গণহত্যার পর রুয়ান্ডার নারীরা যেভাবে প্রায় নিঃস্ব অবস্থা থেকে দেশকে পুনর্গঠিত করেছে
রুয়ান্ডার আইনসভায় নারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখানে নারী সদস্যের হার ৬৪ শতাংশ। ১৯৯৪ সালে ভয়াবহ গণহত্যার পর দেশটি অর্থনীতিসহ নানা দিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ে। গণহত্যায় বিধ্বস্ত দেশটিকে বদলে দিতে হাল ধরেন নারীরা। বলতে গেলে প্রায় নিঃস্ব অবস্থা থেকে দেশকে পুনর্গঠনের জন্য কাজ করছেন তারা।
মুসাবিমানা মেরি গডেন্স পেশায় একজন কৃষক। তিনি একটি নারী সমবায়ের সদস্যও। তিনি জানান, ১৯৯৪ সালে জাতিগত চরমপন্থীরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। মাত্র ১০০ দিনে তারা ৮ লাখ মানুষ হত্যা করেছিল। এ গণহত্যা থেকে যারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে গডেন্সও একজন। এ কারণে তিনি নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবতী মনে করেন।
চরমপন্থীদের হাত থেকে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ মানুষ প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগই ছিল নারী।
গডেন্স সিবিএস নিউজকে বলেন, 'গণহত্যার পর বহু নারী একাকিত্ব অনুভব করতেন। ওই সময়টায় তারা নিজেদের প্রতিবেশিদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে মিশতে শুরু করেন। আজ রুয়ান্ডার নারীরা তাদের দেশকে একেবারে প্রায় নিঃস্ব অবস্থ থেকে পুনর্গঠনের জন্য কাজ করছেন।'
রুয়ান্ডার নারীদের বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা অ্যাসপায়ার রুয়ান্ডার সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংস্থা হিউম্যানিটি ইউনিফাইড। তারা রুয়ান্ডার নারীদের ফসল ফলানো শেখানোর পাশাপাশি কীভাবে একটি ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটিও শেখাচ্ছে।
গডেন্স আশা করেন, নারীরা তাদের আয় বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন।
জয় রুয়ামওয়েঙ্গে রুয়ান্ডার পূর্বাঞ্চলে কায়োনজা ডিস্ট্রিক্টে উইমেন'স অপরচুনিটি সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন।
প্রতিষ্ঠানটিতে নারীদের একসঙ্গে কাজ করা, জমি থেকে ফসল কাটা ও বিক্রি করা, ঝুড়ি বোনা ইত্যাদি কাজ শেখানো হয়ে থাকে। একটি ঝুড়ি বিক্রি করে প্রায় ৩০ ডলার পাওয়া যায়।
রুয়ামওয়েঙ্গে বলেন, 'গডেন্সের মতো নারীরা একটি আন্দোলনের অংশ, যেটি রুয়ান্ডাকে রূপান্তরিত করছে।'
তিনি আরও বলেন, 'মানুষকে সুখী করতে ছাই থেকে আপনি তাদের হাসিতে নিয়ে আসছেন। এ থেকে একজন উপকৃত হচ্ছে। তার থেকে আবার আরেকজন উপকৃত হচ্ছে। আপনি কুৎসিত অতীতকে ভালো অর্থনীতি ও সম্প্রদায়ে বদলে দিচ্ছেন।'
গ্রেস মুতেতেরি নামে এক নারী বলেন, 'ঝুড়ি বোনা থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে উইমেন সেন্টারের নারীরা সন্তানের স্কুলের বেতন ও মেডিক্যাল ইন্সুরেন্সের মতো প্রয়োজনীয় খরচ চালাতে পারছেন।
গণহত্যার প্রায় ২৫ বছর পর আফ্রিকার দ্রুত ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ হয়ে ওঠে রুয়ান্ডা। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সরকার পর্যন্ত রুয়ান্ডার নারীরা তাদের দেশের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
রুয়ান্ডার আইনসভার সদস্য ড. জেরার্ডিন মুকেশিমানা বলেন, 'রুয়ান্ডার নারী চাষীরা সবচেয়ে বেশি পরিশ্রমী।'
তার বিশ্বাস- নারীর ক্ষমতায়নে সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ এখানেই মানুষ চাষাবাদ, বিপণন, নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক দক্ষতাগুলো রপ্ত করছে। তারাও চান এই নারীরা নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করুক।
গডেন্স দক্ষতা অর্জনের মধ্য দিয়ে কেবল যে নিজেই এগিয়ে গেছেন তা নয়, তিনি সেসব দক্ষতা গ্রামের অন্য নারীদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি তাদের গয়না, হস্তশিল্প তৈরি এবং সেগুলো বিক্রি করার মতো কাজগুলো শেখাচ্ছেন।
গডেন্স বলেছিলেন, একসঙ্গে কাজ করা তাদের সুন্দর একটি ভবিষ্যতের আশা দেখায়।
রুয়ামওয়েঙ্গে বলেন, ''আমি বলব রুয়ান্ডার নারী খুব সাহসী। তারা এমন নারী, যারা বিভিন্ন চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছেন এবং ফিরে এসেছেন। তাদের একটি অতীত রয়েছে, যা খুবই বেদনাদায়ক। এরপরও ওই নারীরা বলছেন, 'আমরা যা কিছুর মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, সেটি আমাদের সেরা জায়গায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাধা হতে পারবে না।'''
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক