যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে কেঁপে উঠেছে ইসরায়েল, চাপের মুখে নেতানিয়াহু
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে দেশটির হাজার হাজার মানুষ এ সপ্তাহের শেষে তেল আবিব এবং জেরুজালেমের রাস্তায় নেমেছিল যা প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ক্রমবর্ধমান বিপর্যস্ত নেতৃত্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
৭ অক্টোবরে হামাসের হামলার সময় বন্দী জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত না করায় নেতানিয়াহু এবং তার সরকারের উপর বিক্ষোভকারীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। গত বছর অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময় ১০৫ জনকে মুক্তি দেওয়া হলেও অপহৃত আরো ১৩০ জন হয় মারা গেছে বা এখনও হামাস ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে আটক রয়েছে।
নেতানিয়াহুর পদত্যাগ এবং ইসরায়েলে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানানো পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
কোন পোস্টারে লেখা ছিল, 'আপনি ব্যর্থ' আবার কোন পোস্টারে লেখা ছিল, 'এখনই অভিসংশন চাই'।
নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের লক্ষ্যগুলো হল— জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা, হামাসকে ধ্বংস করা এবং গাজাকে পুনর্নির্মাণ করা যাতে কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী কখনোই গত বছরের মত ইসরায়েলে আক্রমণ করতে না পারে। তবে এ সপ্তাহের শেষ দিকে জিম্মিদের পরিবার এবং বিক্ষোভকারীরা বিশ্বাস করে, ইসরায়েলি সরকারের যেকোনো সামরিক বা নিরাপত্তা লক্ষ্যের চেয়ে জিম্মি উদ্ধারের দিকে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত।
আভিভা সিগেল যিনি নভেম্বরে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময় হামাস কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত ১৭ জিম্মির মধ্যে ছিলেন, তিনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে তার স্বামী এবং গাজায় হামাস ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে আটক অন্যান্য জিম্মিদের মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তেল আবিবের র্যালিতে অংশ নেওয়া ৬২ বছর বয়সী সিগেল বলেন, "আমরা এখানে ভেতরে ভেতরে মারা যাচ্ছি।"
রবিবার (৩১ মার্চ) জেরুজালেমে জনতার সাথে কথা বলার সময় ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান বিরোধী নেতা ইয়ার ল্যাপিড বলেছেন, সরকার জিম্মিদের পরিবারের অস্তিত্বকে উপেক্ষা করছে।
ল্যাপিড বলেছেন, "তারা কিরিয়ার (তেল আবিবের ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর) এর বাইরে দাঁড়িয়েছিল। তারা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চিৎকার করলেও কেউ শুনতে পায়নি। তারা পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ করলেও কেউ দেখেনি।"
জেরুজালেমে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের বাইরে রবিবারের বিক্ষোভ জোর করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা আরো বিক্ষোভের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে বলে মনে করা হচ্ছে। কয়েক ডজন লোক সোমবার (১ এপ্রিল) নেসেটের বাইরে তাঁবুতে বসতি স্থাপন করেছেন এবং কেউ কেউ বুধবার (৩ এপ্রিল) পর্যন্ত সেখানে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যখন দেশটির আইন প্রণেতারা বসন্তের ছুটিতে বাড়িতে যাচ্ছেন।
চলমান বিক্ষোভ ইসরায়েলের দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক বিভাজনকে পুনরুজ্জীবিত করেছে যা ৭ অক্টোবরের ঘটনার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা পড়েছিল। হামলার আগের মাসগুলোতে নেতানিয়াহুর সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত সংস্কারের বিরুদ্ধে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিচার ব্যবস্থা ও চেক দুর্বল করার মাধ্যমে দেশের ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে।