এই দ্বীপদেশে পুরুষদের চেয়ে বেশি বেতন পান নারী সিইও’রা, ব্র্যান্ড প্রতিনিধিত্বেও এগিয়ে
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে তেমন সন্তোষজনক উন্নতি হচ্ছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই। শীর্ষ নির্বাহীর অবস্থানে যে নারীরা আসছেন তাঁদের দেওয়া নানান রকম ভাতাও সমপদে আসীন পুরুষদের থেকে কম। নারী অন্তর্ভুক্তির এ দুটি দিকেই কিন্তু চমক দেখাচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্র নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের নারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) বার্ষিক গড় বেতন ৫৯ লাখ ডলার, যা তাঁদের পুরুষ সমকক্ষদের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। দেশটিতে পুরুষ সিইওদের বার্ষিক গড় আয় ২৬ লাখ ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান এমএসসিআই এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বোর্ডে সবচেয়ে বেশি নারীদের উপস্থিতি রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপ দেশটিতে, যা ৪০ শতাংশের বেশি।
সে তুলনায়, উন্নত ও এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে এই হার মাত্র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হয় ২০২৩ সালে। অর্থাৎ, ২০২২ সালের ৫ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়ে নারী সিইওর সংখ্যা সামান্যই বেড়েছে পরের বছরে। আলোচিত অর্থনীতিগুলোর ২ হাজার ৮৬৮টি বৃহৎ ও মাঝারি মূলধনের কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে আসে। যেখানে আরো দেখা গেছে, মাত্র ১৯ শতাংশ নারী এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা বা সিএফও পদে আছেন।
শুধু উন্নত দেশের হিসাবেও দেখা যায় শীর্ষ নেতৃত্বে নারীর প্রতিনিধিত্বের অভাব রয়েছে। সুইজারজারল্যান্ডে যা ২.২ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৩.২ শতাংশ এবং জার্মানিতে ৩.৬ শতাংশ। অর্থাৎ, এসব দেশে নারী সিইওদের হার ৫ শতাংশের কম। এমনকী সুইজারল্যান্ডের নারী সিইও'রা তাঁদের সমকক্ষ পুরুষদের চেয়ে চারগুণ কম আয় করেন।
এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও হংকংয়েও মোট সিইওদের মধ্যে পাঁচ শতাংশের কম হলেন নারীরা। এই হার জাপানে ১.১ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩.২ শতাংশ এবং হংকংয়ে ৪.৮ শতাংশ বলে জানাচ্ছে এমএসসিআই এর প্রতিবেদন। অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়ার নারী সিইও'রা আবার পুরুষদের তুলনায় বেশি আয় করেন।
বৈশ্বিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা ও গৃহস্থালি ভোক্তাপণ্য কোম্পানিগুলোয় সবচেয়ে বেশি নারী সিইও রয়েছেন, যার অনুপাত ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। এসব খাতে নারী সিএফও রয়েছেন প্রায় ২০ শতাংশ।
কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নারীর অংশগ্রহণ আগের বছরের ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
এই উন্নতি কিছুটা আশাব্যঞ্জক হলেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বোর্ডে নারী সদস্যদের মেয়াদ বাড়াতে আরো সচেষ্ট হতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
এমএসসিআই এর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ইএসজি ও জলবায়ু-বিষয়ক প্রধান চিত্রা হেপবার্ন বলেন, "একজন নারী কোম্পানির বোর্ডে সদস্যপদ পাওয়ার পর যা হয় সেখানে একটি বড় পার্থক্য দেখা যায়; যেমন নারী সদস্যরা বোর্ডে গড়ে মাত্র সাড়ে তিন বছর থাকছেন।"
২০২৩ সালে স্বাস্থ্য খাতের যেসব কোম্পানির বোর্ডের সব সদস্যই পুরুষ ছিল তাঁদের অনুপাত ৫.৪ শতাংশে নেমে এসেছে, ২০২২ সালে যা ছিল ৬.৮ শতাংশ।
এমএসসিআই যে ১১টি খাতের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তার মধ্যে সম্পূর্ণ পুরুষ আধিপত্য থাকা পরিচালন বোর্ড বেশি প্রযুক্তি খাতে। এই খাতের ১৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে এ অবস্থা। ২০২২ সালের চেয়ে যা বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। এরপরেই ১৪ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নির্মাণ-উপকরণ শিল্প।