি করতে হবে তা চিহ্নিত করে দেখান তিনি। খবর বিবিসির।
উত্তর গাজার বৃহত্তম দুটি শরণার্থী শিবির হলো– জাবালিয়া ও সুজাইয়া। ইসরায়েলের হামলায় ঘরবাড়ি হারানো অসংখ্য পরিবার এসব শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে; ইতঃপূর্বে এ দুটি শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা করে বহু জনকে হত্যাও করে। এখন শিবির দুটির সকল বাসিন্দাকেই অন্যত্র চলে যেতে বলছে জায়নবাদি রাষ্ট্র। খালি করার জন্য উত্তর গাজার আরও কিছু এলাকা ওই ম্যাপে নির্দেশ করেন আইডিএফ মুখমাত্র আভিচাই আদরায়ে। এসব এলাকা ছেড়ে কোথায় পালাতে হবে সেই বিষয়েও আরবিতে বলে দেওয়া হয়।
দক্ষিণ গাজার কিছু এলাকাও খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো খান ইউনিসের কাছে বানি সুহাইলিয়া। এই এলাকার মানুষকে মিশরের সাথে রাফাহ সীমান্তপথের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। গত শুক্রবার যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকেই দক্ষিণ গাজায় বোমাবর্ষণের তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল।
এই ঘটনা এবং তার সাথে বিভিন্ন এলাকা খালি করার নির্দেশ ইঙ্গিত দিচ্ছে, গাজায় অবস্থান করা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সেখানে অভিযানে শুরু করবে।
এদিকে তীব্র যুদ্ধের মধ্যে অসহায়ের মতো এদিক-সেদিক ছুটতে হচ্ছে মানুষকে। খাদ্য, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির তীব্র অভাবের মধ্যেই দিশেহারা পরিবারগুলোকে চলে যেতে বলা হচ্ছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর গত রাতভর খান ইউনিসের প্রধান চারটি আবাসিক এলাকায় প্রচণ্ড বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
এসময় ৫০ বারের বেশি হামলা চালায় ইসরায়েলি বিমানের ঝাঁক। সঙ্গে কামান থেকেও গোলা ছোঁড়ে। বোমা ও গোলা আঘাত হানে অনেক বাসভবনে, প্রধান সড়ক, হামাস পরিচালিত সরকারি দপ্তরগুলোর প্রধান কার্যালয় এবং কৃষিক্ষেতে।
শুক্রবার ভোররাতে খান ইউনিস সংলগ্ন চারটি গ্রামে বিমান থেকে লিফলেট ফেলে ইসরায়েল; লিফলেটে গ্রামবাসীকে সরে যেতে বলা হয়। এরপর সূর্য ওঠার সাথে হাজার হাজার মানুষকে খান ইউনিসের পশ্চিমাঞ্চল ছাড়তে দেখা যায়। অথচ এসব এলাকায় বর্তমানে ১২ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি রয়েছেন, যাদের বড় অংশই হচ্ছেন বাস্তুচ্যুত মানুষ। উত্তর গাজা থেকে যারা পালিয়ে এসেছেন।
পালাতে বাধ্য হওয়া পরিবারগুলোকে গাধায় বা ঘোড়ায় টানা গাড়িতে লটবহর নিয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু, যারা আগেই বাস্তুচ্যুত হয়ে এসেছেন, তাদের পদব্রজে যাত্রাই সম্বল। খাদ্য ও পানির অভাবের পাশাপাশি পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বা কম্বলও তাঁদের কাছে নেই।
৩৮ বছর বয়সী পাঁচ সন্তানের জনক হোসাম আল মাগরাবি বলেন, "বোমা হামলার মুখে আমরা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে এখানে আসি। উপর থেকে বোমা পড়ছিল চারপাশে। এই অবস্থায়, আমার ছোট মেয়েকে কাঁধে নিয়ে ছুটে পালাই। ভাগ্যক্রমে আমার মোটরকারে সামান্য একটু জ্বালানি ছিল, যা দিয়ে কোনক্রমে গাজা সিটি থেকে বেরোতে পারি। এরপর আমরা দক্ষিণ গাজায় এসে আশ্রয় নিয়েছি। তারপর আবারো আমাদের চলে যেতে বলা হচ্ছে।'