সঠিক চশমার ব্যবহার মানুষের আয় এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে: গবেষণা
বয়স বাড়ার কারণে অনেকের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। এ কারণে কেউ কেউ চশমা ব্যবহার করে থাকেন। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, চোখে চশমা ব্যবহার না করা ব্যক্তিদের চেয়ে চশমা ব্যবহার করা ব্যক্তিরা তিন শতাংশ পর্যন্ত বেশি আয় করতে পারেন।
গবেষণাটি করা হয়েছে বাংলাদেশে। গবেষণার মধ্য দিয়ে চশমা ব্যবহারের প্রভাব বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। ৩৫ বছরের বেশি বয়সী ৮২৪ জন ব্যক্তির ওপর এ গবেষণা চালানো হয়। কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্ট, সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ভিশনস্প্রিং ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এ গবেষণা পরিচালনা করে।
এতে দেখা যায়, আট মাসের মধ্যে একদল লোকের মাসিক গড় আয় ৩৫.৩০ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৭.১০ ডলার। সে হিসেবে আয় বাড়ার হার ৩৩.৪ শতাংশ।
ধারণা করা হয়ে থাকে, প্রেসবায়োপিয়া অর্থাৎ কাছের বস্তু বা জিনিস দেখতে না পাওয়ার কারণে উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে বছরে ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে একই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যারা এ সমস্যা দূর করার জন্য চশমা ব্যবহার করছেন, তাদের কারণে এ ক্ষতির পরিমাণ ১০ শতাংশ কম হতে পারে।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের জীবনের মান উন্নত হয়েছে, কারণ চশমা তাদের দৈনন্দিনের কাজ যেমন- মোবাইল ফোন ব্যবহার ও রান্নাবান্নার কাজ সহজ করেছে।
গবেষণাটির অন্যতম লেখক অধ্যাপক নাথান কংডন বলেছেন, 'গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য চশমার ব্যবহার সহায়ক হতে পারে। মাত্র কয়েক ডলার খরচ করে যারা চশমা কিনে ব্যবহার করছেন, তাদের ওপর এর উল্লেখযোগ্য ও টেকসই প্রভাব রয়েছে। এ কারণে তারা আবারও ভালোভাবে কাজ করতে পারেন।
গবেষণাটির সহ-লেখক ও ভিশনস্প্রিংয়ের প্রধান নির্বাহী এলা গুডউইন বলেছেন, এ গবেষণা থেকে যেটি স্পষ্ট হয়েছে, সেটি হলো এ সহজ সমাধানটি অনন্য শক্তিশালী।
উগান্ডার দক্ষিণাঞ্চলের মাতুগ্গার বাসিন্দা সারা নাকালিওয়া (৫৭) ঝুড়ি তৈরি করে থাকেন। তিনি জানান, তরুণ বয়সে তিনি দিনে দুইটি ঝুড়ি তৈরি করে আরেকটিরও অর্ধেক কাজ সম্পন্ন করতে পারতেন। এ থেকে তার মাসে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ উগান্ডান শিলিং (৮২-১০৩ পাউন্ড) আয় হতো। কিন্তু ৪০ বছর বয়স থেকে তার দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে শুরু করে। ফলে তার ঝুড়ি তৈরির কাজও কমে যায়।
তিনি বলেন, 'আমি ঝুড়ি তৈরিতে সুই ব্যবহার করতাম। কিন্তু কাজের সময় সম্পূর্ণ মনযোগ দিতে পারতাম না। আমার দৃষ্টিশক্তি খারাপ হয়ে যাওয়ায় আগে একদিনে যে কাজ করতাম, সেটা করতে চারদিন লাগত। আমার প্রতি মাসে কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল এক লাখ থেকে দেড় লাখ উগান্ডান শিলিংয়ে।'
তিনি আরও বলেন, 'চশমা আমার কাজ সহজ করেছে। আগে আমি সুইয়ে সুতা লাগাতে পারতাম না। এখন পারি। আগে পড়তেও অসুবিধা হতো। এখন খুব স্পষ্টভাবে পড়তে পারি।'
এখন আগের মতোই আয় করছেন সারা। তিনি ঝুড়ির পাশাপাশি মাশরুম চাষেরও একটি ব্যবসা করছেন, যা চশমা না থাকলে সম্ভব হতো না বলে জানান তিনি।