ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা আপিলে হারলেন শামীমা বেগম
আপিল আদালতের পর এবার সুপ্রিম কোর্টও নিরাশ করল যুক্তরাজ্য থেকে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে সিরিয়ায় পাড়ি জমানো শামীমা বেগমকে।
ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার চেষ্টা করেছিলেন শামীমা বেগম। কিন্তু তার প্রাথমিক আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে ।
২৪ বছর বয়সী এই তরুণী তার মামলাটি যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ বিচারিক কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আপিল আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। তবে সেই আবেদন খারিজ করে দেন আপিল আদালত। আপিল আদালত তার মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়।
তবে এখনও চাইলে তার মামলার শুনানির অনুমতি চেয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারবেন তিনি।
২০১৯ সালে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে ব্রিটিশ সরকার তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়, যার ফলে তিনি রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েন।
শামীমা বেগম নয় বছর আগে ১৫ বছর বয়সে লন্ডন ছেড়ে সিরিয়ায় যান এবং ইসলামিক স্টেট গ্রুপে (আইএস) যোগ দেন।
এ বছরের শুরুর দিকে আপিল আদালতের তিনজন বিচারক সর্বসম্মতিক্রমে তার নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আবেদন খারিজ করে দেন।
ফেব্রুয়ারিতে আপিল আদালতের খারিজ ঘোষণার সময় প্রধান নারী বিচারক ব্যারোনেস কার মন্তব্য করেন, 'কেউ তর্ক করতে পারেন যে শামীমা বেগমের রায়ের সিদ্ধান্ত কঠোর ছিল। আবার কেউ বলতে পারেন নিজের দুর্ভাগ্যের জন্য শামীমা বেগম নিজেই দায়ী। কিন্তু কোনো মতের সঙ্গেই একমত বা দ্বিমত পোষণ করা এই আদালতের কাজ নয়। আমাদের একমাত্র কাজ হলো রায়টি বেআইনি ছিল কিনা তা মূল্যায়ন করা। আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে এটি ছিল না এবং তাই আপিলটি খারিজ করা হয়েছে।'
তার আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে তার নাগরিকত্ব অপসারণের হোম অফিসের সিদ্ধান্তটি অবৈধ ছিল। তাদের মতে, শামীমা স্ব-ইচ্ছায় সিরিয়ায় গিয়েছিলেন নাকি পাচার হয়েছিলেন তা পর্যাপ্তভাবে মূল্যায়ন করেননি কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগম ইসলামিক স্টেট গ্রুপে (আইএস) যোগ দিতে ২০১৫ সালে সিরিয়ায় পাড়ি জমানো। তার সঙ্গী ছিলেন খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসে।
ধারণা করা হচ্ছে, ঘরে বোমা বিস্ফোরণে সুলতানার মৃত্যু হয়েছে। আর আবাসের ভাগ্য এখনও অজানা।
তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আইএস শাসনের অধীনে বসবাস করে শামীমা বেগম একজন ডাচ আইএস সদস্যকে বিয়ে করেন। স্বামীকে নিয়ে আইএসের সাবেক শক্তিশালী ঘাঁটি রাক্কায় বসবাস করতেন তিনি। তাদের ঘরে তিনটি সন্তান জন্ম নেয় যাদের সবাই মারা গেছে।
২০১৯ সালে আইএসের পরাজয়ের পর উত্তর সিরিয়ার আল-রোজ ক্যাম্পে শামীমাকে পাওয়া যায় এবং আজ পর্যন্ত তিনি সেখানেই আছেন। তার আইনজীবীরা বলছেন, ক্যাম্পের পরিস্থিতি সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাহার এবং নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে সবাই।
তার আইনজীবীরা তার পক্ষে এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, 'বাস্তবতা হচ্ছে অন্যান্য ব্রিটিশ নারী ও শিশুদের মতো শামীমাকেও উত্তরপূর্ব সিরিয়ার একটি বন্দি শিবিরে নির্বিচারে আটকে রাখা হয়েছে। এটি কোনো শরণার্থী শিবির নয়। আটককৃতরা চলে যেতে পারছে না। শামীমার এ নাজুক পরিস্থিতিকে প্রতিটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং যুক্তরাজ্যের আদালত নির্যাতন এবং অমানবিক আচরণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।'
তবে শামীমা বেগম স্বীকার করেছেন যে তিনি জেনেশুনে আইএসে যোগ দিয়েছিলেন। নিজের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত বলে জানান তিনি।
হোম অফিসের এক মুখপাত্র বলেন, 'আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে যুক্তরাজ্যের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং আমরা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সর্বদা কঠোরতম পদক্ষেপ নেবে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন