১২৭ বছর পুরোনো গোদরেজ গ্রুপ কেন ভাঙল? কে কী পাচ্ছেন?
৩০ এপ্রিল গোদরেজ পরিবার তাদের ১২৭ বছরের পুরোনো গোদরেজ গ্রুপকে দুটি আলাদা ব্যবসায়িক সত্তায় রূপান্তর করার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন এ দুটি প্রতিষ্ঠান হবে গোদরেজ এন্টারপ্রাইজ ও গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজ।
সাবান, অ্যাপ্লায়েন্স থেকে শুরু করে রিয়াল এস্টেট ইত্যাদি নানা ধরনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ভারতের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী গোদরেজ গ্রুপ।
নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে এখন গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজের দায়িত্বে থাকবেন আদি গোদরেজ (৮২) ও নাদির গোদরেজ (৭৩)। তাদের অধীনে থাকবে পাঁচটি কোম্পানি।
অন্যদিকে তাদের তুতো ভাই-বোন জামশিদ গোদরেজ (৭৫) ও স্মিতা গোদরেজ কৃষ্ণা (৭৪) গোদরেজ অ্যান্ড বয়েস ও এর সহ-কোম্পানিগুলো এবং কিছু জায়গাজমির মালিকানা পাবেন।
এক বিবৃতিতে গোদরেজ পরিবার গোদরেজের প্রতিষ্ঠানগুলোর 'মালিকানা নতুন করে সাজানো'কে এ 'ভাঙন'-এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
জামশিদ গোদরেজ ও নিরিকা হোলকারের নেতৃত্বে গোদরেজ অ্যান্ড বয়েস (জিঅ্যান্ডবি) এবং এর অ্যাফিলিয়েট অন্য কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ করবে গোদরেজ এন্টারপ্রাইজ (জিউজি)। অন্যদিকে গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, গোদরেজ কনজিউমার প্রোডাক্টস, গোদরেজ প্রোপার্টিজ, গোদরেজ অ্যাগ্রোভেট ও অ্যাসটেক লাইফসায়েন্সেসের মতো তালিকাভুক্ত কোম্পানির মালিকানা থাকবে গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপের (জিআইজি)।
স্বতন্ত্র বাজার বিশ্লেষক অম্বরীশ বালিগা বলেন, 'অন্য অনেক পারিবারিক ব্যবসার বিচ্ছিন্ন হওয়ার তুলনায় গোদরেজের সম্পদ বণ্টন বেশ মর্যাদার সঙ্গে করা হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের পারিবারিক আলাপ-আলোচনার কোনো বিষয়ই বাইরে প্রকাশিত হয়নি।
'কোম্পানির কোন সম্পদ কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে সে বিষয়টি যথেষ্ট স্বচ্ছতার সঙ্গে মোকাবিলা করা হয়েছে। এখন তারা তাদের ব্যবসায় পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারবেন।'
বিশ্লেষকেরা ব্যবসায়িক ভাঙনের পরও গোদরেজের শেয়ারের দামে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন।
আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যবসায় এ পরিবর্তনের কারণে এখন প্রতিটি গ্রুপ আলাদাভাবে আরও বেশি আর্থিক লাভ করেত পারবে। পাশাপাশি স্টেকহোল্ডার ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো আগের চেয়ে বেশি মূল্যমান উপভোগ করবেন। এ বিষয়টি বিশেষজ্ঞরা 'যেকোনো বিভক্তির স্বাভাবিক যৌক্তিক ভিত্তি' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আরদেশির গোদরেজ ও তার ভাই ১৮৯৭ সালে গোদরেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তার কোনো সন্তান না থাকায় কোম্পানির মালিকানা যায় পিরোজশাহ'র কাছে। পিরোজশাহ'র চার সন্তান সোহরাব, দোসা, নাভাল ও বুর্জোর। এভাবে এক পর্যায়ে গোদরেজের মালিকানা আসে বুর্জোরের সন্তান আদি ও নাদির এবং নাভালের সন্তান জামশিদ ও স্মিতার কাছে।
গোদরেজ প্রাথমিকভাবে স্থানীয় ব্যবসা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। পরে কেমিক্যাল, আসবাবপত্র, নিরাপত্তা সমাধান, রিয়াল এস্টেট, হোম ও পার্সোনাল কেয়ার, জেনারেল ইঞ্জিনিয়ারিং, পাওয়ার ও এনার্জি, এভিয়েশন, হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং. ইন্ট্রা-লজিস্টিকস, অবকাঠামো, খাদ্য ও কৃষিপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ইত্যাদি খাতে এটি ক্রমান্বয়ে ব্যবসার পরিধি বাড়ায়।
গোদরেজ গোষ্ঠী বর্তমানে মুম্বাইয়ের শীর্ষ ভূস্বামীদের একটি। এটির প্রায় তিন হাজার ৪০০ একর জমি রয়েছে সেখানে। ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডসের মাধ্যমে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বাজারে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি তৈরি করেছে এটি।
অনুবাদ: সুজন সেন গুপ্ত