ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিলো অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইঙ্গিত করেছেন, শান্তি অর্জনের দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় তার দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিতে পারে। খবর বিবিসি'র।
তবে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রটির শাসনব্যবস্থায় হামাসের কোনো ধরনের ভূমিকার প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সমর্থন থাকবে না বলেও জানিয়েছেন পেনি ওং।
অস্ট্রেলিয়ার বিরোধী দল এবং জায়োনিস্ট ফেডারেশন অব অস্ট্রেলিয়া উভয়ই এমন পদক্ষেপ নিলে তা অপরিণত সিদ্ধান্ত হবে বলে অভিহিত করেছে।
দীর্ঘকাল ধরেই ক্যানবেরা বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে একটি দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের অংশ হিসেবেই ফিলিস্তিন স্বীকৃতি পেতে পারে।
এর আগে এ বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যের ফরেন সেক্রেটারি ডেভিড ক্যামেরন এক বক্তৃতায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ইসরায়েলের মত ছাড়াই যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে।
আর বুধবার স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজ নিশ্চিত করেছে, তার সরকার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তিনি এ পদক্ষেপকে 'ইউরোপের ভূরাজনৈতিক স্বার্থে' বলে উল্লেখ করেছেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে ক্রমাগত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলীয় সরকার। ইসরায়েলি বিমান হামলায় এ যুদ্ধে নিহত ছয় ত্রাণকর্মীর মধ্যে একজন অস্ট্রেলিয়ানও রয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে এক বক্তৃতায় পেনি ওং বলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দুই আলাদা রাষ্ট্রব্যবস্থাই 'সহিংসতার অনিঃশ্বেষ এ চক্রকে ভাঙার একমাত্র আশা'।
'কয়েক দশক ধরে সব পক্ষের এ প্রক্রিয়াটি নিয়ে ব্যর্থতা এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রশ্নে নেতানিয়াহুর সরকারের স্রেফ আলোচনায় অংশ নেওয়ার প্রস্তাবও প্রত্যাখান করা বিস্তৃত পরিসরে হতাশা তৈরি করেছে,' বলেন অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
'তাই দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানে প্রেরণা জোগানোর উপায় হিসেবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রশ্নটি বর্তমানে বিবেচনা করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়,' বলেন পেনি ওং।
দেশটির বিরোধী দলের পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র সাইমন বার্মিংহাম বলেন, তার দল এমন পদক্ষেপ সমর্থন করে না এবং প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সরকার 'অস্ট্রেলিয়ার কয়েক দশকের বাইপার্টিজান পররাষ্ট্রনীতিকে ভেঙে ফেলা'র আশঙ্কা তৈরি করছে।
জায়োনিস্ট ফেডারেশন অব অস্ট্রেলিয়ার প্রেসিডেন্ট জেরেমি লিইবলার বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার যেকোনো আলোচনাই 'সম্পূর্ণরূপে অপরিণত [প্রিম্যাচিউর]'।
'স্বীকৃতি বিষয়ক কোনো ধরনের আলোচনাকে বিশ্বাসযোগ্য হতে হলে হামাসকে আগে সরাতে হবে এবং ফিলিস্তিনের নেতৃত্বে নতুন একটি প্রজন্মকে উঠে আসতে হবে। যে প্রজন্ম দুর্নীতিবাজ হবে না, সহিংসতার মদত দেবে না এবং একটি ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে,' বলেন তিনি।
বিশ্বের ১৪০টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রভাবশালী অনেক দেশ এখনো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে।
জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে এটির সম্পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রস্তুত বলে এ সপ্তাহে জানিয়েছে। বর্তমানে জাতিসংঘের 'পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র' হিসেবে রয়েছে ফিলিস্তিন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ও ১,২০০-এর বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।