তিমির গানের রহস্য খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা
তিমিরাও গান গায়। শুনতে অবাক লাগলেও কিছু বড় প্রজাতির তিমি রয়েছে, যেগুলো গান গাইতে বা সুর তুলতে পারে। বিজ্ঞানীরা কীভাবে তিমিরা এই অদ্ভুত আর জটিল গান তৈরি করে সেই রহস্য খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন। তারা বলছেন, হাম্পব্যাক ও অন্যান্য বালিন তিমির শরীরে এক ধরনের 'ভয়েস বক্স' স্বর তৈরির অংশ রয়েছে। এটির সাহায্যেই গানের মতো সুর তৈরি করতে পারে গভীর জলের এই অধিবাসীরা। খবর বিবিসির।
গবেষণাটি বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল ন্যাচারে প্রকাশিত হয়েছে। সেইসঙ্গে সমুদ্রে চলাচল করা জাহাজের শব্দ কীভাবে এসব সামুদ্রিক প্রাণির যোগাযোগকে ব্যহত করে, গবেষণায় সেটিও উঠে এসেছে।
সাউদার্ন ডেনমার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক কোয়েন এলেমান্স এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করেন, 'বেঁচে থাকার জন্য শব্দ এসব প্রাণির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শব্দের সাহায্যেই তারা নিজেদের সঙ্গীকে খুঁজে বের করে।'
এই গবেষক বলেন, 'এই গ্রহে বসবাস করা সবচেয়ে রহস্যময় প্রাণিগুলোর একটি তিমি। এরা আকারে বিশাল, স্মার্ট আর অতি সামাজিক।'
বালিন তিমি হলো ১৪ প্রজাতির একটি দল। এ দলে রয়েছে নীল তিমি, হাম্পব্যাক তিমি, রাইট তিমি, মিঙ্কি তিমি ও ধূসর তিমি। দাঁতের পরিবর্তে এদের রয়েছে এক ধরনের প্লেট বা থালা। এই থালার সাহায্যে তারা চালনি দিয়ে চালা বা ছাঁকার মতো করে পানি থেকে মুখে ভর্তি করে ছোট প্রাণির বিশাল ঝাঁককে খেতে পারে।
অধ্যাপক এলেমান্স বলেন, 'তিমিদের সুর তৈরির এই রহস্য উদঘাটন করতে পারাটা সত্যি 'অতি রোমাঞ্চকর'।
গবেষণাটি সম্পন্ন করতে এলেমান্স ও তার দলের সদস্যরা আগে থেকেই মৃত মিঙ্কি, হাম্পব্যাক ও ছেই তিমির দেহ থেকে সতর্কতার সঙ্গে বাগযন্ত্র বা 'ভয়েস বক্স' সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। সেই 'ভয়েস বক্স' ব্যবহার করেই তারা এ পরীক্ষা চালান।
পরীক্ষায় জানা যায়, বালিন তিমির দেহে বাগযন্ত্রের শীর্ষভাগে ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো নরম চর্বিযুক্ত কাঠামো রয়েছে। বাগযন্ত্রের এই গঠনের কারণেই বাতাসকে পুনর্ব্যবহার করে প্রাণিগুলো সুর তৈরি করে।
গবেষকরা জানান, এই সুরগুলো নির্দিষ্ট একটি ফ্রিকুয়েন্সির হয়ে থাকে এবং এগুলো সমুদ্রের চলাচল করা জাহাজগুলোর শব্দের সঙ্গে মিশে যায়।
এলেমান্স বলেন, 'প্রাণিগুলো জাহাজের তৈরি শব্দ এড়াতে উচ্চ স্বরে সুর তৈরি করে থাকে।'
গবেষণায় সমুদ্রে মানবসৃষ্ট শব্দ কীভাবে একে অন্যের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করা তিমিদের যোগাযোগে বাধা তৈরি করে, সেটিও উঠে এসেছে।
ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির তিমি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. কেট স্ট্যাফোর্ড গবেষণাটিকে 'যুগান্তকারী' বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বিবিসি নিউজকে বলেন, 'সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণিদের জন্য শব্দের উৎপাদন ও গ্রহণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতি। তাই প্রাণিগুলো কীভাবে শব্দ করে, তা ব্যাখ্যা করে এমন যেকোনো গবেষণাই এই ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।'
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক