৬১ বিলিয়ন ডলারের নতুন প্যাকেজে ইউক্রেন কী কী অস্ত্র পাবে
ইউক্রেনের জন্য ৬১ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তার নতুন প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন সিনেট। আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিলটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে। তারপরই এটি আইনে পরিণত হবে। খবর বিবিসির
এ সহায়তা প্যাকেজের মাধ্যমে ইউক্রেন কী ধরনের অস্ত্র পেতে পারে এবং সেগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে কতটুকু অর্জন এনে দিতে পারে কিয়েভের জন্য — এক প্রতিবেদনে তা বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি।
ইউক্রেন বর্তমানে তিন ধরনের অস্ত্র জরুরিভিত্তিতে চাচ্ছে: আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, মধ্যম থেকে দীর্ঘ পাল্লার মিসাইল ও আর্টিলারি গোলা।
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
শহর এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় আকাশ থেকে রাশিয়ার হামলা প্রতিরোধ করা এখন ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, তার দেশ অন্তত ১,২০০ রাশিয়ান মিসাইল, দেড় হাজারের বেশি ড্রোন ও সাড়ে আট হাজার গাইডেড বোমার হামলার শিকার হয়েছে কেবল এ বছরেই।
আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য ইউক্রেনের কাছে পশ্চিমাদের সরবরাহকৃত বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র রয়েছে। কাঁধ থেকে নিক্ষেপযোগ্য স্বল্পপাল্লার স্ট্রিংগার মিসাইল থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক ও খুবই ব্যয়বহুল প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থা ব্যবহার করে ইউক্রেন।
জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের আরও অন্তত সাতটি বা তার বেশি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দরকার।
চলমান যুদ্ধে ভূমি থেকে আকাশে ক্ষেপণযোগ্য এস-৩০০ ও এস-৪০০সহ বিভিন্ন ধরনের ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে রয়েছে ইরানের তৈরি শত শত শাহেদ-১৩৬ ড্রোন।
এ ড্রোনগুলো রুশ বাহিনী একত্রে এতগুলো নিক্ষেপ করে যে, ইউক্রেনের পক্ষে সবগুলো প্রতিহত করা কঠিন হয়ে পড়ে। একসঙ্গে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন নিক্ষেপ করলে প্রতিপক্ষের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে উপযুক্ত পালটা ব্যবস্থা নেওয়া তুলনামূলক কঠিন হয়।
মধ্যম থেকে দীর্ঘপাল্লার মিসাইল
ইউক্রেনের জন্য ভূমিতে জয় পাওয়াও এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ। গত অক্টোবরের পর থেকে ইউক্রেন এর পূর্বাঞ্চলে অন্তত ৫৮৩ বর্গকিলোমিটার ভূমি হাতছাড়া করেছে। এর একটি বড় কারণ কিয়েভের আর্টিলারি সংকট।
হাই মবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (হিমার্স) এ যুদ্ধে ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা দিয়েছে। এ ব্যবস্থায় চলমান প্ল্যাটফর্ম থেকে গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পেরেছে দেশটি।
হিমার্স লঞ্চার প্ল্যাটফর্ম থেকে মিসাইল নিক্ষেপ করার পর রাশিয়ান বাহিনী সেটির অবস্থান শনাক্ত করার আগেই সরে যাওয়া যায়। ইউক্রেন আরও হিমার্স ব্যবস্থা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে আরও বেশি ট্যাংক ও পদাতিক সাঁজোয়া যান ব্র্যাডলি দিতে পারে।
পাশাপাশি মার্কিন সেনাবাহিনীর কৌশলগত মিসাইল ব্যবস্থাও [আর্মি ট্যাক্টিক্যাল মিসাইল সিস্টেমস — অ্যাটাকমস] ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বছরের শেষের দিকেই ইউক্রেন অ্যাটাকমসের পুরোনো সংস্করণ পেয়েছে। তবে নতুন সংস্করণগুলোর পাল্লা আগেরগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ – ৩০০ কিলোমিটার। এর ফলে রাশিয়ার অধিকৃত ক্রিমিয়া পর্যন্ত আঘাত হানতে পারবে কিয়েভ, যেখানে রাশিয়ার তার বড় একটি নৌঘাঁটি সুরক্ষাবলয়ের ভেতর রেখেছে।
আর্টিলারি গোলা
এ যুদ্ধের আটপৌরে অস্ত্র হলো আর্টিলারি ও হাউটজারের মতো অস্ত্র। এর মধ্যে এম৭৭৭ হাউটজারগুলোর জন্য ইউক্রেনের বিপুল সংখ্যায় ১৫৫ মিলিমিটারের আর্টিলারি গোলা দরকার।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধে শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের ২০ লাখ গোলা ইউক্রেনকে সরবরাহ করেছে। নতুন এ প্যাকেজের আওতায় আরও গোলা পাঠানো হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর জন্য এখন এটির 'শক্তিশালী লজিস্টিক নেটওয়ার্ক' রয়েছে এবং কিয়েভকে এটি কয়েক দিনের ব্যবধানে অস্ত্র সরবরাহ করতে সক্ষম।
ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনের কাছাকাছি যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বিভিন্ন রসদ পাঠিয়ে দিয়েছে। হস্তান্তর করা হলেই সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের সম্পত্তিতে পরিণত হবে।
কিন্তু পূর্ব রণাঙ্গনে রুশ বাহিনীর অব্যাহত হামলার কারণে এসব অস্ত্র ও রসদ, বিশেষ করে আর্টিলারি সরঞ্জাম ফ্রন্টলাইন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া ইউক্রেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য বেশ কয়েকদিন থেকে শুরু করে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
গত সপ্তাহে রাশিয়া জানিয়েছে, পশ্চিমা অস্ত্র মজুত রাখা হয়েছে এমন রসদাগার ও অস্ত্রভান্ডারে এটি হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দেবে।
আর আছে এফ-১৬
এ সহায়তা প্যাকেজের আগেই মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেয়েছে ইউক্রেন। আর শীঘ্রই এগুলোর সার্ভিসে আসার কথা রয়েছে।
ইউক্রেনের পাইলট ও ক্রুরা দীর্ঘদিন ধরেই এফ-১৬ পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বর্তমানে বিমানগুলো রোমানিয়ায় রয়েছে। যুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা রাখতে সক্ষম বিমানগুলোর আকাশে ও আকাশ থেকে ভূমিতে লড়াইয়ের শক্তিশালী সক্ষমতা রয়েছে।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ডজন 'ভাইপার' ইউক্রেনকে সরবরাহ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব যুদ্ধবিমান যুদ্ধের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে দেবে না বটে, কিন্তু এগুলো হবে কিয়েভের তূণে আরেক ব্রহ্মাস্ত্র।
মস্কোর সুর অবশ্য অন্যরকম। এটির দাবি, এফ-১৬ যুদ্ধক্ষেত্রে বড় কোনো পার্থক্য তৈরি করতে পারবে না এবং রুশ বাহিনীর হাতেই এগুলো ভূপাতিত হবে।