শীর্ষ সাংবাদিকদের ওপর নজরদারিতে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করছে ভারত: অ্যামনেস্টি
খ্যাতনামা শীর্ষ সাংবাদিকের ওপর নজরদারিতে ইসরায়েলের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছে ভারত সরকার। নতুন এক যৌথ তদন্তের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং গণমাধ্যম- দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে জানানো হয়, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বারবার পেগাসাস ব্যবহার করেছে ভারত। এমনকী এর আগেও মুঠোফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস আক্রান্ত হওয়া একজন সাংবাদিকের ডিভাইসে আবারো এটি ইনস্টল করা হয়।
পেগাসাস স্পাইওয়্যার তৈরি করেছে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান– এনএসও গ্রুপ। এর মাধ্যমে টার্গেট ব্যক্তির মুঠোফোনে থাকা ম্যাসেজ, ইমেইল, ছবিতে গোপন প্রবেশাধিকার পায় নজরদারি কর্তৃপক্ষ। এমনকী এর মাধ্যমে ওই ব্যক্তির লোকেশন ট্র্যাক করা যায় এবং ফোনকলে আড়ি পাতাও সম্ভব হয়। অত্যন্ত শক্তিশালী এই স্পাইওয়্যার দিয়ে ওই ব্যক্তির অজ্ঞাতেই তাঁর ফোন ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা বা ভিডিও করা যায়।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অধিকার সংস্থা এই স্পাইওয়্যারের বহুল ব্যবহারের ঘটনা প্রকাশ করেছে। এনএসও গ্রুপ বলেছে, এটি তারা বিভিন্ন দেশের সরকার ও নিরাপত্তা সংস্থার কাছে বিক্রি করেছে। ভারতসহ অন্তত এক ডজন দেশে এটি সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে কর্তৃপক্ষ।
ভারতের মূলধারার গণমাধ্যমে কট্টর জাতীয়তাবাদ এখন ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। এরমধ্যে কতিপয় স্বাধীন গণমাধ্যম চেষ্টা করে সঠিক বিশ্লেষণের, যারমধ্যে অন্যতম দ্য ওয়্যার। ডিজিটাল এই প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হলেন সিদ্ধার্থ ভারাদরাজন। অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, তাঁর এবং দ্য অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট- এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সম্পাদক আনন্দ মাংনালের আইফোনকে এই স্পাইওয়্যার দিয়ে টার্গেট করা হয়। সবশেষ স্পাইওয়্যার আক্রমণ ২০২৩ সালের অক্টোবরে করা হয়েছিল।
অ্যামনেস্টির সিকিউরিটি ল্যাবের প্রধান দানকা ও'ক্যারউইল বলেন, 'শুধুমাত্র নিজেদের (পেশাগত) দায়িত্ব পালন করায়– ভারতে সাংবাদিকদের ওপর অবৈধ নজরদারি এবং কঠিন আইনপ্রয়োগের ঘটনা বাড়ছে। একইসঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে মানহানিমূলক প্রচার, হয়রানি ও হুমকিধামকির ঘটনা বাড়ছে।'
তিনি বলেন, "বারবার এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেও– পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার নিয়ে ভারতে জবাবদিহির অভাব রয়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে দায়মুক্ত থাকার বোধ আরও তীব্র হয়।"
অ্যামনেস্টির সিকিউরিটি ল্যাবে পরীক্ষা করে জানা যায়, আনন্দ মাংনালের ডিভাইসে গোপনে জিরো-ক্লিক এক্সপ্লোয়েট ডিজাইনের পেগাসাস স্পাইওয়্যার পাঠানো হয়েছিল।
জিরো-ক্লিক এক্সপ্লোয়েট এর মাধ্যমে ক্ষতিকর স্পাইওয়্যার ব্যবহারকারী ফোনে কোনো কিছু না করলেও নিজে থেকেই ইনস্টল হয়ে যায়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী কোনো ক্লিক বা কম্যান্ড না দিলেও হয়।