'অ-ইসলামিক নিকাহ' মামলায় ইমরান খান ও স্ত্রী বুশরা বিবির ৭ বছরের কারাদণ্ড
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে 'অ-ইসলামিক নিকাহ' মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ শনিবার রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে একটি অস্থায়ী আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
একইসঙ্গে এই দম্পতির প্রত্যেককে পাঁচ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় ইমরান ও বুশরা উভয়ই ওই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
কারা অভ্যন্তরে মামলার বিষয়ে ১৪ ঘণ্টা শুনানির এক দিন পর আজ সিনিয়র সিভিল জজ কুদরতুল্লাহ এ রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রীয় উপহার বেআইনিভাবে বিক্রির মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের তিন দিন পর এবার বিয়ে সংক্রান্ত মামলায় দণ্ডিত হলেন ইমরান ও বুশরা।
গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) তাদের দুজনকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন ইসলামাবাদের একটি দুর্নীতিবিরোধী আদালত। এই রায়ের ঠিক একদিন আগে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের দায়ে ইমরানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বুশরা বানিগালায় তার বাসভবনে গৃহবন্দী রয়েছেন। রায় ঘোষণার আগে তাকে সেখান থেকে আদিয়ালা কারাগারে আনা হয়। মামলায় আদালত চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
যেভাবে 'অ-ইসলামিক নিকাহ' মামলায় অভিযুক্ত হন ইমরান ও বুশরা
গত মাসে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের এই প্রতিষ্ঠাতা ও স্ত্রী বুশরাকে আইন লঙ্ঘন করে বিয়ে করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে দেশটির একটি আদালত। এতে বলা হয়, আগের স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বুশরা ইদ্দত (তালাকের পর তিন মাস পর্যন্ত অন্য কাউকে বিয়ে না করা) পালন না করেই ইমরানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যা মুসলিম রীতি তথা ইসলামি শরীয়াহ পরিপন্থী।
অবশ্য ইমরান ও বুশরা উভয়ই এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। ইমরানের আইনজীবী ইন্তিসার পাঞ্জুথা এটিকে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচন থেকে ইমরানকে দূরে সরিয়ে রাখার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেন।
গত বছরের এপ্রিলে মুহম্মদ হানিফ নামে এক ব্যক্তি ইমরান ও বুশরার বিয়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে পিটিশন দেন। পরে ইসলামাবাদের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুহাম্মাদ আজম খান মামলাটি দেওয়ানি আদালতের বিচারকের কাছে স্থানান্তর করেন। সেই সঙ্গে এই বিয়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা একটি নালিশি মামলা অগ্রহণযোগ্য বলে দেওয়া দেওয়ানি আদালতের এক রায় খারিজ করে দেন।
পিটিশনে মুহম্মদ হানিফ দাবি করেন, বুশরার সঙ্গে তাঁর আগের স্বামী মানেকার বিচ্ছেদ হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। কিন্তু ইদ্দত পালন না করেই ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি বুশরা ইমরান খানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যা মুসলিম রীতি তথা ইসলামি শরিয়ার পরিপন্থী।
তবে বুশরা বিবি জানান, আগের স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছিল ২০১৭ সালের আগস্টে।
ইমরান এর আগে আরো দুটি বিয়ে করেছিলেন। তার সেই দুই স্ত্রী ছিলেন জেমাইমা গোল্ডস্মিথ ও রেহাম খান। কিন্তু তাদের সাথে ইমরানের সংসার বেশিদিন টেকেনি।
গত ১৬ জানুয়ারি রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বিচারক ইমরানকে অভিযোগ পড়ে শোনান। তখন ইমরান নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে বুশরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
আইনজীবী পাঞ্জুথা সে সময় বলেন, 'সবাই জানে তাকে (ইমরানকে) নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই জাল মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং কারাগারে রাখা হয়েছে। তবে পাকিস্তানের লোকেরা তাকে ত্যাগ করছে বলে মনে হচ্ছে না।'
২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান। বিভিন্ন মামলায় এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন।