গাজায় প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস
গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস একটি কাঠামো প্রস্তাব প্রতিক্রিয়া আকারে জানিয়েছে। এক্ষেত্রে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই এই প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করছে। খবর বিবিসির।
সম্ভাব্য চুক্তিতে বিস্তারিত আরও কী আছে সেটি প্রকাশিত হয়নি। তবে এক্ষেত্রে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কাতার ও মিশরও যুক্ত রয়েছে।
এর আগে অবশ্য সম্ভাব্য চুক্তিতে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানানো হয়েছিল। এতে করে আরও ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময় করার ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছিল।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য সফরে রয়েছেন। আজ (বুধবার) তিনি ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের সাথে হামাসের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়াটিকে কীভাবে দেখছে সে বিষয়ে কোনও ইঙ্গিত প্রদান করেননি। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনে করেন যে, ইসরায়েলি নেতৃত্ব হামাসের দাবির সাথে সহজে একমত হবে না।
এদিকে হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, প্রতিক্রিয়ায় তারা একটি 'ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি' প্রকাশ করেছেন। এতে গাজার পুনর্গঠন, বাসিন্দাদের পুনর্বাসন এবং এই পুনর্গঠন কাজে কিছু বিধান সংশোধনের জন্য বলা হয়েছিল।
ঐ হামাস কর্মকর্তা জানান, তারা আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছেন। যার মধ্যে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া এবং বিদেশের হাসপাতালে স্থানান্তর করার মতো বিষয় উঠে এসেছে।
রয়টার্সকে হামাসের এক প্রতিনিধি জানায়, প্রস্তাবটি প্রায় এক সপ্তাহ আগে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া জানাতে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত সময় নিয়েছে। কারণ এর কিছু অংশ 'অস্পষ্ট এবং অনিশ্চিত' ছিল।"
এদিকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি হামাসের প্রতিক্রিয়াকে সাধারণভাবে 'ইতিবাচক' বলে বর্ণনা করেছেন।
গত বছরের অক্টোবর মাসে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এক্ষেত্রে হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৪০ জন জিম্মি হয়। জবাবে তেল আবিব গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। যা এখনও চলছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় ২৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এক্ষেত্রে নেতানিয়াহু সরকার বলেছে, হামাস হার মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তারা অভিযান চালিয়ে যাবে।
এদিকে নভেম্বরের শেষের দিকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। সেক্ষেত্রে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ২৪০ ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে ১০৫ জন ইসরায়েলি এবং বিদেশি জিম্মিকে মুক্ত করা হয়েছিল।
দীর্ঘদিন ধরে হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছে ইসরায়েলের শতাধিক নাগরিক। সেক্ষেত্রে দেশটির স্থানীয় রাজনীতিতে নেতানিয়াহু সরকারের ওপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে।
আবার গত সপ্তাহে জর্ডানে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি যেন আরও ঘোলাটে হতে শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে ওয়াশিংটন সিরিয়া ও ইরাকে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে বিমান হামলার প্রতিশোধ নিয়েছে।
ভবিষ্যতেও এমন হামলা আরও করা হবে বলে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিই পারে আরও বাজে পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে।
এদিকে গতকাল (মঙ্গলবার) ইসরায়েল দাবি করেছে যে, গাজায় অবশিষ্ট ১৩৬ জিম্মির মধ্যে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, "জিম্মিদের পরিবারকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা বাকি বন্দীদের ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ অব্যাহত রাখব।"
জিম্মিদের মুক্ত করার প্রচেষ্টা সম্পর্কে ড্যানিয়েল আরও বলেন, "এটি একটি নৈতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা। আমরা কীভাবে কাজ চালিয়ে যাবো এটি সেটির নির্ণায়ক।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান